হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য মাটির তৈরি সামগ্রী

  • গনেশ দাস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা ২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন খেলনা, ছবি: বার্তা২৪

মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন খেলনা, ছবি: বার্তা২৪

আর মাত্র কয়েকদিন পর পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাঙালি জাতি। বৈশাখী মেলা বসবে শহর ছাড়াও বিভিন্ন গ্রামে। একসময় এসব মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল মাটির তৈরির বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী এবং তৈজস পত্র। আর এসব মাটির জিনিস তৈরিতে পুরো চৈত্রমাস জুরে পালপাড়ার লোকজন ব্যস্ত সময় পার করতেন।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া পালপাড়া ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। তারা মাটি দিয়ে দইয়ের সরা আর গ্লাস তৈরির কাজ করছেন।

বিজ্ঞাপন

শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া পালপাড়ায় ১১০টি পরিবারের বসবাস। প্রত্যেক পরিবারেই কেউ না কেউ ধরে রেখেছেন তাদের বাপ দাদার আদি ব্যবসা।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) পালপাড়া ঘুরে দেখা যায়, মৃৎ শিল্পের কাজ চলছে ঘরে ঘরে। কিন্তু পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কাজ নেই বললেই চলে। পুরো পালপাড়া ঘুরে মাত্র একটি বাড়িতে দেখা পাওয়া যায় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন শো-পিস তৈরি করতে।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/06/1554535802521.gif

উদয়ন ভিলা নামের ওই বাড়িতে নারী পুরুষ সমান তালে কাজ করছেন বিভিন্ন ধরনের শো-পিস তৈরিতে। তবে পহেলা বৈশাখ এগিয়ে আসায় এখন চলছে রকমারি ডিজাইনে রংয়ের কাজ।

এই বাড়ির কর্তা উদয়ন পাল বার্তা ২৪.কমকে জানান, তার বাবা মৃত ভুপেন পাল একসময় ফেরি করে বিভিন্ন মেলায় খেলনা থেকে শুরু করে সংসারের বিভিন্ন তৈজস পত্র বিক্রি করতেন। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মাটির তৈরি জিনিসের স্থান দখল করেছে প্লাস্টিক। দাম কম হওয়ার কারণে মানুষ এখন প্লাস্টিকের জিনিস বেশি ব্যবহার করেন। একারণে পাল পাড়ার অনেকেই আর মাটি দিয়ে খেলনা তৈরি করেন না।

বাবার হাত ধরে শেখা খেলনা এবং শো-পিস তৈরির কাজটি ধরে রেখেছেন উদয়ন পাল।

তিনি আরও বলেন, ‘প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রামীণ ঐতিহ্য বৈশাখী মেলা আগের মত আর হয় না। একারণে মাটির তৈরি খেলনার কদর নাই এখন।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/06/1554535764291.gif

তারপরেও পুরো পাল পাড়া জুড়ে তিনি একাই ১৫-২০ আইটেমের খেলনা এবং শো-পিস তৈরি করছেন। পহেলা বৈশাখের মেলা ছাড়াও মহাস্থান, ভিন্ন জগত, স্বপ্নপুরি, রাজশাহী, কুয়াকাটা এলাকায় পিকনিক স্পটগুলোতে মাটির তৈরি খেলনা এবং শো-পিস সরবরাহ করে থাকেন।

নব কুমার পাল নামের একজন মৃৎ শিল্পী বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ‘একসময় প্রতি বছর চৈত্র মাস জুরে তারা ব্যস্ত সময় পার করতেন। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মিষ্টির পাতিল, বাচ্চাদের বিভিন্ন খেলনা ছাড়াও হরেক রকম তৈজস পত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতেন পালরা। কিন্তু এখন আর কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে মাটির পাতিলে মিষ্টি নিয়ে যায় না। বৈশাখী মেলা থেকে মাটির পাতিলে মিষ্টি নিয়ে যাওয়া ছিল বাঙালিদের ঐতিহ্য। কিন্তু এখন আর মাটির পাতিল চলেনা। মাটির খেলনার ও প্রচলন দিন দিন কমে যাচ্ছে। একারণে পহেলা বৈশাখের কাজের চাপ নেই আগের মতন।

রঞ্জন পাল নামের আরেকজন বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ‘পালদের আদি পেশায় টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মাটির কোন জিনিসই এখন আর আগের মত চলেনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা টিকে আছি দই এর সরা এবং গ্লাস তৈরির কাজ নিয়ে। দই এর সরা তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে গেলে পালদের আদি পেশায় টিকে থাকতে পারবেনা কেউ।’