হজের ৫ দিনের ধারাবাহিক কাজ ও নিয়মসমূহ



মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
মক্কা নগরী এখন হাজিদের পদচারণায় মুখর/ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

মক্কা নগরী এখন হাজিদের পদচারণায় মুখর/ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মক্কা নগরী (সৌদি আরব) থেকে: ১০ আগস্ট (৯ জিলহজ শনিবার পালিত হবে পবিত্র হজ। এদিন আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হবেন হজপালনকারী আল্লাহর মেহমানরা। হজের উদ্দেশ্যে মক্কা ও মদিনাসহ সৌদি আরবের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৮ জিলহজ (৯ আগস্ট) হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে জোহরের আগেই মিনায় উপস্থিত হবে।

৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত চলবে হজের কার্যক্রম ও আনুষ্ঠানিকতা। হজের ৫ দিনের করণীয়গুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো-

৮ জিলহজ, হজের ইহরাম

মক্কার হারাম শরিফ অথবা বাসা-হোটেল থেকে হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া এবং জোহরের নামাজের আগেই মিনায় পৌঁছা। এখন অবশ্য ৭ তারিখে রাত থেকেই হাজিদের মিনায় নেওয়ার কাজ শুরু হয়।

মিনায় অবস্থান: মিনায় ৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব এবং সেখানে অবস্থান করা সুন্নত।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/07/1565159805219.jpg

৯ জিলহজ, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান

৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে পালিত হবে পবিত্র হজ। নবী করিস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আরাফাই হজ।' তাই ৯ জিলহজ ফজরের পর সম্ভব হলে মিনায় গোসল করে নেওয়া অথবা অজু করে সকাল সকাল আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া।

৯ জিলহজ জোহরের আগেই হজের অন্যতম রোকন পালনে আরাফাতের ময়দানে গিয়ে উপস্থিত হওয়া এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করা। আর এটাই হলো হজের অন্যতম রোকন। ৯ জিলহজ সকালে মিনা থেকে রওয়ানা সময় তাকবির বলা- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে হজের খুতবা শোনা এবং নিজ নিজ তাবুতে জোহর ও আসরের নামাজ নির্দিষ্ট সময়ে আলাদাভাবে আদায় করা। তওবা-ইসতেগফার, তাকবির, তাসবিহ-তাহলিল ও মোনাজাতে কান্নাকাটিতে আত্মনিয়োগ করা।

বিশেষ করে হজের খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং তা বুঝে নিয়ে জীবনের বাকি সময় এ নসিহতের আলোকে জীবন গড়ার দীপ্ত শপথ নেওয়া।

সন্ধ্যায় মাগরিব না পড়ে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া। মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও ইশার নামাজ এক আজানে আলাদা আলাদা ইকামতে একসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আদায় করা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/07/1565159820272.jpg

১০ জিলহজ

মুজদালিফায় অবস্থান: মুজদালিফায় সারারাত খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করা। মুজদালিফায় সুবহে সাদিক পর্যন্ত থাকা সুন্নত। সুবহে-সাদিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত যেকোনো এক মুহূর্ত মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্য উঠার কিছু আগে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া।

পাথর সংগ্রহ: মিনায় জামরাতে (শয়তানকে মারার জন্য) মুজদালিফায় অবস্থানের সময় রাতে কিংবা সকালে কংকর সংগ্রহ করা।

কংকর নিক্ষেপ: ১০ জিলহজ সকালে মুজদালিফা থেকে মিনায় এসে বড় জামরাতে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করা। আর তা জোহরের আগেই সম্পন্ন করা। কংকর নিক্ষেপের স্থানগুলোতে বাংলায় দেওয়া দিক-নির্দেশনা মনোযোগ সহকারে শুনে তা আদায় করা।

কোরবানি করা: বড় জামরাতে কংকর নিক্ষেপ করে মিনায় কোরবানির পশু জবাই করা। এ ক্ষেত্রে যারা ব্যাংকের মাধ্যমে কোরবানি সম্পন্ন করবেন, তারা ব্যাংকের লোকদের কাছ থেকে মাথা মুণ্ডনের নির্দিষ্ট সময় জেনে নেওয়া।

