স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে পারব, প্রাণ নিতেও মায়া হবে না



মরিয়ম সুলতানা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার

  • Font increase
  • Font Decrease

“স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে পারব, প্রাণ নিতেও মায়া হবে না। কিন্তু নিরীহ জীব হত্যা করতে সত্যি মায়া হয়, পারব না”—এই উক্তিটি ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মরণীয় নাম প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের।

আমরা জাতি হিসেবে আজ স্বাধীন। কিন্তু এই স্বাধীনতা একদিনে আসেনি। অনেক চড়াই-উৎড়াই পার করে আজ আমরা এখানে এসে পৌঁছেছি। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতনের পর থেকে দেশভাগের আগ অবধি দীর্ঘ ২০০ বছর আমরা ব্রিটিশদের শাসনাধীন ছিলাম। তখন ভারতবর্ষকে ব্রিটিশদের শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে নেমেছেন অসংখ্য তরুণ-যুবক। বহু স্বাধীনতাকামী ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য নির্ভীক চিত্তে অত্যন্ত আনন্দের সাথে আত্মাহুতি দিয়েছেন।

তেমনই এক স্বাধীনতাকামী অগ্নিকন্যার নাম প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, যিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।

আমাদের রাণী

আসকার খানের দিঘির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ থেকে নেমে গেছে সরু একটা গলি। সেই গলি ধরে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে গেলেই শহর ছাড়িয়ে গ্রামে প্রবেশ। এরই শেষ মাথায় মিউনিসিপ্যালিটির বড় নালার উত্তরে একটা মাটির দোতলা বাড়িতে মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানি জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদারের পরিবারের বসতি। বড্ড অভাবের সংসার তার।

এরই মধ্যে ১৯১১ সালের মে মাসের ৫ তারিখে জগদ্বন্ধুর স্ত্রী প্রতিভাদেবী দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেন। সেই সন্তান এমনিতেই মেয়ে, তার ওপরে আবার গায়ের রঙ কালো। সকলে যখন এই কন্যাশিশুর গায়ের রঙ নিয়ে কথা বলতে লাগল, তখন শুধু মা-ই পরম আদরে কাঁথায় জড়ানো ছোট্ট মানুষটিকে বুকে জড়িয়ে নেন। ভালোবেসে চুমু খান কপালে। হাসিমুখে স্বামীকে বলেন, “দেখো! আমার এই কালো মেয়ে একদিন তোমাদের সবার মুখ আলো করবে।” আদর করে মা তার কন্যার নাম রাখেন রাণী।

কিন্তু কে জানত ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্মীবাঈয়ের কাহিনী শুনতে শুনতে পরবর্তীতে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামের এই শিশুকন্যাই হয়ে উঠবে বাংলার রাণী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার?

প্রীতিলতার বেড়ে ওঠা

ছয় ভাইবোনের মধ্যে প্রীতিলতা ছিলেন ভীষণ অন্তর্মুখী, লাজুক এবং মুখচোরা স্বভাবের এক মেয়ে। যে ঘর ঝাঁট দেওয়া থেকে শুরু করে বাসন মাজার কাজে মাকে সাহায্য করতেন; ঠিক আর-দশটা বাঙালি কিশোরীর মতোই। তাঁর বেড়ে ওঠার মাঝে ছিল না কোনো আতিশয্য কিংবা আড়ম্বর। এদিকে প্রখর মেধার অধিকারী হওয়ায় অভাবের সংসারে শত প্রতিকূলতার মাঝেও বাবা জগদ্বন্ধু তার এই অন্তর্মুখী কন্যাকে ১৯১৮ সালে চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। প্রতি ক্লাসে ভালো ফলাফল করে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রীতিলতা সব শিক্ষকের খুব প্রিয় হয়ে ওঠেন, সেই শিক্ষকদের একজন ছিলেন ইতিহাসের ঊষাদি যিনি পরোক্ষভাবে হলেও সর্বপ্রথম প্রীতিলতার মধ্যে বিপ্লবী চেতনার বীজ বপন করে দেন। তিনি নিয়মিত প্রীতিলতাকে পুরুষের বেশে ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্মীবাঈয়ের ইংরেজ সৈন্যদের সাথে লড়াইয়ের ইতিহাস বলতেন এবং পরে লক্ষ্মীবাঈয়ের ওপর লেখা বই পড়তেও দিয়েছিলেন; যা প্রীতিলতার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে এবং তখন থেকেই তিনি নিজের অজান্তেই নিজেকে লক্ষ্মীবাঈয়ের মতো অকুতোভয় বিপ্লবী হিসেবে কল্পনা করা শুরু করেন।

