হ্যালো খান সাহেব..
একটা জীবন কেবল অভিনয় করেই কাটিয়ে দিচ্ছেন তারিক আনাম খান। কীভাবে এলেন তিনি এতদূর, এতগুলো বছর ধরে; শোনালেন মোবাইল ফোনের ওপাশ থেকে।
বাউন্ডুলে একেবারেই নন তারিক আনাম খান। নিয়ম মেনে চলতে পছন্দ করেন, খুব। বয়সটা বেড়েই চলছে সময়ের পাখায় ভর করে। ষাট-সত্তরের মাঝামাঝি বয়স। এই বয়সে অসাবধানী হলে তো চলে না!
মধ্যবিত্ত সংস্কৃতিমনা পরিবারে বেড়ে উঠেছেন।
দেখুন, জন্মদিনে কালিকাপ্রসাদ
অভিনয়টাকে পেশা হিসেবে নেবেন ভবিষ্যতে, এই ভাবনাটা ছোটবেলায় ছিল না। নাটকটা ছিল একান্তই ভাল লাগার জায়গা। আর সবার মতো তিনিও ভাবতেন, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-পাইলট কিছু একটা হবেন।
এই লক্ষ্যেই সাইন্স পড়তেন। তবে, তখন থেকেই ঝোঁক ছিল সাহিত্যের প্রতি। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, নজরুলসহ সমসাময়িক ঔপন্যাসিক যারা, সবাই ছিল তার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।
রেডিওতে নাটক শুনতেন। তখন পাকিস্তান আমল। ভারতীয় সিনেমা আসত এদেশে। ওগুলো দেখে মজা পেতেন খুব। তারপর একাত্তর আসলো। মুক্তিযুদ্ধ করলেন।
আস্তে আস্তে অবস্থার পরিবর্তন হলো। জীবন অন্যরকম হলো, বাস্তবতা মুখোমুখি দাঁড়াল। ভাবনারও পরিবর্তন হলো। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার প্রতি ঝোঁক কমে গেল। ভাবলেন, ‘নরমাল গ্রাজুয়েশন নেব, চাকরি-বাকরি করব।’
নাটকটা তখনও মাথার মধ্যেই ছিল।
ঢাকাতে এসে, সেই ’৭৩-৭৪ এ, কাজ করা শুরু করলেন তারিক আনাম খান। দল বেঁধে। তখন ইচ্ছে ছিল কোথাও থেকে চলচ্চিত্র শেখার, পড়ার। সেই ইচ্ছেটা টেকেনি থিয়েটারের ঝোঁকে।
সময় তো চলেই যায়, যাচ্ছিলও তাই। ফাঁকে ফাঁকে কাজ করার প্রস্তাব পাচ্ছিলেন তিনি, অনেক ছবিতে। লুফে নিলেন কয়েকটা। অভিনয়ের দিক থেকে প্রথম ছবি ‘লাল সবুজের পালা’, হাসান ইমামের। মুক্তির দিক থেকে অবশ্য ‘ঘুড্ডি’ প্রথম।
প্রফেশনাল থিয়েটার করে যাবার ব্যাপারটা তো ছিলই, পাশাপাশি একটু ভিন্ন ট্রাকের ছবি করার ভাবনাটাও মাথায় ছিল তখন। পরে দেখলেন, বাণিজ্যিক সিনেমার সঙ্গে ঠিক বনিবনা হচ্ছে না। বিষয়টা এমন নয় যে, তিনি বাণিজ্যিক ছবি ঘৃণা করেন বা অপছন্দ করেন। শুধু মনে হতো, এটা তার জিনিস নয় বা তার জায়গা এ রকম না।
জীবনটা ঘুরে গেল আরেক দফা।
দেখুন, মুকুটহীন সম্রাটের চলে যাওয়ার পঞ্চম বছর
বিজ্ঞাপন করা শুরু করলেন, এজেন্সি করলেন, নাটক করবেন বলে। পরবর্তীতে তাঁর অভিনীত ‘জয়যাত্রা’ মুক্তি পেল, তখন ২০০৪।
মাঝখানে অবশ্য বেশ কয়েকটা বাণিজ্যিক ছবিতেও গিয়েছিলেন তারিক আনাম খান। সোহানুর রহমান সোহানের ‘আমার ঘর আমার বেহেস্ত’, বুলবুল আহমেদের ‘কত যে আপন’, এরকম আরও বেশ কয়েকটা ছবি মুক্তিও পেয়েছিল। কিন্তু মন টানছিল না ঠিকঠাক।
ছাব্বিশ বছর ধরে টিকে আছে তার নাট্যদল।
রহস্য একটাই, তিনি ব্যক্তিগত চাওয়াটাকে খুব সীমিত করতে পেরেছেন। আমিই করব এটা, আমাকেই করতে হবে- এমন গোঁ না ধরে, যারা কাজ করছে, তাদের সঙ্গে মিলিয়ে কাজটা তৈরি করেছেন।
দলটাকে ‘আমিকেন্দ্রিক’ করতে চাননি কখনও। সেজন্যই হয়ত সবাই তার কথা শুনেছে, মেনেছেও। কাজগুলোও হয়েছে নির্বিঘ্নে।
‘দেশা- দ্য লিডার’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেলেন তারিক আনাম খান, শ্রেষ্ঠ অভিনেতার (খল চরিত্রে)। যে চরিত্রে অভিনয়ের কারণে এমন স্বীকৃতি, সেই অভিনয়টা নিয়েও তিনি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন।
অভিনয় বা শিল্পের যে জায়গাটা, সেখানে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হওয়া যায় না; এমনটাই জানালেন তিনি। তবে, কাজটা করতে গিয়ে যথেষ্ট স্বাধীনতা পেয়েছিলেন। কোন তাড়া ছিল না। নিখুঁত একটা কিছু বেরিয়েছে তাই।
পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুই তারিক আনাম খানকে সঠিক করেছে, করছেও।
দেখুন, জ্যোতিকা জ্যোতির ধর্মবিশ্বাস
চ্যালেঞ্জের মুখেও ঠেলে দিয়েছে অনেক কিছুই। আত্ম-অনুপ্রেরণাটা সব সময়ই ছিল ভেতরে। সেজন্যই তিনি এতটা সফল। স্ত্রী নিমা রহমান। নাটকের মানুষ। নাটক ভালবাসেন।
ছেলেটাও একই ধাঁচের। সব মিলিয়ে উৎসাহের জায়গাটা পেয়ে যান তিনি। এই উৎসাহ-অনুপ্রেরণাই তাকে নিয়ে এসেছে এতদূর, এতগুলো বছর ধরে..
আরও পড়ুনঃ