হাজিয়া সুফিয়া পরিপূর্ণ মসজিদের রূপ পেতে যাচ্ছে

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

তুরস্কের হাজিয়া সুফিয়া মসজিদ, ছবি: সংগৃহীত

তুরস্কের হাজিয়া সুফিয়া মসজিদ, ছবি: সংগৃহীত

তুরস্কের প্রাণকেন্দ্র ইস্তাম্বুলে অবস্থিত ঐতিহাসিক হাজিয়া সোফিয়া জাদুঘর মসজিদে রূপান্তরিত হতে চলেছে।

রোববার (২৪ মার্চ) এক সাক্ষাৎকারে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপে এরদোগান এমনটিই ঘোষণা দিয়েছেন। খবর রয়টার্স।

বিজ্ঞাপন

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে স্থাপিত এ হাজিয়া সোফিয়া স্থাপনাটি অর্থোডক্স গির্জার জন্য সর্বপ্রথম তৈরি করা হয়। ১২০৪ সাল পর্যন্ত এ স্থাপনাটি গির্জা হিসেবে উপাসনা চলে।

১২০৪ সালের পর এটি ক্যাথলিক গির্জায় রূপান্তরিত হয়। যা প্রায় ৫৭ বছর ক্যাথলিক গির্জা হিসেবে ব্যবহারের পর ১৯৬১ সালে তা আবার অর্থোডক্স গির্জায় রূপান্তরিত হয় যা ১৪৫৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৯২ বছর স্থায়ী হয়।

বিজ্ঞাপন

পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ১৪৫৩ সালে এ অঞ্চল উসমানীয় খলিফাদের দখলে আসেভ উসমানীয় শাসকরা এ স্থাপনাকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন, যা ৫০০ বছর স্থায়ী হয়। সে সময় এ স্থাপনাটিকে ‘ইম্পেরিয়াল মসজিদ’ নামে ঘোষণা দিয়ে প্রধান মসজিদের মর্যাদা দেওয়া হয়।

ষোড়শ শতাব্দীতে দ্বিতীয় সুলতান সেলিমের শাসনামলে হাজিয়া সোফিয়া মসজিদের বহিরাবরণকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ কাজের দায়িত্ব পান তৎকালীন উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিখ্যাত স্থাপত্যশিল্পী ‘মিমার সিনান’। ইতিহাসে সিনান ছিলেন প্রথম স্থাপত্যশিল্পী যিনি তার নির্মিত স্থাপনাগুলোকে ভূমিকম্প প্রতিরোধক্ষম করে তৈরি করেছিলেন।

পরবর্তীতে দ্বিতীয় সুলতান সেলিম ইন্তেকাল করলে ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে মসজিদের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে সুলতানের সমাধি স্থাপন করা হয়। ওই সময়ে মসজিদটিতে মরমর পাথরে তৈরি মিম্বার এবং মুয়াজ্জিনের জন্য একটি ছাদযুক্ত বারান্দা সংযোজন করা হয়।

১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন সুলতান প্রথম মাহমুদ মসজিদটি পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দেন। তখন মসজিদ সংলগ্ন একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা বর্তমানে লাইব্রেরিতে রূপ নিয়েছে। এই লাইব্রেরিতে রয়েছে তিন লাখেরও বেশি বই। ওই সময় দরিদ্র মানুষদের তৈরি করা খাবার পরিবেশনের জন্য একটি বড় রান্নাঘর স্থাপন করা হয়।

এই মসজিদে সবচেয়ে ব্যাপকভিত্তিক মেরামত ও পুনর্নির্মাণ কাজ হয় ১৮৪৮ ও ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে। তখন মসজিদের পিলারগুলোতে বিশাল বিশাল গোলাকৃতি ফলক ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এসব ফলকে শোভা পায় আল্লাহতায়ালার গুণবাচক। পাশাপাশি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, হজরত আবু বকর (রা.), হজরত উমর (রা.), হজরত উসমান (রা.), হজরত আলী (রা.), হজরত হাসান (রা.) ও হজরত হুসাইন (রা.)-এর নাম এসব ফলকে স্থাপন করা হয়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/25/1553518453239.jpg

হাজিয়া সোফিয়া মসজিদের আয়তন প্রায় ছয় হাজার বর্গমিটার। চারটি বিশাল স্তম্ভের ওপর মসজিদের মূল গম্বুজ স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদে রয়েছে মোট ১০৭টি স্তম্ভ ও নয়টি দরজা। মূল গম্বুজের নীচ দিয়ে মসজিদের ভেতরে সূর্যের আলো পৌঁছানোর জন্য স্থাপন করা হয়েছে ৪০টি জানালা। এসব জানালা দিয়ে মসজিদের সোনালী মোজাইকের ওপর যখন সূর্যের আলো এসে পৌঁছে, তখন চমৎকার এক আধ্যাত্মিক পরিবেশ ও দৃশ্যের অবতারণা হয় যা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।

এত সুদীর্ঘকালের ইতিহাস সমৃদ্ধ এই মসজিদটিকে ১৯৩৫ সালে তৎকালীন তুর্কি প্রেসিডেন্ট কামাল আতাতুর্ক জাদুঘরে রূপান্তর করেন। প্রেসিডেন্টের নির্দেশে আল্লাহ, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.), খোলাফায়ে রাশেদিন এবং ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (রা.)-এর নাম সম্বলিত ফলকগুলো নামিয়ে ফেলা হয়।

১৯৩৫ সালে মসজিদটিকে জাদুঘরে রূপ্তান্তর করার পর থেকে এখানে নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ ছিল। ২০০৬ সালে তুর্কি সরকার মুসলমানদের নামাজ আদায় এবং খ্রিস্টানদের উপাসনার জন্য জাদুঘরের একটি অংশ বরাদ্দ দেন। ২০১৩ সালে মসজিদের মিনার থেকে প্রতিদিন দুই ওয়াক্ত নামাজের আজান প্রচার শুরু হয়।

প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, পর্যটকরা হাজিয়া সোফিয়ার ব্লু মসজিদে আসা যাওয়া করতে পারবেন। এজন্য তাদের হাজিয়া সোফিয়া জাদুঘরের সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে মসজিদটি পরিদর্শন করতে হবে বলে জানান।

বর্তমান এরদোগান সরকারের আমলে সেটিকে ফের মসজিদের রূপে ফিরিয়ে আনতে চালিয়ে যাচ্ছে আলোচনা।