মাথা মুণ্ডন করা: কোরবানির পর পরই মাথা মুণ্ডনের মাধ্যমে হজের ইহরাম থেকে হালাল হবে হাজি। মাথা মুণ্ডনের মাধ্যমে হাজি ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করাসহ সব সাধারণ কাজ করতে পারলেও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে।

১১ ও ১২ জিলহজ, কংকর নিক্ষেপ ও তাওয়াফে জিয়ারত

তাওয়াফে জিয়ারত: হজের সর্বশেষ রোকন হলো- তাওয়াফে জিয়ারত। যা ১১ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে তাওয়াফে জিয়ারত না করতে পারলে দম বা কোরবানি কাফফারা আদায় করতে হবে।

কংকর নিক্ষেপ: ১১ ও ১২ জিলহজ প্রতিদিন মিনায় অবস্থান করবে এবং ধারাবাহিকভাবে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরাতে ৭টি করে ২১টি কংকর নিক্ষেপ করবে। তবে যদি কেউ কংকর নিক্ষেপের আগে কিংবা পরে কাবা শরিফ গিয়ে তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করে তবে তাকে তাওয়াফের পর আবার মদিনায় চলে আসতে হবে এবং মিনায় অবস্থান করতে হবে।

নারী, বৃদ্ধ ও দুর্বলদের কংকর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে রাতের সময় বেচে নেওয়া উত্তম। তবে কংকর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে এখন হজ কর্তৃপক্ষ সময়সূচি নির্ধারণ করে দেওয়া এবং বাংলায় দিক নির্দেশনার ব্যবস্থা করে। সে নির্দেশনা অনুযায়ী মিনায় কংকর নিক্ষেপের সময় জেনে তা পালন করা।

মিনায় রাতযাপন ও ত্যাগ: ১০ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত মিনায় রাতযাপন করা এবং যারা মিনা ত্যাগ করবেন তারা ১২ তারিখ সূর্য ডোবার আগে মিনা ত্যাগ করবেন। সূর্য ডোবার আগে মিনা ত্যাগ করতে না পারলে সে রাত (১৩ জিলহজ) মিনায় অবস্থান করা।

উল্লেখ্য, যদি কেউ ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে মিনা ত্যাগ করতে না পারে কিংবা থাকার ইচ্ছা করে তাকে ১৩ জিলহজ ৭টি করে আরও ২১টি কংকর নিক্ষেপ করতে হবে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১৩ জিলহজও মিনায় অবস্থান করেছিলেন।

বিদায়ী তাওয়াফ

সারাবিশ্ব থেকে আগত সব হজপালনকারীর জন্য দেশে রওয়ানা হওয়ার আগে তাওয়াফ করা আবশ্যক। এ তাওয়াফকে বিদায়ী তাওয়াফ বলে। তবে জিলহজ মাসের ১২ তারিখের পর যেকোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফে হিসেবে আদায় হয়ে যায়।

   

বোরকা নিষিদ্ধ করল সুইজারল্যান্ড



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বোরকা নিষিদ্ধ করল সুইজারল্যান্ড

বোরকা নিষিদ্ধ করল সুইজারল্যান্ড

  • Font increase
  • Font Decrease

সুইজারল্যান্ডের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ গত বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) মুসলিম নারীদের বোরকা পরাসহ মুখ ঢেকে রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা পাস করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। আইনটি ইতিমধ্যে ডানপন্থী পপুলিস্ট সুইস পিপলস পার্টির দখলে থাকা উচ্চ কক্ষে অনুমোদন পেয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনটি ১৫১-২৯ পাশ হয়েছে। বোরকার ওপর নিষেধাজ্ঞার পদক্ষেপটি দুই বছর আগে দেশটিতে হওয়া গণভোটের ফল। যেখানে সুইস ভোটারদের ৫১ শতাংশ নেকাব, বোরকা, সেই সঙ্গে কিছু প্রতিবাদকারীদের পরার স্কি মাস্ক ও ব্যান্ডানার ওপর নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেছিলেন।

