বাংলালিংক কিনছে রিলায়েন্স জিও

  • ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম 
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বিক্রি হয়ে যাচ্ছে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক। উপর্যুপরি লোকসানের মুখে বাংলালিংকের মূল কোম্পানি ভিয়ন এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। বাংলালিংক কিনতে এরই মধ্যে ভারতীয় রিলায়েন্স জিও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। 

ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে রিলায়েন্স জিও বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে কোম্পানিটি এখাতে ইর্ষণীয় সাফল্য এনেছে। এরিকসন বলছে, জিও ভারতের ৪জি নেটওয়ার্কে নয়া দিগন্তের সূচনা করেছে। 

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কর্মকর্তা জানান, বাংলালিংক কিনতে ভারতের রিলায়েন্স জিও -এর দরকষাকষি চলছে। 

নাম না প্রকাশের শর্তে বিটিআরসি’র আরেক কর্মকর্তা জানান, অনেক দিন ধরেই ভারতীয় একটি কোম্পানি বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগে আসছে বলে শোনা যাচ্ছিল। এমনকি ফোরজি চালুর আগেও এমন কথা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। আবার ভারতীয় টেলিযোগাযোগ কোম্পানি এয়ারটেল বাংলাদেশ মার্কেটে টিকতে না পেরে রবি আজিয়াটার সঙ্গে একীভূত হয়েছে। সুতরাং টেলিযোগাযোগ খাতে কখন কি হয় তা সুনির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। সবকিছুই নির্ভর করে এই খাতের মার্কেট কী অবস্থায় রয়েছে।  

এক হিসাব থেকে দেখা গেছে, বাংলালিংক মুনাফা করতে পারছে না এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। সর্বশেষ তারা ২০১৫ সালে একটি প্রান্তিকে মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছিল। ভিয়নের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির আয় কমেছিল ৪ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা।

এদিকে বিশ্বব্যাপী ইমেজ হারাচ্ছে বাংলালিংক ও এর মূল কোম্পানি ভিয়ন। ডিজিটাল রূপান্তর প্রকল্প ভুল নীতিই প্রতিষ্ঠানটিকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ডিজিটাল রূপান্তর করতে গিয়ে কোম্পানিটি বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী চাকরিচ্যুত করেছে দুই হাজার কর্মী। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকেই চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ৮০০ কর্মী। নানা উদ্যোগ স্বত্ত্বেও বছরের পর বছর বাংলালিংক লাভের মুখও দেখছে না।  

অন্য অপারেটরদের সঙ্গে গ্রাহক প্রতি আয়ের দৌড়েও পিছিয়ে পড়েছে বাংলালিংক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে গ্রাহকপ্রতি গ্রামীণফোনের আয় ছিল ১৬৭ টাকা। একই সময়ে গ্রাহকপ্রতি রবির আয় ১২৩ আর বাংলালিংকের আয় ছিল ১১১ টাকা।

এদিকে ২০১৮ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) গ্রামীণফোনের গ্রাহকপ্রতি আয় ছিল ১৫৬ টাকা। ওই সময় রবির আয় কমে হয়েছে ১১৭ টাকা এবং বাংলালিংকের আয় হয়েছে ১০৯ টাকা। 

মূল কোম্পানি ভিয়নের উচ্চ পর্যায়ে ব্যাপক রদ-বদল ও ডিজিটাল রূপান্তর কার্যক্রম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়া এবং বাংলাদেশে লোকসানি বাংলালিংককে টেনে নেওয়া নেওয়া দু’টিই এখন তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভিয়ন চেয়েছিল বাংলালিংকের বিপুল সংখ্যক কর্মীকে ছাঁটাই করে তারা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। কিন্তু সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। তাছাড়া সর্বশেষ ফোরজি চালুর পর এই সেগমেন্টে গ্রাহক ধরতেও তারা ততটা সফল হয়নি, যতটা সফল হয়েছে রবি। 

গেল বছরে গ্রামীণফোন ডেটা থেকে দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা আয় করে আর রবি আয় করে এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা। অথচ ডেটার দিক থেকে বাংলালিংকের আয় এক কোটি টাকার ঘরে পৌঁছাতে পারেনি। 

ভিয়নের রিপোর্ট থেকে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে বাংলালিংকের আয় ছিল চার হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। অথচ এর এক বছর আগে আয় ছিল চার হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। তুলনা করলে দেখা যায়, আগের বছরের চেয়ে তাদের আয় কমেছে।

ধারাবাহিক লোকসানের মুখে অনেক দিন ধরেই বাংলালিংককে নিয়ে অনেক ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে আসছিল ভিয়ন। কিন্তু কোনো পরিকল্পনাই কাজে না লাগায় শেষ পর্যন্ত বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে তারা। 

এ বিষয়ে বাংলালিংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে নাম না প্রকাশের শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, এটি বিক্রি হচ্ছে কিনা তা আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। এটি একমাত্র মূল কোম্পানি ভিয়নের হাতেই। সুতরাং এটি নিয়ে যদি কোনো কথাবার্তা বা দরকষাকষি হয়ও, তা আমাদের জানার সুযোগ নেই।