মদিনার কোরআন জাদুঘরে বৃদ্ধার হাতে লেখা কোরআন প্রদর্শনী হবে
মসজিদে নববীর দক্ষিণ পাশের ৫ নম্বর গেট সংলগ্ন বিশ্বের প্রথম কোরআন জাদুঘরটি অবস্থিত। ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মদিনার গভর্নর এ জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন। আসলে এটাকে জাদুঘর না বলে, কোরআন প্রদশর্নী হল বলা চলে।
এখানে কোরআনে কারিমের ইতিহাস সম্পর্কে আলোকপাত করার পাশাপাশি কোরআন সম্পর্কিত আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে দর্শনার্থীদের পরিচয় করানো হয়। মানুষকে জানানো হয় কোরআনে কারিমের খেদমতে সৌদি আরবের অবদান।
জাদুঘরে রয়েছে ১৩টি সুসজ্জিত কক্ষ ও গ্যালারি। প্রতিটি গ্যালারিতে রয়েছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেক সুন্দর সংগ্রহ ও চমৎকার আয়োজন।
মদিনা কোরআন জাদুঘরে হজরত উসমান (রা.) কর্তৃক লিখিত পৃথিবীর সর্বপ্রথম কোরআনের পাণ্ডুলিপি মুসহাফে উসমানির ফটোকপি রয়েছে। এছাড়াও আছে খেলাফতে আব্বাসিয়া ও উসমানিয়ার শাসনামলে লিখিত ২৭টি প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। প্রতিটি পাণ্ডুলিপির পাশে লেখকের নাম, লেখার সন, তারিখ, লিখন পদ্ধতি ও লেখার উপকরণসহ সংক্ষিপ্ত পরচিতিমূলক র্বণনা রয়ছে। আছে হরিণের চামড়ায় লিখিত ৩টি পুরনো পাণ্ডুলিপি। আরও আছে, ঊনিশ শতকের প্রসিদ্ধ লিপিকর হাফেজ উসমান আততুরকির হস্তলিখিত কোরআন। তিনি জীবনে একশত ছয়টি কোরআন স্বহস্তে লিখেছেন।
মদিনা কোরআন জাদঘরটির অন্যতম আকর্ষণ ৬০পৃষ্ঠায় লিখিত কোরআনের অতি দুর্লভ একটি পাণ্ডুলিপি। পাশাপাশি রয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ হস্তলিখিত কোরআনের কপি। যার ওজন ১৫৪ কেজি (প্রায় চার মণ)।
দুর্লভ সংগ্রহের তালিকায় আরও রয়েছে বেশ কিছু বড় আকারের র্স্বণাক্ষরে লিখিত কোরআন, মিসরের প্রিন্সেস আমিনা হানম কারিমা কর্তৃক মসজিদে নববীতে প্রদত্ত হাতির দাঁত, রুপা ও মূল্যবান কারুর্কাযে তৈরি কোরআন দ্বারা সুসজ্জিত একটি আলমারি।
কোরআন ও কোরআনের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে এই জাদুঘরটি বিশেষভাবে উপকারী। এটা দেখে যেকোনো দর্শনার্থী বিশেষভাবে পুলকিত হবেন। কোরআন জাদুঘর প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
মদিনার এই কোরআন জাদুঘরে এবার জায়গা পেলো শারীরিকভাবে অক্ষম পাকিস্তানি এক বৃদ্ধার হাতে লেখা কোরআনের কপি।
স্বাভাবিকভাবে চলাফেরায় অক্ষম ওই নারী পবিত্র হজপালন শেষে মদিনায় অবস্থানকালে তার হাতে লেখা কোরআনের কপিটি জাদুঘরে হস্তান্তর করতে চান। তার আবেদন জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সাদরে গ্রহণ করে। হুইল চেয়ারে করে এসে তিনি নিজহাতে কোরআনটি জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে তার লিখিত কোরআনের কপিটি প্রদর্শনীর জন্য উপস্থাপন করা হয়।
পাকিস্তানের ওই নারী ঘর-সংসার সামলে দীর্ঘ ৩০ বছর সময় নিয়ে হাতে পুরো কোরআন লিখে শেষ করেন।
এ বিষয়ে জাদুঘর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হলো, আসলে প্রদর্শনীর জন্য নয়, আমরা ওই নারীর সাধনাকে গুরুত্ব দিয়ে তার ইচ্ছার মূল্যায়ন করেছি।