১৯২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর টাইগার পাস মোড়ে সূর্য সেনের বিপ্লবী সংগঠনের সদস্যরা প্রকাশ্য দিবালোকে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাবদ নিয়ে যেতে থাকা ১৭,০০০ টাকা ছিনতাই করে। এ ঘটনায় পুরো চট্টগ্রাম শহর তখন উত্তাল, পুলিশের টহল, কড়া নজরদারি। ছিনতাইয়ের প্রায় দুই সপ্তাহ পর বিপ্লবীদের আস্তানায় হানা দিলে পুলিশের সাথে যুদ্ধের পর গ্রেফতার হন সূর্য সেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তী। তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় রেলওয়ে ডাকাতি মামলা। এই ঘটনা কিশোরী প্রীতিলতাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয় এবং মনে জন্ম নেয় অজস্র প্রশ্ন।

তবে সূর্যসেনরা ডাকাতির মামলা থেকে রাতারাতি খালাস পেয়ে যায়। বাধ সাধে ১৯২৪ সালের ‘বেঙ্গল অর্ডিনান্স’ নামের এক জরুরি আইন। এই আইনের আওতায় বিপ্লবীদের বিনাবিচারে আটক করা শুরু হয়। সরকার বিপ্লবীদের প্রকাশনাসমূহ বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে। একারণে তখন বিপ্লবী সংগঠনের সদস্যদের অস্ত্রশস্ত্র, সাইকেল ও বইপত্র গোপনে রাখার ব্যবস্থা করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। প্রীতিলতার খুড়তুতো দাদা পূর্ণেন্দু দস্তিদারও তখন সূর্যসেনের বিপ্লবী দলের কর্মী। তিনি সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত মোড়কে মোড়া কিছু গোপন বই প্রীতিলতার কাছে রেখে যান এবং বইগুলি লুকিয়ে রাখার জন্য বলে যান। প্রীতিলতা তখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী। দাদার আদেশ অনুযায়ী প্রীতিলতা বইগুলো লুকিয়ে রাখেন ঠিকই, কিন্তু ওগুলোতে কী আছে তা জানার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। অদম্য কৌতূহলের কারণেই একদিন মোড়ক খোলেন এবং লুকিয়ে গোগ্রাসে একে একে পড়ে ফেললেন ‘দেশের কথা’, ‘বাঘা যতীন’, ‘ক্ষুদিরাম’ আর ‘কানাইলাল’-এর মতো নিষিদ্ধ সব বই।

বইগুলো পড়ে ভীষণভাবে আলোড়িত হন প্রীতিলতা। মূলত এগুলোই তাকে বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে। তখন তিনি পূর্ণেন্দু দস্তিদারের কাছে বিপ্লবী সংগঠনে যোগদান করার ইচ্ছের কথা বলেন। কিন্তু তখনও পর্যন্ত বিপ্লবী দলে কোনো নারী সদস্য গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি নিকটাত্মীয় ছাড়া অন্য কোনো মেয়েদের সাথে মেলামেশা করাও বিপ্লবীদের জন্য নিষেধ ছিল। প্রীতিলতা দাদাকে বলেন, “এতকাল আগে থেকে মেয়েরা যদি দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়তে পারে, তাহলে আমি কেন পারব না? তোমরা সবাই তো আমাকে রাণী বলে ডাকো। নাটোর আর ঝাঁসীর রাণী যা পেরেছিল, চাটগাঁর রাণীও নিশ্চয়ই তা পারবে।”

