ছোটগল্পে মুক্তিযুদ্ধ : আশা ও বেদনার যৌথভাষ্য



বীরেন মুখার্জী
অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মা রে, তুই ছাড়া আমার কেউ নাই।... মারে রে কথা কসনা ক্যান? হোন্। জানোয়ারে কিছু কইরলে হে মনে রাখতা নাই। কুকুর কামর দিলে কি মানুষে মনে রাখে, না পা কাইট্যা ফেলে? মানুষের কিছু করইলে অন্য কথা। জানোয়ারকে মানুষ মাফ কইরা দ্যায়।’

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনির নারী ধর্ষণের চিত্র এভাবে অঙ্কন করেছেন শওকত ওসমান তার ‘ক্ষমাবতী’ গল্পে। পাকিস্তানিদের বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা, নির্যাতন যে কত মর্মস্পর্শী ও ভয়াবহ ছিল তা একাত্তরের নয় মাসের যুদ্ধে প্রত্যক্ষ করা গেছে। পাকিস্তানি শাসকের শোষণ ও নিপীড়নের জটাজাল থেকে জাতিসত্তা রক্ষা, আর্থসামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অস্তিত্ব পুনরুদ্ধারে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল বাঙালি জাতি। ‘৫২-এ বাংলা ভাষা রক্ষার বিজয় বাঙালির হৃদয়পটে সাহসের রাজটীকা এঁকে দেয়; সেই সাহসকে ভিত্তি করে একাত্তরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পৃথিবীর মানচিত্রে লাল সবুজের পতাকাবাহী স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটাতে সক্ষম হয় বাঙালি জাতি। যুদ্ধের সাফল্য ও গৌরবগাঁথা, ক্লেদ, হতাশা এবং মুক্তিযুদ্ধোত্তর প্রাপ্তির কাঙ্ক্ষা ইত্যাদি প্রপঞ্চ বাঙালির মননে নানামুখী আবেগের সৃষ্টি করে। যার প্রতিফলন পাওয়া যায় সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায়। বলা যায়, মুক্তিসংগ্রামের ইতিবৃত্ত ও যুদ্ধোত্তর বাস্তবতা সসম্ভ্রমে বিকশিত হয়েছে বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে। শিল্পসংবেদনশীল মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন দেশের সাহিত্যিকগণ এমনকি ভিনদেশি সাহিত্যিকরাও নিষ্ঠার সঙ্গে এই কাজটি করেছেন। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক দৃশ্যপট নানান আঙ্গিকে তুলে ধরা হয়েছে ছোটগল্পে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে যেমন এ দেশের স্বাধীনতাকামী আপামর ছাত্রজনতা, সৈনিক, শ্রমিক-কৃষক, শিক্ষক, লেখক, বুদ্ধিজীবী নানাভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে, তেমনিভাবে এ দেশের কবি-সাহিত্যিকরাও মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা ও পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে কলমকে শাণিত রেখেছেন। রচনা করেছেন গান, কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস ও নাটক। এসব সাহিত্যকর্ম একদিকে যেমন যুদ্ধরত বাঙালিকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে অন্যদিকে বাংলা সাহিত্য ভাণ্ডারকেও করেছে সমৃদ্ধ। ‘সাহিত্যের আরেক নাম জীবন সমালোচনা (Criticism of life) মাধ্যমে জীবনের সত্য, জীবনাতীতের সত্য ভাষার সৌন্দর্যে মণ্ডিত হয়ে সাহিত্যে উদ্ভাসিত হয়।’ সাহিত্যের দর্পণে যদি প্রতিবিম্বিত হয় একটি জাতি তথা একটি রাষ্ট্রের জীবন প্রণালী। প্রতিফলিত হয় সেই দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পটভূমি। তাহলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত সাহিত্যকর্মের মধ্য দিয়েও বাঙালি জাতির আপোসহীন সত্তাকে শনাক্ত করা যায়। 

