মরণাপন্ন প্রাণীদের সুপারহিরো বাস্তবের ব্যাটম্যান!
বলা হয়ে থাকে, সত্যিকার ও বাস্তব জীবনের সুপার হিরোদের কোন নির্দিষ্ট পোশাক বা কস্টিউম থাকে না।
কিন্তু মাঝে মাঝে তাদেরও কস্টিউম থাকে। থাকে মাস্ক, গ্লভস ও কেইপ। তারাও গল্পগাঁথা ও সিনেমার সুপারহিরোদের মতো বাস্তব জীবনে সুপার হিরো হিসেবে আবির্ভূত হয় অন্যের জীবনের গল্পে। আজকের গল্পের সুপারহিরো অসুস্থ প্রাণীদের কাছে তাদের জীবন রক্ষাকারী ব্যাটম্যান!
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা শহরে বসবাসকারী একজন পশুপ্রেমী বিভিন্ন শেলটার হাউজগুলো ঘুরে ইউথ্যান্যাশিয়া (Euthanasia) তালিকাভুক্ত অসুস্থ, বিপন্ন, ক্ষতিগ্রস্থ অথবা সুস্থ প্রাণীদের সংগ্রহ করে এবং তাদের দত্তক দেওয়ার জন্য সঠিক পরিবার খুঁজে বের করেন। দীর্ঘদিন শেলটার হাউজে থাকার পরেও কোন পরিবার দত্তক নেওয়ার জন্য বা পালার জন্য এই প্রাণীগুলোকে না নিলে ব্যথাহীনভাবে তাদের মেরে ফেলার জন্য এই এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বাস্তব এই গল্পের সুপারহিরো হলেন, ২৭ বছর বয়সী ক্রিস ভ্যান ডর্ন। সুপারহিরো ব্যাটম্যানের ভক্ত ক্রিস সবসময় চেয়েছেন প্রাণীদের সাহায্যে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করতে। সে ইচ্ছা থেকেই অরল্যান্ডো, ফ্লোরিডার বিভিন্ন স্থানে কুকুর ও বিড়ালদের সাহায্যে কাজ শুরু করেন তিনি।
এই কাজটির উপর গুরুত্ব আরোপ করতেই বেছে নেন ব্যাটম্যানের কস্টিউম। ব্যাটম্যানের অনুকরণে পোশাক পরে বিভিন্ন শেলটার হাউজগুলো ঘোরা শুরু করেন তিনি।
তবে তিনি জানান, প্রথম দিকে ব্যাটম্যানের কস্টিউম পরে কাজে নেমেছিলেন তার মহৎ কাজ ও উদ্দেশ্য গোপন রাখার জন্য। কিন্তু তার পরিচিতি সবার সামনে উন্মুক্ত হয়ে যায় চলতি বছরের মে মাসে যখন ‘গোফান্ডমি’ নামক প্রতিষ্ঠান তাকে ‘হিরো অফ দ্য মান্থ’ ঘোষণা করে।
ক্রিসের এই কাজটা কিন্তু একেবারেই হেলাফেলায় বা হুট করে ঝোঁকের বশে করা নয়। ২০১৮ সালে ক্রিস প্রতিষ্ঠা করেন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ব্যাটম্যানফরপওস’ (Batman4Paws). সেই শুরু থেকেই ক্রিস স্বপ্রনোদিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পশুদের উদ্ধার করে তাদের বাসস্থান ঠিক করার কাজটি করে চলেছে।
স্থানীয় একটি ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রিস বলেন, ‘প্রথমে যখন আমি কাজটা শুরু করেছিলাম, আমার পরিচয় গোপন করে রেখেছিলাম। যেখানেই যেতাম নামের জায়গায় লিখতাম- ব্রুস ওয়েইন, কিন্তু নিজের আসল নাম কখনোই দিতাম না। আমি যেটা বিশ্বাস করি, পোশাকের নিচে যে মানুষটা আছে সে নয়, আমার কাজের দ্বারাই উঠে আসবে আমার পরিচিত।’
আরও মজার ও দারুণ বিষয়টি হল, বাস্তব জীবনের এই ব্যাটম্যানের সাথে তার সহকারীও আছে তার কাজে সাহায্য করার জন্য। সহকারী হলো মি. বুটস, একটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত থেরাপি কুকুর। তারা দু’জনে একসাথে কাজে বের হন ব্যাটম্যান ও রবিনের মতো পোশাক পরেই।
তাদের এই সাজসজ্জা তুলনামূলক বেশি দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে বলে মনে করেন ক্রিস। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে খুব ভালোমতোই উদ্ধারকৃত কুকুর ও বিড়ালদের দত্তক দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন তিনি।
‘এই কস্টিউমটা সবাইকে আনন্দিত করে ও সবার মুখেই হাসি ফোটায়। এটা কিন্তু বেশ স্পেশাল, একজন ব্যাটম্যানকে চোখের সামনে হেঁটেচলে বেড়াতে দেখা এবং সবাইকে যখন জানতে পারে সে ভালো কোন কাজ করছে, তখন সবাই সেই বিষয়টা নিয়ে খুব উচ্ছ্বাসিত হয়।’
আরও পড়ুন: ভাঙা চেয়ার ব্যবহারে ক্লাসরুম সাজালেন শিক্ষক!
আরও পড়ুন: ১২ বছর বয়সীর নিজ উপার্জনে বিএমডব্লিউ!