কিন্তু পূর্ণেন্দু দস্তিদার তাঁর ইচ্ছেকে গুরুত্ব দেননি। বরং বলেছিলেন, মেয়েরা যুদ্ধ করতে পারবে না, মেয়েরা বড়জোর বইপত্র লুকিয়ে রাখার মতো কাজে আড়াল থেকে স্বাধীনতাকামীদেরকে সহযোগিতা করে যাবে। কিন্তু প্রীতিলতা কিছুতেই বুঝতে পারলেন না, কেন তার দ্বারা যুদ্ধ করা সম্ভব না?

প্রীতিলতার যুদ্ধপ্রস্তুতি

১৯২৮ সালে একাধিক বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়ে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং আইএ পড়ার জন্য ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হন। ১৯৩০ সালে আইএ পরীক্ষায় তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং সম্মিলিত মেধাতালিকায় পঞ্চম স্থান অধিকার করেন। এই ফলের জন্য তিনি মাসিক ২০ টাকার বৃত্তি পান এবং কলকাতার বেথুন কলেজে বিএ পড়ার সুযোগ পান। কিন্তু ১৯৩২ সালে বেথুন কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক পাস করলেও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় তার এবং তার সঙ্গী বীণা দাসগুপ্ত’র পরীক্ষার ফল স্থগিত রাখা হয়।

এরমধ্যে ঢাকায় যখন প্রীতিলতা পড়তে যান তখন ‘শ্রীসংঘ’ নামে একটি বিপ্লবী সংগঠন প্রকাশ্যে লাঠিখেলা, কুস্তি, ডনবৈঠক, মুষ্টিযুদ্ধশিক্ষা ইত্যাদির জন্য ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ক্লাব গড়ে তুলেছিল। মূলত তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। এখান থেকে বাছাই করে ভালো ছাত্র ও তরুণদেরকে তারা গোপনে বিপ্লবী দলের সদস্য করে নিত। ঢাকায় শ্রীসংঘের ‘দীপালী সংঘ’ নামে একটি মহিলা শাখাও ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগের নেতৃত্বে নারীশিক্ষা বিস্তারে উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা ছিল এই সংগঠনটির প্রকাশ্য কাজ। লীলা নাগের প্রচেষ্টায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি ইংরেজি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিতও হয়েছিল। কিন্তু, এগুলো ছিল বাইরের দিক। গোপনে তারা মেয়েদের বিপ্লবী সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ করত।

একদিন এই দীপালী সংঘের সদস্য, ইডেন কলেজের শিক্ষক নীলিমাদির চোখ পড়ে প্রীতিলতার দিকে এবং তার মাধ্যমেই লীলা নাগের সাথে প্রীতিলতার পরিচয় হয়। তারা তখন দীপালী সংঘের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন প্রীতিলতার সাথে। পরে প্রীতিলতাকে সংঘের সদস্য হবার জন্য একটি ফর্ম দেন। তাদের অনুপ্রেরণায় দীপালী সংঘে যোগ দিয়ে প্রীতিলতা লাঠিখেলা, ছোরাখেলা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি লিখেছিলেন, “আইএ পড়ার জন্য ঢাকায় দু’বছর থাকার সময় আমি নিজেকে মহান মাস্টারদার একজন উপযুক্ত কমরেড হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়েছি।”

গরমের ছুটিতে চট্টগ্রাম ফিরে আসেন প্রীতিলতা। বাড়ি ফিরেই পূর্ণেন্দুদাকে দীপালী সংঘের ফর্ম দেখান। আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে প্রীতিলতা বলেন, “দেখেছো! এখানে লেখা আছে, প্রয়োজন হইলে দেশের মুক্তি-সংগ্রামে আমার সর্বস্ব, জীবন পর্যন্ত আমি ত্যাগ করিতে প্রস্তুত আছি। এটি কিন্তু আমার খুব ভালো লেগেছে। অথচ তুমি আমাকে বলেছিলে আমরা মেয়েরা নাকি ওসব পারব না। এখন কী বলো তুমি?”
পূর্ণেন্দুদা তখন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি। গভীর মনোযোগ সহকারে ফর্মটি পড়ে পকেটে পুরে ফেলেন।