কথাসাহিত্যে, বিশেষ করে ছোটগল্পে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপক প্রতিফলন লক্ষণীয়। সৃজনশীলতার প্রশ্নে একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কিত থাকায় আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক মুক্তির স্বার্থে নৃ-তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ উজিয়েও অপরাপর ক্ষুদ্র জাতিসত্তা সংগ্রামের সোপানতলে একীভূত হয়েছে—অস্তিত্বের লড়াইয়ে। বিভিন্ন সময়ে ঔপনিবেশিক শক্তির দীর্ঘ ও ধারাবাহিক শাসন-শোষণে ভঙ্গুর আর্থ-সামাজিক অবস্থায় নিমজ্জিত বাঙালির মধ্যবিত্ত মানস যুদ্ধচলা সময়ে দু’টি বিপরীতমুখিন দর্শন অবলম্বন করে স্পষ্ট হয়। প্রথমত ধর্মীয় ভীরুতা, স্বাচ্ছন্দ ও সুবিধাবাদী নীতি গ্রহণ ও তোষণের সনাতন রূপ এবং দ্বিতীয়ত সমস্ত পঙ্কিলতা ও সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তীর্ণ হবার চেতনা। প্রথম ধারার সমর্থকরা সত্য ও যুক্তিনিষ্ঠ দ্বিতীয় ধারার বিপরীতে অবস্থান করলেও ঘটনার প্রবহমানতা ও প্রতিক্রিয়ায় একসময় মুক্তিকামী চেতনায় মিলিত হয়। মানবিক উন্নয়ন ঘটে। ব্যক্তির অভিজ্ঞানসঞ্জাত, মর্মস্পর্শী উপলব্ধি নিয়ে বশীর আল হেলাল-এর গল্প ‘প্রথম কৃষ্ণচূড়া’। পাকবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে ঢাকা শহরের অর্ধেক মানুষ শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম রসুল তার পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে দেয়। শিক্ষকের তরুণ পুত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে আগ্রহী হলেও পিতার অনুমতি পায়নি। কিন্তু ঢাকা শহরে অবস্থান ও প্রতিদিন নির্যাতন, হত্যা প্রত্যক্ষ করে তার বিদ্রোহী সত্তার জাগরণ ঘটে। বয়সের ভারে নিজে যুদ্ধে যেতে না পারলেও ওই শিক্ষক পুত্রকে চিঠি লিখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের নির্দেশ দেয়।

হানাদার বাহিনীর মানবতা বিরোধী হত্যা-নির্যাতন ও দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়া এক যুবকের বীরত্বগাঁথা নিয়ে রচিত জহির রায়হানের শ্রেষ্ঠ গল্প ‘সময়ের প্রয়োজনে’। গল্পের মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রের যুবক জীবনত্যাগী বীর সহযোদ্ধাদের কথা ভেবে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে আবার একই সঙ্গে পাকবাহিনীকে হত্যা করে উল্লাসে ফেটে পড়ে। গল্পের চূড়ান্ত পর্যায়ে সে পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে নিজের জীবনও উৎসর্গ করে। তবে ধরা পড়ার পূর্বে সে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধের কারণ অনুসন্ধান করে। গল্পটি একজন মুক্তিযোদ্ধার দিনলিপি হিসেবে ধরা যায়। বাঙালি জাতি সেদিন কোন সত্য প্রতিষ্ঠার জন্যে লড়েছে? বর্তমানের বাস্তবতায় দ্বিধান্বিত জাতির সামনে সেই সত্যটিই কি নানা মাত্রিকতা নিয়ে দৃশ্যমান নয়? গল্পটিতে লেখকের শক্তিমত্তা পূর্ণমাত্রায় সমর্থনযোগ্য। আবেগী, তারল্যপূর্ণ লেখকদের মতো মুক্তিযুদ্ধকে তিনি শুধু নারী-লাঞ্ছনা হিসেবে দেখেননি। পাকসেনা ও এদেশীয় বর্বরদের যৌনলিপ্সা যুদ্ধখণ্ডের একটি প্রপঞ্চমাত্র। যে বাস্তবতা, কাঙ্ক্ষা নিয়ে একাত্তরের যুদ্ধে অংশ নেয় সাধারণ জনতা, তার মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন গল্পটিতে পূর্ণমাত্রায় উপস্থিত।

প্রায় সমজাতীয় বাস্তবতা নিয়ে রচিত হারুন হাবীবের ‘লালশার্ট’ গল্পটি। কামালপুর নামের এক অখ্যাত অঞ্চলের রণক্ষেত্রের প্রকৃত অবস্থা এ গল্পে পূর্ণরূপে ফুটে ওঠে। এলাকার পাকিস্তানি ঘাঁটির নিকটবর্তী মুক্তিযোদ্ধাদের বাঙ্কার পাহারারত জলিল, সতিশ ও মোতালেব নামের তিন মুক্তিযোদ্ধার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে এ গল্পে। পাকসেনারা বাঙ্কার আক্রমণ করলে তিনজনের একজনও ফিরে আসে না। পরদিন খুঁজতে গিয়ে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় এক বাঁশঝাড়ের মধ্যে স্থির বসে থাকতে দেখে সহযোদ্ধা তাহের। ওই আক্রমণে সতিশ ও মোতালেব নিহত হয়। জলিল আহত হলেও মৃত দুই সহযোদ্ধার অস্ত্র দু’টি যুদ্ধের কাজে লাগবে বলে সে সঙ্গে নিয়ে আসে। জলিলও ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে এগুতে থাকে। এ সময় তার মনে পড়ে মা আর বোনের কথা। যাদের না বলে সে যুদ্ধে অংশ নেয়। স্বাধীনতা প্রত্যাশায় জীবন উৎসর্গকারী এই যুবক যোদ্ধা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও নিহত সহযোদ্ধাদের অস্ত্র, তাদের রক্তাক্ত লালশার্টের ছেঁড়া অংশ বহন করে দেশমাতৃকার প্রতি অগাধ ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ দেশমাতৃকার সম্মানই গল্পে নিঁখুত ভাবে উঠে আসে।

হাসান আজিজুল হকের ‘আটক’ গল্পটি যুদ্ধখণ্ডের আরেক বাস্তবতা নিয়ে বিকশিত। মিত্রবাহিনীর সঙ্গে বাঙালি যোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণে দিশেহারা পাকসেনারা। রাতের আঁধারে তাদের পশ্চাদপসরণ নিখুঁতভাবে বিবৃত হয়েছে। তার ‘ভূষণের একদিন’ গল্পে পাকিস্তানি সেনাদের অত্যাচার নির্যাতনে বাঙালির বিধস্ত জীবনের চিত্র ও বাঙলার প্রত্যন্ত জনপদের বিবর্ণ ছবি ফুটে ওঠে। গল্পে তিনি যুদ্ধ শুরু হওয়ার অব্যবহিত পরের বাস্তব অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন। নামহীন গোত্রহীন গল্পটি বিকশিত হয়েছে থমথমে ও ভয়াবহ পরিস্থিতিকে সামনে রেখে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর লোমহর্ষক বর্বরতার ছবি তিনি এ গল্পে শিল্পসম্মভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন ‘সে’ নামের এক চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে। গল্পটি মুক্তিযুদ্ধ প্রেক্ষাপটে রচিত অপরাপর গল্পের ভেতর ভিন্নতা নির্দেশ করে।

বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয়’ বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই। মুক্তিযুদ্ধ সমগ্র জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিয়েছে একথাও সত্য। কিন্তু এর জন্যে বাঙালি জাতিকে যা হারাতে হয়েছে তার পরিমাণও নিতান্ত কম নয়। যে কারণে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত ছোটগল্পগুলোতে বিজয়ের পাশাপাশি বেদনারও ভয়াবহ চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। বিজয়ী বেশে মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন দেশের মাটিতে ফিরে এলেও তাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে নিষ্ঠুর বাস্তবতার। ভয়াবহ যুদ্ধের কারণে মা হারিয়েছে সন্তান, নারীরা বিসর্জন দিয়েছে সম্ভ্রম, প্রিয়জনের মৃতদেহ মাড়িয়েও যুদ্ধ করতে হয়েছে সতীর্থ যোদ্ধাদের। নিজ জন্মভূমি ছেড়ে উদ্বাস্তু, উন্মুল হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছে সাধারণ মানুষদের। গল্পগুলোতে এসব মানুষেরও অসহায়ত্বের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। ফুটে উঠেছে মানবিক সকরুণ আর্তি। সেলিনা হোসেন তার পরজন্ম গল্পে যুদ্ধ যন্ত্রণায় নিঃসঙ্গ ও বেদনাজর্জর এক পিতার করুণ আর্তি তুলে ধরেছেন। বৃদ্ধ কাজেম আলীর মুক্তিযোদ্ধা চার সন্তান এক অপারেশনে গিয়ে পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। তার চোখের সামনেই পাকসেনারা তাদের গুলি করে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর নিঃসঙ্গ কাজেম আলীর স্ত্রী পুত্রশোকে মারা গেলে বৃদ্ধ কাজেম আলী আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে।

হরিপদ দত্ত’র বাস্তব সত্যদর্শন ‘কাকজোছনার বনপুদিনা’ গল্পটি। মুক্তিযুদ্ধকে নিকট থেকে দেখার অভিজ্ঞতা এবং গল্পে বিবৃত সত্য ঘটনাটি তিনি সৃজনশীল চেতনার মিশেলে শিল্পঋদ্ধ ফসল হিসেবে উপস্থাপন করেন। যুদ্ধে ধর্মীয় ভীরুতা ও আখের গোছাতে উৎসাহী এক অর্থলিপ্সু অধ্যাপক পিতা ও যুদ্ধশেষে পাকক্যাম্প থেকে ফিরে আসা কন্যার বেদনাদায়ক সংলাপ গল্পের চুম্বকীয় অংশ হিসেবে গল্পটিকে বিশিষ্টতা দান করে। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি নিয়ে লিখিত এটি একটি সার্থক ছোটগল্প।

ছোটগল্প লেখকরা নানারৈখিক চিত্র অঙ্কনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গল্পগুলোকে মাত্রিক, ব্যঞ্জনাঋদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকসেনা কর্তৃক নারী ধষর্ণের চিত্র অঙ্কনের পাশাপাশি তুলে ধরেছেন বাঙালি নারীর গুপ্তচরবৃত্তির সফল কাহিনী। নারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে পাকসেনাদের নিষ্ঠুরতা মেনে নিয়েছে আবার বিষধর ছোবল দিয়েও তাদের প্রাণ সংহারে ব্রতী হয়েছে। পাকসেনাদের নির্যাতনে অন্তঃসত্ত্বা এবং সন্তান প্রসব করে মাতৃত্বের অপমানের প্রতিশোধ হিসেবে সেই সন্তানকে মেরে ফেলার দৃশ্যও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের গল্পে। শক্তিশালী গল্পকার শওকত ওসমান ‘দ্বিতীয় অভিসার’ গল্পে এইভাবে বাঙালি নারীর প্রতিশোধ গ্রহণের প্রবৃত্তিকেই সফলভাবে চিত্রায়িত করতে সচেষ্ট হয়েছেন।

