রিডিফাইনিং ইন্ডিয়া : বাংলা ও ভারতীয় ইতিহাস চর্চায় বহুমাত্রিক পাঠ



ফাহমিদা তাপসী
রিডিফাইনিং ইন্ডিয়া বইয়ের প্রচ্ছদ

রিডিফাইনিং ইন্ডিয়া বইয়ের প্রচ্ছদ

  • Font increase
  • Font Decrease

‘রিডিফাইনিং ইন্ডিয়া’ ভারত ও বাংলার ইতিহাস চর্চায় নবতর সংযোজন। ভারতের ঔপনিবেশিক ও উপনিবেশোত্তর কালপর্বের নানা দিক নিয়ে মোট ১৫টি প্রবন্ধ এ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। প্রবন্ধগুলোতে ঔপনিবেশিক বাংলার ইতিহাস প্রসঙ্গ; মীর মশাররফ হোসেনের সাহিত্য চর্চার বিবর্তন, বাংলার রেশম শিল্পের আধুনিকীকরণে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে। বইটিতে এক মলাটের মধ্যে ভারত ও বাংলার ইতিহাস, লৈঙ্গিক ইস্যু, স্থাপত্য, ধর্ম এবং অর্থনীতি বিষয়ে আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে। বইটি যেমন পাঠক, গবেষকদের কৌতূহল মেটাবে তেমনি আরো নতুন গবেষণার ক্ষেত্র উন্মোচন করবে। পাঠক, শিক্ষার্থী ও গবেষক সবাই গ্রন্থটি থেকে উপকৃত হবেন।

রিডিফাইনিং ইন্ডিয়া বইতে ড. অমিত দে তার প্রবন্ধে দেখিয়েছেন বিংশ শতকের বাংলার ইসলামীকরণ প্রক্রিয়া এবং সে প্রেক্ষিতে বাংলার মুসলমানদের রাজনীতিকরণের ইতিহাস বুঝতে মীর মশাররফ হোসেনের সাহিত্যচর্চার সৃজনশীল থেকে আরোপিত ধারায় বিবর্তন সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

ড. শেখর শীল ঊনিশ শতকের বাংলার সমাজ সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছেন। বেশিরভাগ সংস্কার উদ্যোগই ছিল নারীদের কেন্দ্র করে। কিন্তু সব সংস্কারই শুরু করেছিলেন পুরুষ সংস্কারকরা এবং পুরো যাত্রাতে নারীদের নিজেদের কণ্ঠস্বর প্রায় ছিলই না।

ড. রবের্তো দাভিনি তার প্রবন্ধে দেখিয়েছেন—অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোর্ট অব ডিরেক্টররা বুঝতে পারছিলেন যে বাংলা থেকে আমদানি করা সিল্কের বিক্রি বৃদ্ধি করতে হলে বাংলার প্রথাগত রিলিং পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। তাই বাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতা হাসিল করার পর তারা বাংলার রেশম শিল্পের আধুনিকীকরণে বড় পদক্ষেপ নেয় ও স্থানীয় উৎপাদকদের ওপর ইউরোপীয় পদ্ধতি চাপিয়ে দেয়।

চতুর্থ প্রবন্ধটির লেখক ড. গিরীশ চন্দ্র পাণ্ডে প্রাথমিক ও সেকেন্ডারি উৎস ব্যবহার করে অষ্টাদশ শতকের বেনারসের দস্যু দলগুলোর বিবর্তন এবং তাদের সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক গুরুত্ব আলোচনা করেছেন।

ড. পি এস হরিশ দক্ষিণ ভারতের শ্রীরঙ্গপাট্টানাম দুর্গ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনার প্রেক্ষিত থেকে আলোচনা করেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হায়দার আলী, টিপু সুলতান দুর্গে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটান এবং কৌশলগত অবস্থানে দুর্গটিকে অত্যন্ত শক্তিশালী করে তোলেন যেন ব্রিটিশসহ সব ধরনের বহিঃআক্রমণকে রুখে দেওয়া যায়।

ড. কে. মাভালি রাজন মধ্যযুগে দক্ষিণ ভারতে মন্দিরের নানাবিধ ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন। মন্দিরগুলো ছিল ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র, আশেপাশের মানুষের জীবনের সব বিষয়েরই মূল কেন্দ্র ছিল মন্দির।

ড. সৌরভ কুমার রাই দেখিয়েছেন ঔপনিবেশিক আমলে বায়োমেডিসিনের আধিপত্যের প্রেক্ষাপটে ভারতে আয়ুর্বেদিক ঔষধবিদ্যার ‘অতীত গৌরব’ ফিরিয়ে আনার ধারণা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। আয়ুর্বেদের প্রবক্তা এবং চর্চাকারীরা তাদের চিকিৎসাবিদ্যার গণ্ডি ছেড়ে ‘নেশন’ তৈরির প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন।

