পৃথিবীর ফুসফুস!

  • ড. মাহফুজ পারভেজ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পৃথিবীর ফুসফুস/ প্রতীকী ছবি

পৃথিবীর ফুসফুস/ প্রতীকী ছবি

মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীদের মতো পৃথিবীর কি শ্বাস-প্রশ্বাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজটি চালানোর জন্য ফুসফুস আছে? এই প্রশ্ন নিয়ে বিজ্ঞানের নানা অঙ্গনে অনেক দিন ধরেই যুক্তি-তর্ক-বিতর্ক চলছে।

মানুষ বা প্রাণিজগৎ জীবন ধারণের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে অন্যতম ফুসফুসের সাহায্য নিয়ে থাকে। আমরা ফুসফুসের দ্বারা শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে অক্সিজেন গ্রহণ করি এবংকার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করি।

বিজ্ঞাপন

আমাদের এবং তাবৎ প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির বাসস্থান পৃথিবীর ক্ষেত্রে বিষয়টি কেমন? সজীব পৃথিবীর জন্যও তো বেঁচে থাকার প্রয়োজনে শ্বাসগ্রহণ ও ত্যাগের দরকার থাকার কথা। পৃথিবীরও তো ফুসফুসের কাজ চালানোর একটি ক্ষেত্র থাকতে হবে। সেটি তবে কী এবং কোথায়?

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/06/1554528088636.gif
সমগ্র উদ্ভিদ জগতই পৃথিবীর ফুসফুস/ ছবি: বার্তা২৪.কম

 

বিজ্ঞাপন

প্রশ্নটি নিয়ে ভাবতে ভাবতে বিজ্ঞানীরা এক সময় বনভূমি, জঙ্গল ও রেইন ফরেস্টগুলোকে (যেমন অ্যামাজন ফরেস্ট) পৃথিবী নামক গ্রহের 'ফুসফুস' বলে মনে করলেন। পরে দেখাগেলো, আসলে তা ঠিক নয়। বনভূমিই একক ও একমাত্রভাবে পৃথিবীর ফুসফুসের কাজ করছে না। আরও অনেকের অবদান রয়েছে পৃথিবীর শ্বসন প্রক্রিয়ায়।

আরেকদল বিজ্ঞানী প্রমাণ করলেন, পৃথিবীর অন্তত ৫০% অক্সিজেন সামুদ্রিক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন নামে পরিচিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন হয়। যদিও আমরা গাছ ও অন্যান্য ভূমিচরগাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহের জন্যে ঋণী, তবে বাকি অর্ধেক অক্সিজেন যে মহাসাগর-জলাভূমি থেকে আসে এ কথাও কিন্তু সত্যি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিক্যাল সায়েন্স অনুষদের সিনিয়র প্রফেসর ড. গাজী সৈয়দ মোহাম্মদ আসমতের সঙ্গে নানা বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়ের মতো এ নিয়েও অনেকবার কথাহয়েছে। প্রফেসর আসমত প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে একাধিক গ্রন্থের প্রণেতা হিসেবে বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও সাধারণ পাঠক মহলে সুপরিচিত।

এ বিষয়ে তিনি জানান, 'মহাসাগর, সমুদ্র ও মিঠাপানির পুকুরে বাস্তুতন্ত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন। এগুলো সালোক সংশ্লেষণকারী অণুজীব, যা পৃথিবীরবায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের প্রায় ৫০-৮৫ শতাংশ সরবরাহ করে চলেছে। আমরা সেসব এককোষী উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন অক্সিজেন দিয়েও শ্বাসক্রিয়া চালাচ্ছি।'

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/06/1554528047164.gif
অধ্যাপক ড. গাজী সৈয়দ মোহাম্মদ আসমত, বায়োলজিক্যাল সায়েন্স অনুষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

তার মানে হলো পৃথিবীর ভূমিতলে দৃশ্যমান বৃক্ষ ও উদ্ভিদের মতো চোখের আড়ালে সামুদ্রিক তলদেশ কিংবা মিঠাপানির পুকুরের গহীনে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অঢেলঅক্সিজেন নিত্য সরবরাহ করছে। ফলে মানুষ বা প্রাণির মতো একক কোনও অঙ্গ বা ক্ষেত্রকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা যাবে না। পৃথিবীর ফুসফুস হয়ে অক্সিজেন সরবরাহের কাজটিকরছে সমগ্র উদ্ভিদ জগতের অনেকেই, যাদের কিছু কিছু বনে-জঙ্গলে দৃশ্যমান এবং অনেককেই আমরা খোলা চোখে দেখতেও পাই না।

পৃথিবীর ফুসফুস হয়ে অক্সিজেনবাহী উদ্ভিদসমূহ বাঁচিয়ে রাখছে এই সবুজ পৃথিবী। পৃথিবীকে বাসযোগ্য করছে আমাদের জন্য। পৃথিবীর প্রকৃতি, পরিবেশ, নিসর্গ, প্রাণি, উদ্ভিদ, কীট, পতঙ্গ, লতা, গুল্ম প্রভৃতি একক বা যৌথভাবে নীরবে কাজ করছে পৃথিবী ও পৃথিবীর সকল অধিবাসীর অক্সিজেন সরবরাহের নেপথ্যে।

ইকো-সিস্টেমের প্রতিটি সদস্যের কাজ পৃথিবী ও মানুষের জীবনে কিছু কিছু অবদান রাখছে, যা পৃথিবী ও মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জরুরি। ফলে প্রকৃতি, পরিবেশ, বায়ো-ডাইভার্সিটি, ইকো-সিস্টেমে আঘাত করা হলে পৃথিবী ও মানুষের জীবন-যাপনের মূলে আঘাত হানা হয়। এই সত্যটি উপলব্ধি করে চলতে পারলেই পৃথিবী সবুজ, সুন্দর এবং মানুষেরজন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য থাকবে।

ড. মাহফুজ পারভেজ: কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম।