হাঁটুর ব্যথা নিরাময়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ



মেহেরুন নেসা, ফিজিওথেরাপিস্ট
হাঁটু মানুষের ভার বহন করে

হাঁটু মানুষের ভার বহন করে

  • Font increase
  • Font Decrease

হাঁটু মানুষের শরীরের সমস্ত ওজন বহন করে এবং আমাদের দাঁড়াতে, হাঁটতে, দৌড়াতে সাহায্য করে। হাঁটু মূলত একটি জটিল অস্থিসন্ধি, যা ফিমার, প্যাটেলা এবং টিবিয়া নামক ৩টি হাঁড়ের সমন্বয়ে গঠিত। এছাড়াও এই জয়েন্ট অনেক মাংশপেশি ও সন্ধিবন্ধনীর সাহায্যে সংযুক্ত। হাঁটুর জয়েন্টের ভেতরটা সায়নোভিয়াল মেমব্রেন বা ঝিল্লি দিয়ে ঢাকা থাকে। এই সায়নোভিয়াল মেমব্রেন সায়নোভিয়াল ফ্লাইড তৈরি করে, যা হাঁটুর ঘর্ষণজনিত ক্ষয় রোধ করে। হাঁটুর জয়েন্টের চারপাশে থাকে সূক্ষ্ম নার্ভের জালিকা যা হাঁটুতে তৈরি হওয়া ব্যথার অনুভূতি ব্রেইনে পাঠিয়ে দেয় এবং আমরা হাঁটুতে ব্যথা অনুভব করি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/10/1562756490919.jpg

হাঁটু ব্যথা কেন হয়?
বিভিন্ন কারণে হাঁটু ব্যথা হতে পারে। তবে অন্যতম কারণ—হাড়ক্ষয় বাত বা অস্টিওআথ্রাইটিস। এর ফলে হাঁটুতে ব্যথা হয়, কখনো কখনো হাঁটু ফুলে যেতে পারে। হাঁটাচলা করতে, নামাজ পড়তে, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে অনেক কষ্ট হয়।
আঘাত হাঁটুর ব্যথার একটি বড় কারণ। আঘাতের কারণে মাংশপেশি বা লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। কখনো কখনো হাঁড় সরে বা ভেঙে যায়। অনেক সময় ভারী জিনিস ওঠানামা করার কারণেও হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত ওজনের কারণেও হাঁটু ব্যথা হতে পারে।

কাদের বেশি হয়?
গবেষণা বলছে, হাঁটুর ক্ষয় বাত সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর শুরু হয়। বিভিন্ন হরমোনজনিত কারণে পুরুষের তুলনায় মহিলাদের হাঁটুর ব্যথা বেশি হয়। এছাড়া পুরনো আঘাতের কারণেও বিভিন্ন বয়সে হাঁটু ব্যথা হতে পারে।

কী করা উচিত?
১. হাঁটু যেহেতু আমাদের শরীরের সমস্ত ওজন বহন করে তাই হাঁটুর ওপর চাপ কমাতে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

২. প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে। এছাড়াও কিছু আরোবিক ব্যায়াম যেমন—দৌঁড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানোর অভ্যাস হাঁটু ভালো রাখবে।

৩. আমাদের হাঁড় গঠনে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের ভূমিকা অনেক। শরীরে এই ভিটামিন ডি সংশ্লেষণে সূর্যের আলোর ভূমিকা অপরিসীম। তাই সুস্থ সবল হাঁড় গঠনে আমাদের কমপক্ষে ২০-৩০ মিনিট সরাসরি সূর্যের আলোর সংস্পর্শে থাকা উচিত।
গবেষণা বলছে, মধ্য দুপুরের সূর্য অর্থাৎ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সময়ের সূর্যের আলো ভিটামিন ডি সংশ্লেষণে সাহায্য করে।

৪. কিছু সহজ ব্যায়াম হাঁটুকে শক্তিশালী করে এবং ব্যথামুক্ত রাখতে সাহায্য করে

ক. একটি নরম তোয়ালে ভাঁজ করে হাঁটুর নিচে রেখে হাঁটু দিয়ে তোয়ালের উপর চাপ দিয়ে ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এভাবে ১০ বার করে দিনে ২-৩ বার করতে হবে।
খ. একটি চেয়ারে বসে পায়ের গোড়ালিতে ১-২ কেজি ওজন বেঁধে পা সোজা করে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং পরে ভাঁজ করুন। আবার সোজা করুন। এভাবে ১০-১৫ বার করে দিনে ২-৩ বার করতে হবে।

৫. ফিজিওথেরাপি : হাঁটু ব্যথার চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি খুবই কার্যকর চিকিৎসা ব্যবস্থা। শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি হাঁটু ব্যথা নিরাময়ে খুবই কার্যকরী। বিভিন্ন ধরনের ম্যানুয়াল থেরাপি, যেমন—জয়েন্ট মবিলাইজেশন, ম্যানিপুলেশন, স্ট্রেচিং, টেপিং ইত্যাদি খুবই কার্যকরী। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের হিট কম্প্রেশন হাঁটু ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/10/1562756385645.jpg

৬. খাদ্যাভাস : একটি পরিমিত পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস হাঁটুর ক্ষয়রোধ করতে সাহায্য করে। প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন—ভিটামিন এ, সি, ই জয়েন্টের ক্ষয়রোধ করে।
ছোট মাছ, ডিম, দুধ, মাখন, দই, পনির ইত্যাদি ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার হাঁড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে।

তেলসমৃদ্ধ মাছে আছে স্বাস্থ্যকর ওমেগা-৩ যা এন্টি ইনফ্লামেটরি সমৃদ্ধ এবং হাঁড়ক্ষয় রোধে খুবই উপকারী। এছাড়া কিছু তেল যেমন—অলিভ অয়েল, এভোকোডা, সেফ-ফ্লাওয়ার তেল শরীরের কোলেস্টোরল কমাতে সাহায্য করে। পালংশাক, রসুন, বাদাম, ব্রকলি, গ্রিন-টি ইত্যাদি খাবার হাঁড়ের ক্ষয় রোধে খুবই উপকারী।

হাঁটু সুস্থ রাখতে, ব্যথামুক্ত জীবনযাপন করতে নিয়মিত ব্যয়াম করুন, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন এবং সুস্থ থাকুন।

   

ঝুঁকি এড়াতে সব হাসপাতালের লিফট সেফটি পরীক্ষার নির্দেশ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝুঁকি এড়াতে দেশের প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের জরুরি সেবা, লিফট সেফটি সিস্টেম ও সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সোমবার (১৩ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত সারাদেশের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অংশগ্রহণে এক জরুরি ভিডিও কনফারেন্সে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কনফারেন্সে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লিফট দুর্ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এরপর হাসপাতাল প্রধানদের জরুরি সেবা, লিফট ও সার্ভিস ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

ভিডিও কনফারেন্সে আলোচ্য সূচি ও সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. মঈনুল আহসান জানান, ভিডিও কনফারেন্সে বিভিন্ন বিষয়েই আলোচনা করা হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লিফট দুর্ঘটনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের হাসপাতালগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জরুরি ভিত্তিতে দেশের সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সব ইলেকট্রো মেকানিক্যাল যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও সব লিফট অপারেটরদের হাজিরা প্রতিদিন পরীক্ষা করা ও তাদের যোগ্যতা পুনরায় পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। এমনকি প্রতিটি হাসপাতালকে দ্রুততম সময়ে লিফটের সেফটি সিস্টেম পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।

ডা. মঈনুল আহসান বলেন, আজকের কনফারেন্সে দেশের প্রতিটি হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিতকরণের বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব লিফট পরীক্ষা করার জন্য পিডব্লিউডিকে চিঠি দিতে বলা হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মঈনুল আহসান, পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. হারুন-অর- রশীদসহ আরও অনেক।

;

ডেঙ্গুতে মাকে হারিয়েছি, আর কারও মা যেন না হারায়: স্বাস্থ্যমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ১৯৮০ সালে ডেঙ্গুতে আমি মাকে হারিয়েছি। তাই এটা নিয়ে আমার চিন্তা আছে। ডেঙ্গুতে আর কারও মা ও স্বজন যেন মারা না যায়।

মঙ্গলবার (৭ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ২০২৪ সালের ডেঙ্গু প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধির আগেই তা প্রতিরোধে জনসচেতনতায় গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সব রোগের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে রোগটি কারও হওয়ার আগেই প্রতিরোধ করা যায়। মানুষের যেন ডেঙ্গু না হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। মশা নির্মূলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশন এবং যে ঘরে মানুষ থাকে সেখানকার সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলা করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার কাজ নয়। তাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সম্মেলিতভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে। ডেঙ্গু এখন গ্রামেও ছড়িয়ে গেছে। একটা রোগ হয়ে গেলে আমরা চিকিৎসা দিই। মানুষ যেন না মরে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রী আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা অনেক আলোচনা ইতোমধ্যে করেছি। আমি নির্দেশনা দিয়েছি যাতে ডেঙ্গু বৃদ্ধির সময়ে কোনোভাবেই স্যালাইন সংকট দেখা না দেয় এবং স্যালাইনের দামও না বাড়ে। ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়লে হাসপাতালগুলোকে খালি রাখার ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিয়েছি। বর্তমানে মশা মারার পদ্ধতি নিয়েও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশিদ আলম বলেন, ডেঙ্গু সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য দেশের প্রত্যেকটা জায়গার জনপ্রতিনিধি যেমন, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা স্তরের সবাইকে সংযুক্ত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান, বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের (বিআরআইসিএম) মালা খান প্রমুখ।