এছাড়া শওকত ওসমান-এর ‘দুই ব্রিগেডিয়ার’, ‘ক্ষমাবতী’, ‘জননী: জন্মভূমি’, ‘দ্বিতীয় অভিসার’, বশীর আল হেলাল-এর ‘প্রথম কৃষ্ণচূড়া’, ‘রণকৌশল’, জহির রায়হান-এর ‘সময়ের প্রয়োজনে’, আবু জাফর শামসুদ্দীন-এর ‘ছাড় দেয়াল’, ‘চাঁদমারি’, হাসান আজিজুল হক-এর ‘নামহীন গোত্রহীন’, ‘রাফি’, ‘কৃষ্ণপক্ষের দিন’, ‘আটক’, কায়েস আহমেদ-এর ‘নচিকেতাগণ’, ‘বাংলাদেশ কথা কয়’, মঈনুল আহসান সাবের-এর ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’, শাহরিয়ার কবির-এর ‘একাত্তরের যীশু’, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-এর ‘অপঘাত’, মাহমুদুল হক-এর ‘বেওয়ারিশ লাশ’, ‘কালো মাফলার’, আলাউদ্দিন আল আজাদ-এর ‘আমাকে একটি ফুল দাও’, হরিপদ দত্ত-র ‘কাকজোছনার বনপুদিনা’, সেলিনা হোসেন-এর ‘পরজন্ম’, হারুন হাবীব-এর ‘লালশার্ট’, কাজী ফজলুর রহমান-এর ‘২৫ শে মার্চ’ গল্পগুলো সন্ধানী পাঠশেষে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত সার্থক ছোটগল্প হিসাবে উল্লেখ করা যায়।

পরিশেষে বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের আবেগ, উপলব্ধি, তৎকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষিত, মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতা নিবিড়ভাবে ধরা পড়েছে বাংলা ছোটগল্পের জমিনে। গল্পগুলোতে চিত্রায়িত হতে দেখি যুদ্ধখণ্ডে বাঙালির নিজস্ব উপলব্ধি, স্বাধিকার প্রশ্নে আত্মোৎসর্গকারী জনতার নির্লোভ মুখ। বিবৃত হয় এদেশীয় স্বাধীনতা বিরোধী ও পাক হানাদার বাহিনীর যৌথ যৌনলিপ্সা। অপরাপর ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে সম্ভ্রম হারানো নারীর হৃদয়। লেখকের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও শক্তিশালী কল্পনার মিশেলে পুষ্ট গল্পগুলো আবেগসঞ্চারী বাক্যবিন্যাসে মূর্ত হয়ে ধরা দেয় মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত যাবতীয় হতাশা, দীর্ঘশ্বাস, আশা, প্রাপ্তিসহ নানাবিধ প্রপঞ্চ। লেখকের শক্তিমত্তা, বুননশৈলীতে শব্দচিত্রে ভাস্বর হয় অসহায়-অনাহারী আমজনতার দীর্ঘশ্বাস ও দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। গল্পে বিবৃত ঘটনারাশি তাই পারস্পরিক সহমতের নিরিখে স্থায়ী ক্ষতের সৃষ্টি করে পাঠক চেতনায়। গল্পগুলোতে অঙ্কিত বিভিন্ন চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক অভিব্যক্তি ঘটনা পরম্পরায় মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ ইতিহাস হয়ে ওঠার দাবি রাখে।

দোহাই
১. মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ছোটগল্প, মুহম্মদ হায়দার, বাংলা একাডেমি, মে ২০০৩
২. বাংলাদেশের ছোটগল্প (গবেষণা গ্রন্থ), খালেদা হানম, চট্টগ্রাম

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;

বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্বে শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ও মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ও কিশোরগঞ্জ নিউজ'র নিয়মিত লেখক।

বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি,শিল্প, সংগীত, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার বহুল কার্যক্রম নিয়ে দেশের প্রাচীনতম ও অগ্রণী প্রতিষ্ঠা নবঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র এক সভা এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শনিবার (১১মার্চ ২০২৩) বিকেল ৪-৩০ টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় নাট্যশালার কনফারেন্স হলের ভিআইপি সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের বরেণ্য শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্হিতিতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা
কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ। এতে সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সঞ্চালনা করেন।