প্রীতিলতা ও মাস্টারদা

পূর্ণেন্দুদা মাস্টারদাকে প্রীতিলতার কাছে নিষিদ্ধ বই রাখা প্রসঙ্গে, বিপ্লবী দলে যোগ দেবার ব্যাপারে প্রীতির আগ্রহের কথা, সেই সাথে দীপালী সংঘে তাঁর যোগ দেবার আসন্ন সম্ভাবনার কথা খোলাখুলিভাবে জানান। সুদীর্ঘ আলোচনার পরে সূর্যসেন বলেন, “মেয়েদের সম্পূর্ণ বাদ দিয়েই এদেশে বিপ্লব হবে, একথা আমরা কোনোদিন ভাবিনি। তবে দেশে মুক্তির জন্য যে কঠিন শত্রুর সঙ্গে আমাদের লড়তে হবে, সেখানে আছে রক্তপাত, অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ, আরো অনেক কঠিন কাজ। আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থায় মেয়েরা এইসব কাজে তোমাদের মতো করে যোগ দিতে এখনই পারবে না। পরে অবশ্যই পারবে। এখন থেকে আমাদের দলের ছেলেদের আপন বোন, মা ও অন্যান্য নিকট আত্মীয়দের আমরা দলে নেব। কিন্তু তা করতে হবে সাবধানে ও ধীরে ধীরে।”
পূর্ণেন্দুদা জানতে চান, “তাহলে প্রীতিকে কী বলব? তাকে কি সদস্য হিসাবে গ্রহণ করবেন?”
মাস্টারদা বলেন, “আমার মনে হয়, বিপ্লবের সব কাজে মেয়েদের না নিতে পারলেও, অনেক বিশ্বস্ত ও গোপনীয় কাজের সাহায্যের জন্য তাদের আমরা নিতে পারি। প্রীতির কথা তোমার কাছে শুনে আমি স্থির করেছি যে, তাকে আমরা দলে নেব। তাকে আজ থেকে দলের সদস্য করা হলো। কিন্তু এই কথা তুমি, আমি ও সে, এই তিনজনের বাইরে কেউ যেন না জানতে পারে, এই আদেশ তোমার ওপর রইল, তাকে এ কথা বলে দিও।”

প্রীতিলতার কাছে এই সুখবর পৌঁছায় পরের দিন। পূজাঘরে গিয়ে অদেখা, অচেনা মাস্টারদাকে অন্তর থেকে প্রণাম করেন প্রীতিলতা।

প্রীতিলতার যুদ্ধযাত্রা

প্রীতিলতা যখন কলকাতার বেথুন কলেজে পড়ছেন, ঘনিষ্ঠ বান্ধবী কল্পনা দত্তসহ চট্টগ্রাম বিপ্লবী দলের আরো কয়েকজন ছাত্রীকে নিয়ে গড়ে তুললেন ‘প্রমীলা চক্র’। এই ‘প্রমীলা চক্র’ নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ করে বিপ্লবীদের পাঠাত। আচমকা একদিন বিপ্লবী দলের কাছ থেকে গোপন এক নির্দেশ আসে প্রমীলা চক্রের কাছে। কলকাতার গোপন কারখানায় তৈরি বোমার খোল নিয়ে আসতে হবে চট্টগ্রামে। যেমন আদেশ, তেমন কাজ। এরপর থেকে যখনই সুযোগ হতো, মেয়েরা বোমার খোল গোপনে চট্টগ্রামে নিয়ে আসত। ১৯২৯ সালের পূজার ছুটিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বোমার খোল নিয়ে এসেছিল তারা। প্রীতিলতা, কল্পনা দত্ত, সরোজিনী পাল, নলিনী পাল, কুমুদিনী রক্ষিত; প্রত্যেকে চারটি করে মোট বিশটি।