নিম্ন কক্ষের অনুমোদনের ফলে নিষেধাজ্ঞাটি এখন ফেডারেল আইনে পরিণত হয়েছে, যা লঙ্ঘন করলে ১ হাজার সুইস ফ্রাঙ্ক (প্রায় ১ হাজার ১০০ ডলার) জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

গণভোটের সময় মুখ ঢেকে রাখা নিষিদ্ধ করার প্রচারণার সমালোচনা করেছিল মুসলিমরা। মুসলিম নারীদের সংগঠন পার্পল হেডস্কার্ফের মুখপাত্র ইনেস এল-শিখ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘সুইজারল্যান্ডে বোরকা পরা মাত্র ৩০ জন নারী রয়েছেন।’

সুইজারল্যান্ডের ইসলামিক সেন্ট্রাল কাউন্সিল বলছে, ভোটে সারা দেশে মুসলিম বিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে পড়ার বার্তাই প্রতিফলিত হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞাটিতে বলা হয়েছে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, পাবলিক স্পেস ও জনসাধারণের প্রবেশযোগ্য ব্যক্তিগত ভবনে নাক, মুখ ও চোখ ঢেকে রাখা যাবে না। যদিও সুইজারল্যান্ডে বোরকা পুরো মুখ ঢেকে সাধারণত পরা হয় না।

এর আগে বেলজিয়াম ও ফ্রান্স অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

সুইজারল্যান্ডে বোরকা নিষেধাজ্ঞায় মুসলিমরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এমনকি বিতর্কিত এই বিলটি নিয়ে সংশয় ও আপত্তি রয়েছে মধ্যপন্থী ও বাম দলগুলোরও।

;

জাতিসংঘে কোরআন অবমাননার নিন্দায় মুসলিম নেতারা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কাতারের আমির শেখ তামিম, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান ও ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমদ রাইসি

কাতারের আমির শেখ তামিম, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান ও ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমদ রাইসি

  • Font increase
  • Font Decrease

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশন চলছে। অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে বাকস্বাধীনতার অজুহাতে পবিত্র কোরআনের কপি পোড়ানোর নিন্দা জানিয়েছেন মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দ। তারা ধর্মীয় গ্রন্থ ও নিদর্শনের অবমাননা রোধ এবং এসবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান।

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তারা এ আহ্বান জানান।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলোতে ইসলামফোবিয়া ও ধর্মীয় বৈষম্য মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। তা এখন অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে অনেক দেশ এমন ভয়ানক কাজে উৎসাহ দিয়ে আগুন নিয়ে খেলা অব্যাহত রেখেছে। যে মানসিকতা বাকস্বাধীনতার আড়ালে ইউরোপে পবিত্র কোরআনের ওপর জঘন্য হামলাকে উৎসাহিত করে, তা মূলত নিজের (ইউরোপ) হাতেই নিজের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিচ্ছে।’

সম্প্রতি ফ্রান্সের স্কুলে হিজাব ও আবায়া পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সরকার। সেই সময় এর প্রতিবাদ জানান এরদোয়ান।

এদিকে বক্তব্যের সময় পবিত্র কোরআন হাতে নিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমদ রাইসি বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলোতে ইসলামফোবিয়া ও সাংস্কৃতিক বর্ণবৈষম্য দেখা যাচ্ছে। সেখানে পবিত্র কোরআনের অবমাননা থেকে শুরু করে স্কুলে বোরকা নিষেধাজ্ঞাসহ অনেক শোচনীয় ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু অশ্রদ্ধার আগুন দিয়ে কখনো ঐশ্বরিক সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না। পশ্চিমা বিশ্ব বাকস্বাধীনতার অজুহাত দেখিয়ে সবার মনোযোগ অন্য দিকে সরাতে চাচ্ছে।’

কাতারের আমির শেখ তামিম জাতিসংঘ বলেন, ‘ইচ্ছাকৃত অন্যের সম্মানিত বিষয়কে অসম্মান করাকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা মনে করা উচিত নয়। আমি মুসলিমদের বলব, কেউ পবিত্র কোরআন পোড়ালে বা অবমাননা করে উসকানির মাধ্যমে আমাদের বোকা বানালে তাদের মাধ্যমে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। পবিত্র কোরআন একটি সম্মানিত গ্রন্থ, বুদ্ধিহীন ব্যক্তি ছাড়া কেউ তা অবমাননা করতে পারে না।’