শুভনীত কৌশিক আলোচনা করেছেন ১৯৩৮ সালের হেলথ সাব-কমিটি অব ন্যাশনাল প্লানিং কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে। স্বাস্থ্যবীমা, মা শিশুর যত্ন বিষয়ে এই প্রতিবেদন সোভিয়েত রাশিয়া ও ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে প্রেরণা নিয়েছিল।

ড. অনিকেত তথাগত ছেত্রী তার প্রবন্ধে দেখিয়েছেন মঙ্গলকাব্যের পারফর্মিং চরিত্রের কারণেই বাংলায় এর জনপ্রিয়তা বেড়েছিল। মঙ্গলকাব্যের গীত-পালা গ্রামের মানুষের জন্য উপার্জনের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল। একারণেই এই কাব্য রচনায় পণ্ডিত নয় বরং গ্রাম্য বাহ্মণরাই মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল।
মোইচিংমায়ুম মুশতাক আলিশ আইজাজা লিখেছেন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভূভাগের মনিপুরের প্রাণিকূলের বৈচিত্র ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে।

ড. ফখরুল ইসলাম লস্কর ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে আসামের মানুষ কেমন সাড়া দিয়েছিল এবং কিভাবে অংশগ্রহণ করে সে সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছেন। একইসঙ্গে তিনি আন্দোলনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ প্রশাসনের সহিংসতা ও নিষ্ঠুর দমন অভিযানকে নথিপত্র ঘেঁটে তুলে এনেছেন।

শংকর কুমার বসু ও ড. নিরুপম খনিকার আলোচনার সূত্রপাত করেছেন আহোম রাজধানী ঘরগাওয়ের কাছে ধিতাইফুরি গ্রামে পাওয়া মুদ্রাকে কেন্দ্র করে। লেখকদ্বয় সংশ্লিষ্ট শাসনামলে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে আহোম রাজত্বের রফতানি বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন।

শানজিদ অর্ণব তার প্রবন্ধে আলোচনা করেছেন ভারত ও হিন্দুধর্ম নিয়ে প্রাথমিকালে মুসলমানদের ধারণা নিয়ে। আরবরা ভারতের বিজ্ঞান, দর্শন, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞানকে গ্রহণ করেছিল। প্রাথমিককালে ভারতের মুসলমানদের অনেকে ব্রাহ্মণদের জ্ঞানের প্রশংসা করেছেন। লেখক ভারত ইতিহাসের অপেক্ষাকৃত কম আলোচিত এই অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

শ্রেয়া রায় আলোচনা করেছেন ‘নওয়াবদের শহর’ বলে পরিচিত লখনৌ নিয়ে। এই প্রবন্ধে লেখিক ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ পরবর্তী ভারতবর্ষে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে লখনৌ শহরের নগর সংস্কৃতি ও প্রশাসন নিয়ে আলোচনা করেছেন।

বইয়ের সর্বশেষ প্রবন্ধটির লেখক সংযুক্তা দে। তিনি আলোচনা করেছেন বাংলার ধর্মীয় ঐতিহ্য নিয়ে। এই প্রবন্ধে তিনি বাংলার দেবীদের ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত ও অজানা অনেক তথ্য অনুসন্ধান করেছেন।

প্রবন্ধকারগণ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের অধ্যাপক, ইতিহাস গবেষক ও লেখক।

‘রিডিফাইনিং ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস গবেষক রাহুল কুমার মোহন্ত। তিনি ইন্ডিয়ান হিস্টরি কংগ্রেস ও ঢাকার ইতিহাস একাডেমির সদস্য। রাহুল কুমার মোহন্ত ‘এক্সপ্লোরিং বেঙ্গল’ নামেও একটি গ্রন্থের সম্পাদনা করেছেন।
‘রিডিফাইনিং ইন্ডিয়া’ বইটি প্রকাশ করেছে নয়া দিল্লির কুমুদ পাবলিকেশনস। বইটি অ্যামাজন ডট ইনে পাওয়া যাচ্ছে।

অ্যামাজনে বইটির হদিস পেতে এখানে ক্লিক করুন।

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর সম্মাননা পেলেন ছয় কীর্তিমান



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীতকিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর সম্মাননা পেলেন ছয় কীর্তিমান

ছবি: সংগৃহীতকিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর সম্মাননা পেলেন ছয় কীর্তিমান

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিষ্ঠ চিকিৎসক, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আলহাজ্ব ডা. এ. এ. মাজহারুল হক এবং রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ ছয় কীর্তিমানকে সম্মাননা প্রদান করেছে।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকালে কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান।

এতে সম্মাননা বক্তৃতা করেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ।

বক্তব্য রাখছেন ড. মাহফুজ পারভেজ

অনুষ্ঠানে ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননাপ্রাপ্তদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ পেয়েছেন কিশোরগঞ্জের আইনপেশার কৃতীজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হক।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ পেয়েছেন ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, প্রবীণ সাংবাদিক মু আ লতিফ ও আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন এবং প্রয়াত শাহ আজিজুল হকের পরিবারের পক্ষে ভাতিজা এডভোকেট শাহ আশরাফ উদ্দিন দুলাল ও মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবীর পক্ষে তার মেয়ে গৌরি রাণী দেবী সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন।

 এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক বাদল রহমান।


অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলু, বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সমাজকর্মী আবদুর রহমান রুমী, সাংবাদিক শেখ মাসুদ ইকবাল, সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সম্মননা অনুষ্ঠান শেষে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ২০১৫ সাল থেকে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে।

;

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্য রক্ষায় তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা রয়েছে: ড. মাহফুজ পারভেজ



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বক্তব্য রাখছেন ড. মাহফুজ পারভেজ

বক্তব্য রাখছেন ড. মাহফুজ পারভেজ

  • Font increase
  • Font Decrease

বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ও কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন'র নির্বাহী পরিচালক ড. মাহফুজ পারভেজ বলেছেন, 'বাংলার গৌরবদীপ্ত জনপদ কিশোরগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিকাশ ও রক্ষায় তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা রয়েছে।'

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকালে কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম স্মরণ, দোয়া ও ইফতার মাহফিল এবং আনুষ্ঠানিকভাবে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি সম্মাননা বক্তব্য প্রদানকালে আরো বলেন, 'অবক্ষয়, অন্ধকার ও অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে আলোকিত সমাজ গঠনে ইতিহাস-ঐতিহ্যের শিক্ষা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।'

বরিষ্ঠ চিকিৎসক, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আলহাজ্ব ডা. এ. এ. মাজহারুল হক এবং রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ কর্তৃক স্থানীয় ছয় কীর্তিমানকে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার।

মাজহারুন-নূর সম্মাননা অনুষ্ঠান

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান। এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক বাদল রহমান।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলু, কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি আবদুর রহমান রুমী, সাংবাদিক শেখ মাসুদ ইকবাল, সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, মহিলা পরিষদ সম্পাদক আতিয়া রহনান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এতে জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও নানা শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, মহিলা পরিষদ সভাপতি অ্যাডভোকেট মায়া ভৌমিক, সাহিত্য সম্পাদক বাবুল রেজা, ছড়াকার সামিউল হক মোল্লা, ঈসাখাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান বদরুল হুদা সোহেল, কিশোরগঞ্জ নিউজ প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননাপ্রাপ্তদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ পেয়েছেন কিশোরগঞ্জের আইনপেশার কৃতীজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হক।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ পেয়েছেন ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, প্রবীণ সাংবাদিক মু আ লতিফ ও আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন এবং প্রয়াত শাহ আজিজুল হকের পরিবারের পক্ষে ভাতিজা এডভোকেট শাহ আশরাফ উদ্দিন দুলাল ও মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবীর পক্ষে তার মেয়ে অধাপিকা গৌরি রাণী দেবী সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন।

সম্মননা অনুষ্ঠান শেষে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে স্মরণ সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ইফতারের পূর্বে দোয়া পরিচালনা করেন জেলা গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, অ্যাডভোকেট গাজি এনায়েতুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন সংস্কৃতিজন লুৎফুন্নেছা চিনু। অনুষ্ঠানে স্পন্সর হিসাবে যুক্ত ছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড।

প্রসঙ্গত, ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ২০১৫ সাল থেকে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

;

কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান



কনক জ্যোতি,  কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান

কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান

  • Font increase
  • Font Decrease

আন্তর্জাতিক কবিতা দিবসে ছায়ানট (কলকাতা) এবং লা কাসা দে লোস পলিগ্লোতাস যৌথভাবে আয়োজন করে একটি কবিতা সন্ধ্যার। অনুষ্ঠানটি হয় কলকাতায় অবস্থিত একটি স্প্যানিশ রেস্টুরেন্ট তাপাস্তে - তে। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ছায়ানট (কলকাতা)-এর সভাপতি সোমঋতা মল্লিক এবং পরিকল্পনা করেন  লা কাসা দে লোস পলিগ্লোতাস-এর প্রতিষ্ঠাতা শুভজিৎ রায়।

এই বিশেষ দিনে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করা হয় বাংলা এবং স্প্যানিশে। বিশ্ব কবিতা দিবসে কবিতার ভাষায় এক হয়ে যায় বাংলা এবং স্পেন। এক করলেন কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা এবং স্প্যানিশ দুই ভাষাতে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে এই আয়োজন।

বাংলায় কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করেন সৌভিক শাসমল, তিস্তা দে, দেবলীনা চৌধুরী এবং স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ ও পাঠ করেন শুভজিৎ রায়। অনুষ্ঠানটি দর্শকদের প্রশংসা লাভ করে।

বিশ্ব কবিতা দিবস উপলক্ষ্যে ছায়ানট (কলকাতা) এবং কৃষ্ণপুর নজরুল চর্চা কেন্দ্র যৌথভাবে আরও একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শরৎচন্দ্র বাসভবনে। প্রায় ৫০ জন কবি এবং বাচিক শিল্পী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম সহ বিভিন্ন কবির কবিতা এই অনুষ্ঠানে শোনা যায়।

;

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;