;

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

মনে হয় গরু কুকুর মানুষ একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে এসেছে!



তোফায়েল আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

তিনবার দেশ সেরার খ্যাতি পাওয়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম এক কথায় ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালের ভেতরে গরু ও কুকুরের দলের অবাধ বিচরণ দেখে মনে হবে, হাসপাতালে গরু, কুকুর ও মানুষ একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে এসেছে। হাসপাতালের সেবার মানের পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স এবং স্টাফদের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেক রোগী এবং তাদের স্বজনেরা।

তবে এ অভিযোগ মানতে নারাজ হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ।

রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গরু ও কুকুরের অবাধ বিচরণের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ভাইরাল হয়। ওই ছবিগুলোতে দেখা যায় যায়, হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে কুকুর শুয়ে আছে। দেখলে মনে হবে যেন কুকুরের দল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছে। আবার আরেকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রোগীর সঙ্গে গরু হেঁটে হেঁটে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকছে।

Abdulla Al Amin নামে একজন ফেসবুকে ছবিগুলো আপলোড করে লিখেছেন-

‘মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ময়মনসিংহ (৪) সদর আসনের সংসদ সদস্য, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এশিয়া মহাদেশের মাঝে নামকরা উল্লেখযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান, আজ এই হাল কেন? যেখানে টেন্ডার নিয়ে মারামারি হয়, পুলিশ পাহারা দিতে হয়। হাসপাতাল নিরাপত্তায় কতজন সরকারি বেসরকারি (আউটসোর্সিং) নিরাপত্তা রক্ষী রয়েছে! অভ্যন্তরে টয়লেটগুলোর কি হাল সরেজমিন পরিদর্শন করুন’।

সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম তরফদার নামে একজন আইডি থেকে রোগীর পাশে কুকুর শুয়ে আছে, এমন ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘হায়রে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালের দৃশ্য’।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল: দেখে মনে হয় গরু কুকুর মানুষ একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে এসেছে! ছবি- বার্তা২৪.কম

‘Mymensingh Helpline’ পেজে হাসপাতালের ভেতরে কুকুরের ছবিগুলো পোস্ট করে Rezwan Bidhuth নামে একজন লিখেছেন-

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিতরে, বিস্তারিত আপনারাই বলেন??’

এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয় জেলার মানুষ ছাড়াও কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ এবং গাজীপুর থেকে রোগীরা সেবা নিয়ে থাকেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। এছাড়াও আউটডোরে চার থেকে সাড়ে চার হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় আট হাজার রোগীর চাপ সামলিয়ে সেবার মান নিশ্চিত করে বিগত পরিচালনা প্রশাসনের নেতৃত্বে ২০১৮, ১৯ এবং ২০২০ সালে ‘হেলথ মিনিস্টার্স’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নানা অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষুব্ধ রোগী, তাদের স্বজন এবং সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি, লক্ষ করা দেখা যায়, নোংরা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে মেঝে এবং বারান্দায় গাদাগাদি করে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছেন রোগীরা। দেড়, দুই বছর আগে নিয়মিত ওষুধ পাওয়া গেলেও এখন সংকট চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেও বিস্তর ভুলের অভিযোগ। আবার অনেক চিকিৎসক বাইরে তাদের পছন্দের প্রাইভেট হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন রোগীদের।

হার্টের সমস্যা নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৭১ শয্যা কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি হন জেলার হালুয়াঘাটের মোশারফ হোসেন। শয্যা না পেয়ে বারান্দায় সেবা নিচ্ছেন তিনি। ভর্তি হওয়ার পর পরই কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ পেলেও ইকো বা ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষার সময় বেঁধে দেওয় হয় দুই মাস পর। বাধ্য হয়ে তিনি ইকোসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা বাইরে করান।