গত কয়েক মাসে সুইডেন ও ডেনমার্কে ধারাবাহিকভাবে ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন পোড়ানো প্রকাশ্যে ঘটেছে। কিন্তু এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দেশ দু’টির সরকার কোনো ব্যবস্থা না নিলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে আরব ও মুসলিম দেশগুলোতে। মুসলিম দেশগুলোর নেতারা বলছেন, কোরআন মাজিদ পোড়ানো মতপ্রকাশের কোনো মাধ্যম হতে পারে না।

এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানায় মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) ও মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগসহ মুসলিম দেশগুলো।

গত ১২ জুলাই ধর্মীয় বিদ্বেষ রোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে (ইউএনএইচআরসি) একটি প্রস্তাব পাস হয়। সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ধর্মীয় গ্রন্থের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস করা হয়। তাতে এ ধরনের ঘৃণ্য কাজকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল বলা হয়।

ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মরক্কোসহ বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান দেশ কুরআন পোড়ানোর ঘটনার প্রতিবাদে সুইডিশ রাষ্ট্রদূতদের তলব করেছিল। এ নিয়ে ৫৭ সদস্যের অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের জরুরি বৈঠকও হয়।

;

মুমিনের বাসাবাড়ি যেমন হবে



মাওলানা আবদুল আলিম, অতিথি লেখক, ইসলাম
একজন মুমিনের ঘরে অবশ্যই শরিয়ত পালনের পরিবেশ বিদ্যমান থাকবে

একজন মুমিনের ঘরে অবশ্যই শরিয়ত পালনের পরিবেশ বিদ্যমান থাকবে

  • Font increase
  • Font Decrease

একজন মুমিনের বাসাবাড়িতে ইবাদত, জিকির-আজকার, কোরআন তেলাওয়াত থেকে শুরু করে ইবাদত-বন্দেগি পালনের আদর্শ-পরিবেশ থাকবে। কেননা, জিকির থেকে বিমুখ বাসাবাড়িকে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে আল্লাহর জিকির করে আর যে জিকির করে না, উভয়ের উদাহরণ মৃত ও জীবন্ত মানুষের মতো।’ -সহিহ বোখারি : ৬৪০৭

অর্থাৎ যারা আল্লাহর জিকির করে তারা জীবিত আর যারা আল্লাহর জিকির করে না তারা মৃতের মতো। কেননা যারা জীবিত তাদের সব কার্যকলাপ শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্যই হয়, পক্ষান্তরে যারা মৃত তারা কোনো কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না। সুতরাং জীবিত থেকেও আল্লাহর জিকির করেন না তারা মৃতের মতো।

পর্দা ও লজ্জাশীলতার পরিবেশ
একজন মুমিনের ঘরে অবশ্যই শরিয়ত পালনের পরিবেশ বিদ্যমান থাকবে। বিশেষভাবে নামাজ ও হিজাবের উপযোগী পরিবেশ থাকতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমার স্মরণার্থে নামাজ কায়েম করো।’ -সুরা ত্বহা : ১৪

অনুরূপভাবে একজন মুমিনের ঘরে পর্দা ও লজ্জাশীলতার পরিবেশ থাকবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ -সুরা আহজাব : ৫৯

হিজাব পালনের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- নারীরা যথাসম্ভব ঘরে থাকবে। বিশেষ প্রয়োজনে বের হতে হলে শরীর ও সৌন্দর্য জিলবাব দ্বারা এমনভাবে ঢেকে রাখবে যাতে কোনোভাবেই পরপুরুষের সামনে প্রকাশ না পায়।