সভায় বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সদস্য বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর লেখক, কমামিস্ট ও গীতিকার শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ’র কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা গঠনের দায়িত্ব আরোপ করে তার হাতে বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র ইশতেহার তুলে দেন বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এবং অন্যান্য নেতৃবর্গ ।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন বঙ্গীয়'র জার্মানির সভাপতি কবি নাজমুন নেসা পিয়ারী, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক আমিনুর রহমান বেদু, রবীন্দ্র একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবিশ, ইউনেস্কোর ব্রান্ড এম্বাসেডর নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাত, বঙ্গীয়'র সভাপতি পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, বঙ্গীয়'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আলী নিয়ামত, কবি নাঈম আহমেদ, বঙ্গীয়'র কেন্দ্রীয় সদস্য কবি মীনা মাশরাফী, কবি পারভিন আক্তার সহ প্রমুখ।

সভার প্রথম পর্বে আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র সম্মিলন উদযাপন বিষয়ক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কবি আজিজুর রহমান আজিজকে আহবায়ক এবং সংগীতশিল্পী শামা রহমানকে সদস্য সচিব করে উদযাপন কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে বঙ্গীয়র সভাপতি পর্ষদের সকল সদস্য, রবীন্দ্র একাডেমির নির্বাহী শাখার সকল সদস্য, বঙ্গীয়র যুগ্ম সম্পাদকবৃন্দসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশিষ্টজনকে নিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।

দ্বিতীয় পর্বে অযুত তারুণ্যের বঙ্গবন্ধু সম্মিলন, দ্বিশতজন্মবর্ষে মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্মরণ, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থ নিয়ে লেখক কবির আলোচনা সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ইউনাইটেড নেশন্সের ব্রান্ড এম্বাসেডর জনাব নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাতকে সভাপতি পর্ষদের সদস্য, শিশু সাহিত্যিক হুমায়ূন কবির ঢালীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক , সংস্কৃতি সেবক রোকনউদ্দীন পাঠানকে সাংগঠনিক সম্পাদক, কবি আনোয়ার কামালকে লিটল ম্যাগ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সাংবাদিক শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে নির্বাহী সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক, কবি মীনা মাশরাফীকে নীলফামারী জেলার সমন্বয়ক, জনাব এ এইচ এম সালেহ বেলালকে গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা লেখক কবি আবদুল হালিম খান, বীরমুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, কবি মানিক চন্দ্র দে, কবি অর্ণব আশিক, কবি বাবুল আনোয়ার, দৈনিক বঙ্গজননীর সম্পাদক কামরুজ্জামান জিয়া, কবি শাহানা জেসমিন, কবি গবেষক আবু সাঈদ তুলু, চলচ্চিত্র নির্মাতা ড. বিশ্ব রায় (কলকাতা), বঙ্গীয় চট্রগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফ্যাশন ডিজাইনার আমিনা রহমান লিপি, শিল্পী শাহরিয়ার পিউ, কবি সোহরাব সুমন, কবি সরকার পল্লব, কবি রহিমা আক্তার মৌ, কবি লিলি হক, কবি আকমল হোসেন খোকন, শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, হিরা পারভেজ, ড. দিপু সিদ্দিকী, শিক্ষক ও কবি রওশন ই ফেরদৌস, কবি পারভীন আক্তার, কবি শিল্পী মাহমুদা, পূর্বধলার মো. জাকির হোসেন তালুকদার, কবি আনারকলি, কবি অপরাজিতা অর্পিতা, ডা. নূরুল ইসলাম আকন্দ, আবৃত্তিশিল্পী যথাক্রমে রূপশ্রী চক্রবর্তী, রবিউল আলম রবি সরকার, জেবুন্নেছা মুনিয়া, চন্দনা সেনাগুপ্তা, কবি সংগঠক রাজিয়া রহমান, কবি শামীমা আক্তার, শিল্পী সাদিয়া শারমিন, কবি কনক চৌধুরী, কবি তাসলিমা জামালসহ প্রমুখ।

;

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব



মাহমুদ হাফিজ
কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতায় শুরু হয়েছে রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের তিন দিনব্যাপী সাহিত্য উৎসব। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতি সভাগৃহে বিকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এবারের উৎসবে বাংলাদেশের কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, পরিব্রাজক ও ভ্রমণগদ্য সম্পাদক মাহমুদ হাফিজ, স.ম. শামসুল আলম, নাহার আহমেদ, ড. নাঈমা খানম প্রমুখকে সম্মানিত করা হয়।