মোশারফ হোসেন বলেন, আমি হার্টের রোগী হওয়ায় অন্যান্য পরীক্ষার সঙ্গে ডাক্তার বলেছেন ইকো পরীক্ষা করাতে। কিন্তু তারা পরীক্ষার জন্য সিরিয়াল দিয়েছে দুই মাস পর। বাধ্য হয়ে তা বাইরে করিয়েছি। মেশিন নষ্ট থাকার কারণে অনেক পরীক্ষা তাদের এখানে হচ্ছে না। তাই, ডাক্তাররা অন্য ক্লিনিকে করার পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা গরিব বলেই এই হাসপাতালে সেবা নিতে আসি। কিন্তু এখানে এসে ভোগান্তির পাশাপাশি ফতুরও হচ্ছি আমরা।

একই অবস্থা আট মাস আগে ভর্তি হওয়া অনতি পালের। তাকে ঢাকায় গিয়ে ইকো এবং এনজিওগ্রাম করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

আক্ষেপ করে অনতি পাল বলেন, আমার যদি ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করার মতো অবস্থা থাকতো, তাহলে কি এখানে এতদিন থাকতাম! তাদের পরামর্শে বাইরের ক্লিনিক থেকে অনেক পরীক্ষা করিয়েছি। এখন হাতখালি। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচও জোগাড় করতে পারছি না। মনে হচ্ছে, মরলেই বাঁচি আর আপনাদের কাছেই-বা বলে কী লাভ হবে!

একই ওয়ার্ডে মাকে ভর্তি করিয়েছেন তারাকান্দার তরুণ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওয়ার্ডে ডাক্তার, নার্স পাওয়া গেলেও ওয়াশরুমের অবস্থা একেবারেই খারাপ। ভালো মানুষ সেখানে গিয়েও অসুস্থ হচ্ছেন। দেশসেরা হাসপাতালের এই অবস্থা ভালো লক্ষণ নয়!

প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে তিনশ থেকে চারশ রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কারণে তিনটি ইকো মেশিনের মধ্যে দুটিই অকেজো হওয়ায় পরীক্ষার সময় বেশ লাগছে বলে জানিয়েছেন কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. গোবিন্দ কান্তি পাল।

তিনি বলেন, বেড ৭১টি কিন্তু রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় সাড়ে তিনশ থেকে চারশ। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন আসেন তিন থেকে চারজন করে। তাহলে ওয়ার্ডের পরিবেশটা কেমন হবে আপনারাই বলেন!

তা রোধে এবং সেবার মান নিশ্চিত করতে অ্যাটেন্ডেন্স কার্ড করা হয়েছে। একজন রোগীর সঙ্গে সর্বোচ্চ দুইজনকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমরা ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছি।

যন্ত্রপাতি অকোজো থাকার বিষয়ে ডা. গোবিন্দ কান্তি পাল বলেন, অকেজো ইকো মেশিন মেরামত এবং নতুন মেশিনের চাহিদার কথা জানিয়ে ২০২১ সাল থেকে গত তিন বছরে কার্ডিওলজি বিভাগ থেকে সাত দফা হাসপাতালের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

গাইনি ওয়ার্ডে স্ত্রীকে ভর্তি করিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, পরিচালক নাসির উদ্দিনের সময়ে হাসপাতালে একটা শৃঙ্খলা ছিল। এখন তার কিছুই নেই। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্যে রোগীরা সেবা নিচ্ছেন। নার্স এবং চিকিৎসকরাও আন্তরিক নন। তারা রোগী এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেন।

সেইসঙ্গে তিনি এটাও বলেন, তিনটির মধ্যে একটি ওষুধ হাসপাতালে পাওয়া গেছে। বাকি দুটি বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। বছরের শুরুতে যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে শেষে কী হতে পারে আপনারাই বলুন!

ফরিদুল ইসলাম নামে একজন বলেন, আমার এক রোগীকে নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেশ কয়েকদিন ধরে ভর্তি রয়েছি। আলট্রা করানোর পর এখানকার চিকিৎসকেরা এক ধরনের রিপোর্ট দিয়েছেন আর বাইরের চিকিৎসকরা অন্য ধরনের রিপোর্ট দিয়েছেন। পরে বাইরের রিপোর্টই সঠিক হয়েছে।

হাসপাতালের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে অসন্তোষ প্রকাশ করে ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমরা যে হাসপাতালটিকে নিয়ে গর্ববোধ করি, তার যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে যাওয়ার আর জায়গা নেই। কয়েকদিন এখানে ঘোরাঘুরি করে বুঝতে পেরেছি, মেডিসিন রোগীদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।

৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি খায়রুল ইসলাম নামে এক রোগী বলেন, হাসপাতালটিতে রোগীর অতিরিক্ত চাপের কারণে মানুষ মেঝে এবং বারান্দাতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু সেখানটাও অপরিচ্ছন্ন।

ভেতরে অনেকগুলো গেট পার করে কুকুর এবং গরু প্রবেশ করছে। তাহলে দারোয়ান রেখে লাভটি কী হলো বলেন তো! চিঠি লিখেই বা এমপিকে বললে কী আর সমাধান হবে! আমরা সবাই নিজে বড় হতে চাই, কারো দিকে না থাকিয়ে।

হাসপাতালের নানা অসঙ্গতির বিষয়ে জানার পাশাপাশি রোগীদের ভোগান্তি নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্তর নির্দেশে জরুরি বিভাগের সঙ্গে ‘অনুভূতির বাক্স’ স্থাপন করেছে মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। পর পর তিনবার দেশসেরার খ্যাতি অর্জন করা হাসপাতালের এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ।

এ বিষয়ে ‘জনউদ্যোগ’ ময়মনসিংহের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, স্থানীয় সংসদের ‘অনুভূতির বাক্স’ স্থাপনকে অন্তত সম্মান দেখিয়ে হলেও রোগীদের প্রতি চিকিৎসকদের আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। আমরা পুরস্কার না পেলেও চাই, রোগীরা যেন তৃপ্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন।

হাসপাতালের সার্বিক বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক প্রশাসন মোহাম্মদ মাইনউদ্দিন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যে, আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি, তা তো বলেন না! সেবার মান যদি খারাপ হতো তাহলে কি একহাজার শয্যার হাসপাতালে চার হাজার রোগী ভর্তি থাকতো!

অবাধে কুকুর এবং গরুর প্রবেশের প্রশ্নটি এড়িয়ে তিনি বলেন, কার্ডিওলজি বিভাগের দুর্ভোগ নিরসনে পরবর্তী অর্থবছরে নতুন ইকো মেশিন কেনা হবে। এছাড়াও সেবার মান নিশ্চিতে অন্যান্য সমস্যা নিরসনে কাজ হচ্ছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো নজরে এসেছে। সিটি করপোরেশনকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।

রোগীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার থেকে যে ওষুধ আসে, সব ওষুধই আমরা রোগীদের দিয়ে দিই।

 

;

একটাই প্রতিজ্ঞা জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেবো: স্বাস্থ্যমন্ত্রী



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নড়াইল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, স্বাস্থ্যখাত সম্পর্কে আমি অনেক কিছুই জানি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর আমার একটাই প্রতিজ্ঞা যে, আমি জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেবো, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাতে স্বাস্থ্যসেবা পায়!

শনিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে নড়াইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন শেষে জেলা হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নড়াইলে যদি একটা ভালো হাসপাতাল, অপারেশন থিয়েটার হয়, তাহলে তো রোগীরা ঢাকা বা যশোরের দিকে যাবেন না। বড় বড় হাসপাতালে রোগীদের চাপে হাঁটা যায় না। আমরা যদি এখানে ভালো চিকিৎসা দিতে পারি, রোগীরা ঢাকামুখী হবেন না। নড়াইলের দুটি সুন্দর হাসপাতাল দেখলাম! হাসপাতাল দুটিকে যদি চালু করা যায়, তাহলে বহু মানুষের উপকার হবে। আমি অবশ্যই অবশ্যই এ ব্যাপারে কাজ করবো!

নড়াইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন ভবন উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন 

নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রশংসা করে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, মাশরাফি যেভাবে হাসপাতালটাকে নিজের মনে করেন, এভাবে যদি সারাদেশের সংসদ সদস্যরা মনে করতেন, তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা অনেক ওপরে চলে যেতো। সংসদ সদস্যরা যদি যার যার এলাকার হাসপাতালে গিয়ে নিজের চেক-আপ করান, তাহলে জনগণের আস্থাটা বাড়বে। তারা যদি কথায় কথায় বিদেশ চলে যান, তাহলে জনগণের আস্থা আসবে না।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মেহেদি হাসান, সিভিল সার্জন ডা. সাজেদা বেগম, জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আব্দুল গফফারসহ আরো অনেকেই।

প্রসঙ্গত, এর আগে বিকেল ৩টার দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামান্ত লাল সেন জেলার লোহাগড়া উপজেলায় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন করেন।

 

;