বাড়িতে দ্বীনি তালিমের ব্যবস্থা
একজন মুমিনের বাড়িতে দ্বীনি তালিম তথা কোরআন–সুন্নাহ, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা–মানহাজ, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সিরাতসহ অন্যান্য জরুরিয়াতে দ্বীনের শিক্ষাদানের পরিবেশ বিদ্যমান থাকবে। যেহেতু মানুষের প্রাথমিক শিক্ষাগার ও প্রশিক্ষণ স্থান হলো ঘর। তাই পিতামাতা যাতে সন্তানদের এবং স্বামী যাতে স্ত্রীকে হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে শেখায় এবং ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে, ইসলাম সেদিকে তাদের দৃষ্টি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।’ -সুরা তাহরিম : ৬

বর্ণিত আয়াতের অর্থ হজরত আলী (রা.) এভাবে করেছেন, ‘তোমরা নিজেরা শেখো এবং পরিবারবর্গকে শেখাও সমস্ত কল্যাণময় রীতিনীতি এবং তাদের আদব শিক্ষা দাও এবং এসব কাজে অভ্যস্ত করে তোল।’ -আল্লামা শাওকানি, ফাতহুল কাদির : ৫/২৪৬

মেহমানদের যত্ন করা
মানুষ থাকলে তার আত্মীয়-স্বজন থাকবে। বাড়িতে মেহমানও আসবে। তাই মেহমানের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহে রাখা জরুরি। প্রকৃত মুমিনের বাড়িতে অবশ্যই মেহমানদারির ব্যবস্থা থাকবে। সেই সঙ্গে আরেকটা বিষয়ের প্রতি তাকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, তার দ্বারা তার প্রতিবেশিরা যেন কষ্ট না পায়। কেননা, হজরত রাসুলুল্লাহ (সাল.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর যে আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানের সম্মান করে। -সহিহ বোখারি : ৬০১৮

ঘর একটু বড় হওয়া
মুমিনের বসবাসের ঘর প্রশস্ত ও বড়োসড়ো হওয়া উচিত। তবে অবশ্যই তা সামর্থানুপাতে হবে। কারণ তাতে ইবাদতের জায়গা, হিজাবের সুব্যবস্থা ও মেহমানদারীর সুযোগ থাকতে হবে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সৌভাগ্যের বিষয় চারটি- সতীসাধ্বী স্ত্রী, প্রশস্ত বাড়ি, সৎকর্মশীল প্রতিবেশী ও আরামদায়ক বাহন।’ -সহিহ আত তারগিব : ২/৬৮৮

ঘর নির্মাণে প্রতিযোগিতা ও অহংকার না করা
একজন মুমিন বাসাবাড়ি নির্মাণে অবশ্যই প্রতিযোগিতা ও অহংকার পরিহার করবে। বাড়িঘর, অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা কাম্য নয়। হজরত জিবরাইল (আ.) কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দাসী তার আপন মুনিবকে প্রসব করবে, তুমি আরো দেখতে পাবে- নগ্নপদ বিবস্ত্র হতদরিদ্র মেষ রাখালেরা বড় বড় দালান-কোঠা নিয়ে গর্ব ও অহংকার করবে।’ -সহিহ মুসলিম : ৮

বিসমিল্লাহ বলে প্রবেশ করা
মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো, বাড়িতে প্রবেশের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। কেননা, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে ও খাবার গ্রহণকালে আল্লাহর নাম স্মরণ করলে শয়তান (তার সঙ্গীদের) বলে, তোমাদের রাত্রি যাপন ও রাতের আহারের কোনো ব্যবস্থা (এ ঘরে) হলো না; কিন্তু কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমরা রাত্রি যাপনের জায়গা পেয়ে গেলে। আহারের সময় আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমাদের রাতের আহার ও শয্যা গ্রহণের ব্যবস্থা হয়ে গেল।’ -সহিহ মুসলিম : ২০১৮

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহর জিকির করে আর যে জিকির করে না, উভয়ের উদাহরণ মৃত ও জীবন্ত মানুষের মতো

 বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ও বিসমিল্লাহ বলা
একজন মুমিন ঘর থেকে বের হওয়ার সময়ও ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। কেননা, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে, বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ’, তবে তাকে বলা হয়- তুমি হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছো, (আল্লাহতায়ালা) তোমার জন্য যথেষ্ট, তুমি হেফাজত অবলম্বন করেছো (অনিষ্ট থেকে)। তাতে শয়তান তার থেকে দূরে সরে যায়। -সুনানে তিরমিজি : ৩৪২৬

ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দেওয়া
একজন মুমিন ঘরে প্রবেশকালে সালাম দেবে। কেননা, সালাম দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তবে যখন তোমরা কোনো ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা পরস্পরের প্রতি সালাম করবে অভিবাদনস্বরূপ যা আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্ৰ।’ -সুরা আন নুর : ৬১

এই আয়াতের আলোকে, নিজ ঘরে অন্যের ঘরে প্রবেশের কিছু আদব বর্ণনা করা হয়েছে। তা হলো- ঘরে প্রবেশের সময় বাড়ির লোকদেরকে সালাম দেওয়া। মানুষ নিজের স্ত্রী-সন্তানদেরকে সালাম দেওয়াকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে। কিন্তু ইমানদার ব্যক্তির জন্য জরুরি আল্লাহর আদেশ পালন করে সালাম দেওয়া। নিজের স্ত্রী-সন্তানদের শান্তির দোয়া দেওয়া থেকে কেন বঞ্চিত রাখা হবে?

রাতে ও সন্ধ্যায় বাসায় এই বিষয়গুলো পালন করা
একজন মুমিন শয্যা গ্রহণের সময় দরজা বন্ধ করবে, আগুন (চুলা) নিভিয়ে নিবে ও খাবার পাত্র ঢেকে রাখবে। ঘুমানোর আগে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এ জাতীয় কিছু কাজ করতে বলেছেন, প্রত্যেক পরিবারের জন্য তা মেনে চলা জরুরি। কেননা এতে বহু উপকারিতা রয়েছে।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন সন্ধ্যা হয়, তখন তোমাদের সন্তানদের ঘরে আটকে রাখো। কেননা এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু অংশ অতিক্রম করলে তখন তাদের ছেড়ে দিতে পারো। আর ঘরের দরজা বন্ধ করবে। কেননা শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আর তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের মশকের মুখ বন্ধ করবে এবং আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের পাত্রগুলোকে ঢেকে রাখবে, কমপক্ষে পাত্রগুলোর ওপর কোনো বস্তু আড়াআড়ি করে রেখে দিয়ো। আর (শয্যা গ্রহণের সময়) তোমরা তোমাদের প্রদীপগুলো নিভিয়ে দেবে।’ -সহিহ বোখারি : ৫৬২৩

;

শরিয়া ব্যাংকিং বিভাগ প্রতিষ্ঠার দাবিতে আইনি নোটিশ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন

বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন

  • Font increase
  • Font Decrease

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে শরিয়া ব্যাংকিং বিভাগ প্রতিষ্ঠার দাবিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশে শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।

নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ‘দ্য বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২’ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ওই আইনের ধারা ৭এ (এফ) অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ হলো- সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করা। বাংলাদেশে দুই ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। এর একটি হলো- সুদভিত্তিক কনভেনশনাল ব্যাংকিং, আর অপরটি ইসলামি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং। বাংলাদেশে ১০টি পূর্ণাঙ্গ শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক রয়েছে। এ ছাড়া ১১টি প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২৩টি ইসলামি ব্যাংকিং শাখা এবং ১৩টি প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৫১১টি ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডো শরিয়াভিত্তিক আর্থিক পরিষেবা দিয়ে থাকে।

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ ও ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞদের বিস্তর অভিযোগ আছে, বাংলাদেশে প্রচলিত ইসলামি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে শরিয়া অনুসরণ করছে না। তারা মূলত বাংলাদেশের আপামর মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে ব্যবসা করছে। এগুলোর তদারকির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো শরিয়া ব্যাংকিং বিভাগ নেই। এ ছাড়া শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রোডাক্টগুলো যাচাই-বাছাই করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো শরিয়া বোর্ডও নেই। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক এদেশের শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও তদারকিতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক তার আইনি কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছে।

নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে পৃথক শরিয়া ব্যাংকিং বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নিজস্ব শরিয়া বোর্ড গঠন করতে হবে। অন্যথায় এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে বাংলাদেশ সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করা হবে।

;