বিকালে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক নলিনী বেরা। বিশিষ্ট নাট্যকার চন্দন সেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ও কবি সব্যসাচী দেব। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাধারণ সম্পাদক কবি সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য। এতে সমাপণী বক্তৃতা করেন সংগঠনের সভাপতি কবি স্বপন ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য।

আজ ও আগামীকাল ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি হলে বিকাল থেকে কবিতা ও গল্পপাঠ, আলোচনা, শ্রুতিনাটক, সঙ্গীত অনুষ্ঠিত হবে। রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, নেপাল, আসাম, ত্রিপুরার কয়েশ’ কবি লেখক অংশগ্রহণ করছেন।

;

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাকালে বন্ধ থাকার পর আবারো 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কার্যক্রমে ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ রচিত 'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের একশত কপি শুভেচ্ছামূলক প্রদান করা হবে। 

উল্লেখ্য, আগেও ইংরেজি নববর্ষে এবং ভাষার মাসে শত বিশিষ্টজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রন্থ উপহার দিয়েছিল ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ. এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প-সাহিত্য-সমাজ উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আনসার বাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার নামে গঠিত 'শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশন'। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল স্থানীয় নিউজ পোর্টাল কিশোরগঞ্জ নিউজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে জানানো হয়েছে যে, বরকতময়, নেয়ামতপূর্ণ মাহে রমজানের সঙ্গে অন্য কোনো মাসের তুলনা চলে না। রোজা হলো মাহে রমজানে অবশ্য পালনীয় ফরজ আমল, যার পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা নিজে দেবেন। মানবজীবনে রোজা একজন বান্দার আত্মীক ও শারীরিক কল্যাণের ও উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। তদুপরি, রমজান মাসকে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা তাঁর অপার ক্ষমা, দয়া আর অপরিসীম করুণা দিয়ে বান্দাদেরকে উপহার দিয়েছেন। রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত রোজা সঠিকভাবে পালন করলে রোজাদার নবজাতক শিশু মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রোজা রাখবে তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মানব জীবনে ও সামাজিক ব্যবস্থায় রমজান মাস ও রোজার গুরুত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে ফাউন্ডেশন প্রদত্ত গ্রন্থে। এ গ্রন্থ রমজান মাসের তাৎপর্য এবং রোজার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পাঠকদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে ৩০টি সংক্ষিপ্ত অধ্যায়ের মাধ্যমে।

