দ্বীপে বসে বই লিখে পুরষ্কার জিতলেন শরনার্থী
অস্ট্রেলিয়ার প্যাসিফিকের একটি দ্বীপে বছরের পর বছর ধরে আটকে থাকা শরনার্থী ও সাংবাদিক অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে দামী সাহিত্য পুরষ্কার জিতে নিয়েছেন।
এমন এক অভাবনীয় ও চমকে দেওয়ার মতো ঘটনাটি ঘটিয়েছেন ইরানিয়ান কুর্দি বেহরুজ বুখানি (Behrouz Boochani). ‘নো ফ্রেন্ড বাট দ্য মাউন্টেইন্স: রাইটিং ফ্রম মানুস প্রিজন’ বইটি তিনি নিজের বন্দীশালায় বসে হোয়াটসঅ্যাপের ম্যাসেজের মাধ্যমে লিখে শেষ করেছেন। কাগজ-কলমে একটি অক্ষর না লিখেই, সম্পূর্ণ বইটি তিনি লিখেছেন শুধুমাত্র মোবাইলে টাইপ করে ম্যাসেজিং এর মাধ্যমে।
অসাধারণ এই বইটিই সাহিত্যের জন্য জিতে নিয়েছে ২০১৯ ভিক্টোরিয়ান প্রাইজ। যার মূল্য ১০০,০০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মূদ্রায় প্রায় ৮৩ লাখ, ৯৫ হাজার ৪ শত টাকা। এই পুরষ্কারের পাশপাশি বুখানির নো ফ্রেন্ড বাট দ্য মাউন্টেন্স, নন-ফিকশন বিভাগ থেকে ২৫,০০০ মার্কিন ডলার সহ ভিক্টোরিয়ান প্রিমিয়ারস লিটারেরি অ্যাওয়ার্ডও জিতেছেন।
অস্ট্রেলিয়াতে প্রবেশ করার উপরে নিষেধাজ্ঞা থাকার ফলে বর্তমানে বুখানি পাপুয়া নিউগিনির মানুস দ্বীপে আছেন। অস্ট্রেলিয়ায় নদীপথে আসা শরণার্থীদের অবস্থান দেওয়ার বিষয়ে কড়াকড়ি থাকার কারণেই এমন ব্যবস্থা। দেশটির ভাষ্যমতে, যেকোন ধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতেই এমন জোরদার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
অন্যান্য পুরষ্কারপ্রাপ্তরা যখন মেলবোর্নে বিজয় উদযাপন করছিলেন, তখন বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বুখানি জানান, তিনি খুবই দ্বিধায় ভুগছেন।
বলেন, ‘এমন সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় থেকেও আমরা এখন অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছি, এই বিষয়ে আমি খুবই খুশি। এখন মানুষজন আমাদের অবস্থা সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারছে, যা খুবই দারুণ। কিন্তু অন্যদিকে আমার মনে হয় না আনন্দ উদযাপন করার কোন অধিকার আছে। কারণ আমার অনেক বন্ধুরাই এই স্থানে আটকে আছে ও কষ্ট পাচ্ছে। সবার আগে আমাদের এই দ্বীপ থেকে মুক্তি এবং একটি স্বাধীন জীবন শুরু করা প্রয়োজন’।
বর্তমানে বন্ধ হয়ে যাওয়া আশ্রয়কেন্দ্রে বন্দী থাকা অবস্থায় ফরাসি ভাষায় বুখানি হোয়াটঅ্যাপের ম্যাসেজের মাধ্যমে ট্রান্সলেটর অমিদ তফগান এর কাছে ছোট ছোট প্যারা আকারে বইয়ের লেখা পাঠাতেন।
বুখানি বলেন, ‘হোয়াটঅ্যাপ আমার অফিসের মতো। আমি কাগজে লিখিনি কারণ তখন প্রতি সপ্তাহে অথবা প্রতি মাসে গার্ডরা আমাদের ঘরে হামলা চালাতো এবং আমাদের ঘরের সব জিনিস খোঁজ করতো। আমি ভয়ে ছিলাম, যদি আমার লেখা হারিয়ে যায়। তাই লিখে তৎক্ষণাৎ সেটা পাঠিয়ে দেওয়াই সঠিক উপায় ছিল’।
মার্কিন যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান সংবাদপত্রে বুখানি নিয়মিত লেখালিখি করেন এবং টুইটারের মাধ্যমে মানুসের তথ্যাদিতথ্যও শেয়ার করেন। এমনকি তিনি নিজে শুটিং ও সহ-পরিচালনা করে ‘চাউকা- প্লিজ টেল আস দ্য টাইম’ নামে একটি ডকুমেন্টারিও তৈরি করেছেন। বলাই বাহুল্য, এই ডকুমেন্টারিটি তৈরি করেছেন শুধুমাত্র তার মোবাইলের সাহায্যে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে নৌকাযোগে অস্ট্রেলিয়াতে পৌঁছানোর পর, তৎকালীন সময়ে দেশটির সবচেয়ে বিতর্কিত বন্দীশালায় তাকে পাঠানো হয়েছিল। যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।