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রামে বিপ্লবীদের দীর্ঘ পরিকল্পিত আক্রমণে ধ্বংস হয় অস্ত্রাগার, পুলিশ লাইন, টেলিফোন অফিস এবং রেললাইন। এই আক্রমণগুলোতে প্রমীলা চক্রের আনা বোমাগুলোই ব্যবহৃত হয়েছিল। ইতিহাসে এটি ‘চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। চট্টগ্রামের মাটিতে বিপ্লবী দলের এই উত্থান সমগ্র বাংলার ছাত্র সমাজকে উদ্দীপ্ত করে।

১৯৩২ সালে বিএ পরীক্ষা দিয়ে কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে এসে দেখেন পিতার চাকরি নেই। সংসারের হাল ধরতে নন্দনকানন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা পদে যোগ দেন। বর্তমানে এটি অপর্ণাচরণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। শিক্ষকতার ফাঁকে ফাঁকে তিনি হয়ে যান পুরোধা একজন বিপ্লবী। ১৯৩২ সালের মে মাসের গোড়ার দিকের কোনো একদিন নির্মল সেন প্রীতিলতাকে “পরিবারের প্রতি কেমন টান আছে” জানতে চাইলেন। জবাবে তিনি বলেন, “টান আছে। কিন্তু ‘duty to family-কে duty to country’র কাছে বলি দিতে পারব।”

১৯৩২ সালের ১২ জুন তুমুল ঝড়-বৃষ্টির দিনে মাস্টারদার পাঠানো এক লোক প্রীতিলতাকে তাদের গোপন আশ্রমে নিয়ে আসেন। বাড়িতে প্রীতিলতা তার মাকে সীতাকুণ্ড যাবার কথা বলেন। মাস্টারদা এবং নির্মল সেন ছাড়া ওই বাড়িতে আরো ছিলেন ডিনামাইট ষড়যন্ত্র মামলার পলাতক আসামী তরুণ বিপ্লবী অপূর্ব সেন, যাঁর ডাকনাম ছিল ভোলা। কিন্তু সূর্য সেন এবং তাঁর সহযোগীদের সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে অবস্থানের কথা পটিয়া পুলিশ ক্যাম্প জানতে পেরে যায় এবং ১৩ জুন ক্যাপ্টেন ক্যামেরনের নেতৃত্বে রাত প্রায় ৯টার দিকে ধলঘাটের ওই বাড়িতে ব্রিটিশ বাহিনী হানা দেয়। কিন্তু সিঁড়ির মাথায় পৌঁছে বন্ধ দরজায় ধাক্কা দিতেই নির্মল সেনের করা গুলিতে ক্যাপ্টেন ক্যামেরন মৃত্যুবরণ করে এবং সন্মুখ-সমনে নির্মল সেনও মৃত্যুবরণ করেন। প্রীতিলতা ও অপূর্ব সেনকে সঙ্গে নিয়ে মাস্টারদা অন্ধকারে ঘরের বাইরে আসেন, কিন্তু গুলি লেগে অপূর্ব সেনও ঘটনাস্থলে মারা যান। তখন মাস্টারদা সূর্যসেন রাতের অন্ধকারে পুকুর ডোবা পেরিয়ে প্রীতিলতাকে সঙ্গে নিয়ে আরেক গোপন আস্তানায় পালিয়ে যান। পরের দিন মাস্টারদা প্রীতিলতাকে বাড়িতে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