'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের লেখক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ। তাঁর পিতা: ডা. এ.এ, মাজহারুল হক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। মাতা: নূরজাহান বেগম, সমাজসেবী। ড. মাহফুজ পারভেজের জন্ম: ৮ মার্চ ১৯৬৬, কিশোরগঞ্জ শহরে। পড়াশোনা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচ,ডি)। পেশা: অধ্যাপনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। লেখালেখি, গবেষণা ও সাহিত্য সাধনায় ব্রতী। প্রকাশিত গ্রন্থ কুড়িটি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- গবেষণা-প্রবন্ধ: বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি, দারাশিকোহ: মুঘল ইতিহাসের ট্র্যাজিক হিরো। দ্বিশত জন্মবর্ষে বিদ্যাসাগর। উপন্যাস: পার্টিশনস, নীল উড়াল। ভ্রমণ: রক্তাক্ত নৈসর্গিক নেপালে। গল্প: ইতিহাসবিদ, ন্যানো ভালোবাসা ও অন্যান্য গল্প। কবিতা: মানব বংশের অলংকার, আমার সামনে নেই মহুয়ার বন, গন্ধর্বের অভিশাপ। অধ্যাপনা ও গবেষণা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের শীর্ষতম মাল্টিমিডিয়া পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর এবং কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা কিশোরগঞ্জ নিউজ'র উপদেষ্টা সম্পাদক রূপে সংযুক্ত রয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের  'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজিত হবে রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ কার্যক্রম সমন্বয় করবেন কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক, ইতিহাসবিদ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ। সমন্বয় কমিটিতে আরো রয়েছেন কিশোরগঞ্জ নিউজ'র প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ ইসকান্দার আলী স্বপন, সাংস্কৃতিজন লুৎফুন্নেছা চিনু ও চিকিৎসক নেতা ডা. গোলাম হোসেন।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে আরো জানানো হয় যে, ইতিপূর্বে ঘোষিত ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর সম্মাননা বক্তৃতা ২০২০ এবং ২০২১ করোনাকালের বিরূপ পরিস্থিতিতে স্থগিত থাকায় তা যৌথভাবে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হবে। ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. এএ মাজহারুল হক এবং সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' কর্তৃক কিশোরগঞ্জের জীবিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জীবনব্যাপী বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ও ঐতিহাসিক মূল্যায়ন করতে ২০১৫ সাল থেকে এ সম্মাননা বক্তৃতা আয়োজন করা হচ্ছে, যা বক্তৃতা ও লিখিত আকারে প্রদান করেন মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' গতানুগতিক সম্মাননার বদলে ব্যক্তির কর্ম ও কীর্তির বিশ্লেষণমূলক-মূল্যায়নভিত্তিক সম্মাননা বক্তৃতার মাধ্যমে তাঁর প্রকৃত স্বরূপ চিহ্নিত করে এবং এরই ভিত্তিতে জ্ঞাপন করা হয় যথাযথ সম্মান। সম্মাননা স্মারকের পাশাপাশি লিখিত আকারে বক্তৃতা-পুস্তিকায় চিত্রিত হন সম্মাননা প্রাপ্তগণ। মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এই বুদ্ধিবৃত্তিক-একাডেমিক আবহে ধারাবাহিকভাবে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে, যা কিশোরগঞ্জে তো বটেই, বাংলাদেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। শুরু থেকে সম্মাননা বক্তৃতা প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী ড. মাহফুজ পারভেজ, যিনি কিশোরগঞ্জে পাবলিক লেকচার সিরিজের মাধ্যমে গণবুদ্ধিবৃত্তিক পরিসর তৈরির পথিকৃৎ।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে প্রথম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান শিক্ষাবিদ প্রাণেশ কুমার চৌধুরী, ২০১৬ সালে দ্বিতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান দীপ্তিমান শিক্ষকদম্পতি: অধ্যক্ষ মুহ. নূরুল ইসলাম ও বেগম খালেদা ইসলাম, ২০১৭ সালে তৃতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘প্রজ্ঞার দ্যুতি ও আভিজাত্যের প্রতীক: প্রফেসর রফিকুর রহমান চৌধুরী’ এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘ঋদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র: শাহ্ মাহতাব আলী’। ২০১৯ সালে পঞ্চম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা দেয়া হয় 'স্বাস্থ্যসেবা-শিক্ষায় পথিকৃৎ চিকিৎসক-দম্পতি' প্রফেসর ডা. আ ন ম নৌশাদ খান ও প্রফেসর ডা. সুফিয়া খাতুনকে। ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ প্রদান করা হয় নাসিরউদ্দিন ফারুকী, ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হককে। এ উপলক্ষে ‘কিশোরগঞ্জে আইন পেশার নান্দনিক বিন্যাস’ শীর্ষক সম্মাননা বক্তৃতা বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ প্রদান করা হয়েছে ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু.আ. লতিফ,  মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ ঊষা দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরীকে, যারা কিশোরগঞ্জের সামাজিক ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিন্যাসে স্বকীয় কৃতিত্বের প্রভায় উজ্জ্বল। জীবনব্যাপী কিশোরগঞ্জের মাটি ও মানুষের জন্য শৈল্পিক দ্যোতনায় নান্দনিক বর্ণালী সৃজন করেছেন এই তিন গুণান্বিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ জানান, ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২০ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২১ একসাথে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যা মার্চ মাসের শেষ দিকে আয়োজিত হবে।

;