প্রীতিলতার আত্মাহুতি

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাবে বিপ্লবীরা আক্রমণ করতে গিয়েছিল, কিন্তু পারেনি। কারণ, সেদিন ছিল গুড ফ্রাইডে। চট্টগ্রাম শহরের উত্তরদিকে পাহাড়তলী স্টেশনের কাছে এই ক্লাব ছিল ব্রিটিশদের প্রমোদকেন্দ্র। পাহাড়ে ঘেরা এই ক্লাবের চতুর্দিকে প্রহরীদের অবস্থান ছিল। একমাত্র শ্বেতাঙ্গরা, ক্লাবের কর্মচারী, বয়-বেয়ারা, দারোয়ান ছাড়া এদেশীয় কেউ ওই ক্লাবের ধারেকাছে যেতে পারত না। সেখানে লেখা ছিল, “কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ।” সন্ধ্যা হতেই ইংরেজরা এই ক্লাবে এসে মদ খেয়ে নাচ, গান এবং আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠত। আত্মগোপনকারী বিপ্লবীরা হাল ছাড়েননি, বরং নতুনভাবে ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের জন্য পরিকল্পনা শুরু করেন।

১৯৩২-এর ১০ আগস্ট ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দিন আবারও ধার্য করা হয়। শৈলেশ্বর চক্রবর্তীর নেতৃত্বে সাতজনের একটা দল সেদিন ক্লাব আক্রমণ করতে গিয়ে পুনরায় ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। শৈলেশ্বর চক্রবর্তীর প্রতীজ্ঞা ছিল, ক্লাব আক্রমণের কাজ শেষ হবার পর নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার যদি সুযোগ থেকেও থাকে, তবুও তিনি আত্মবিসর্জন দেবেন। প্রতিজ্ঞানুযায়ী তিনি পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। গভীর রাতে কাট্টলীর সমুদ্র সৈকতে তাঁর মৃতদেহ সমাহিত করা হয়।

ঐতিহাসিক ইউরোপিয়ান ক্লাব, চট্টগ্রাম


এরপর মাস্টারদা ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফের ক্লাবে হামলা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু এই আক্রমণের দায়িত্ব এবার তিনি নারী বিপ্লবীদের দেবেন বলে মনস্থির করলেন। কিন্তু সাতদিন আগেই পুলিশের হাতে পুরুষবেশী কল্পনা দত্ত ধরা পড়ে গেলেন। এবার আক্রমণের নেতৃত্বের ভার নিতে চাইল একমাত্র নারী বিপ্লবী প্রীতিলতা। সদস্য সংখ্যা হলো ১৫ জন। ২৩ সেপ্টেম্বরের সে আক্রমণে দিন প্রীতিলতার পরনে ছিল মালকোঁচা দেওয়া ধূতি আর পাঞ্জাবী, চুল ঢাকা দেওয়ার জন্যে মাথায় সাদা পাগড়ি, পায়ে রবার সোলের জুতা।

বিপ্লবীদের আশ্রয়দাতা যোগেশ মজুমদার ক্লাবের ভেতর থেকে রাত আনুমানিক ১০টা ৪৫-এর দিকে আক্রমণের নিশানা দেখানোর পরেই ক্লাব আক্রমণ শুরু হয়। সেদিন ছিল শনিবার, প্রায় চল্লিশজন মানুষ তখন ক্লাবঘরে অবস্থান করছিল। তিনভাগে বিভক্ত হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বিপ্লবীরা ক্লাব আক্রমণ শুরু করেন। পূর্বদিকের গেট দিয়ে ওয়েবলি রিভলবার এবং বোমা নিয়ে আক্রমণের দায়িত্বে ছিলেন প্রীতিলতা, শান্তি চক্রবর্তী আর কালীকিংকর দে। ওয়েবলি রিভলবার নিয়ে সুশীল দে আর মহেন্দ্র চৌধুরী ক্লাবের দক্ষিণের দরজা দিয়ে এবং ৯ ঘড়া পিস্তল নিয়ে বীরেশ্বর রায়, রাইফেল আর হাতবোমা নিয়ে পান্না সেন আর প্রফুল্ল দাস ক্লাবের উত্তরের জানালা দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছিলেন।

প্রীতিলতা হুইসেল বাজিয়ে আক্রমণ শুরুর নির্দেশ দেওয়ার পরেই ঘনঘন গুলি আর বোমার আঘাতে পুরো ক্লাব কেঁপে কেঁপে উঠেছিল। যেন পাহাড়তলীতে কেঁপে উঠেছিল খোদ ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। ক্লাবঘরের সব বাতি নিভে যাবার কারণে সবাই অন্ধকারে ছুটোছুটি করতে লাগল। ক্লাবে কয়েকজন ইংরেজ অফিসারের কাছে রিভলবার ছিল। তারা পাল্টা আক্রমণ করল। একজন মিলিটারি অফিসারের রিভলবারের গুলিতে প্রীতিলতা গুলিব্দিধ হন। কিন্তু সহযোদ্ধাদের সাথে আক্রমণ চালিয়ে যান। এরপর প্রীতিলতার নির্দেশে আক্রমণ শেষ হলে দলের সাথে তিনি কিছুদূর এগিয়ে আসেন। কিন্তু আক্রমণ শেষে পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রীতিলতা পটাসিয়াম সায়ানাইড মুখে পুরে দেন এবং যারা আহত হয়নি সেসব বিপ্লবীদের দ্রুত স্থানত্যাগ করার নির্দেশ দেন। পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া প্রীতিলতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিপ্লবীরা সবাই স্থান ত্যাগ করেন।

প্রীতিকে সায়ানাইড ক্যাপসুল দেবার জন্য সবসময়ই অনুশোচনা করেছেন সূর্যসেন। কল্পনাকে পরে তিনি বলেছিলেন, “প্রীতি মৃত্যুকে বেছে নিয়েছিল দেশবাসীর কাছে শুধু এটাই প্রমাণ করার জন্য যে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও দেশের জন্য যুদ্ধ করতে পারে এবং জীবন দিতে পারে। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, বেঁচে ফিরে আসলেই বরং সে আরো বেশি কিছু করতে পারত।”

প্রীতিলতার মৃত্যুর দিনটি ছিল ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৩২ সাল। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য প্রথম বাঙালি নারী হিসেবে মাত্র ২১ বছর ৪ মাস ১৯ দিন বয়সে নিজেকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন তিনি। আজকের এই দিনে বিনম্রচিত্তে শ্রদ্ধাভরে তাকে আমরা স্মরণ করছি।

   

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ম্যাক্স' নামের একটি বিড়ালকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট অব লিটারেচার’ বা ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। দেশটির ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের স্নাতক অনুষ্ঠানে বিড়ালটিকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়। তবে সেই অনুষ্ঠানে বিড়ালকে আমন্ত্রণ জানানোর নিয়ম না থাকায় উপস্থিত ছিল না ম্যাক্স। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুষ্ঠানে বিড়ালটি উপস্থিত ছিল না। তাই বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডোর কাছে খুব শিঘ্রই এই ডিগ্রি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।   

বন্ধুসুলভ এই বিড়ালটিকে তার ইঁদুর শিকারের দক্ষতা বা অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য নয় বরং তার সহচার্যের জন্যই স্বীকৃতি দিয়েছে।   বিড়ালটিকে এই ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাসেলটন ক্যাম্পাস।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!

বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাক্স দ্য ক্যাট, অনেক বছর ধরেই ক্যাসেলটন পরিবারের একজন আদুরে সদস্য। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় পাশেই বসবাস করে এক পরিবার। বিড়ালটি সেই পরিবারেরই পোষা।

বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডো বলেন, ‘বিড়ালটি ঠিক করেছে সে ক্যাম্পাসে যাবে। এরপর থেকেই সে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করে। আর শিক্ষার্থীরাও তাকে আদর করতে শুরু করে।’

বিড়ালটি প্রায় চার বছর ধরে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করছে। বিড়ালটিকে পথের ধারে শুয়ে থাকতে দেখলেই সবাই তার সঙ্গে সেলফি নেয়।

এমনকি সাবেক ছাত্ররাও যখনই ক্যাম্পাসে আসেন তারা তখনই বিড়ালটির খোঁজ নিতে তার মালিক ডো-এর কাছে যান। ডো তাদের কাছে বিড়ালটির মা হিসেবেই বেশি পরিচিত।

;

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;