দৌলতদিয়ায় গড়ে উঠেছে দেড় শতাধিক অবৈধ বোর্ডিং
দেশের সর্ববৃহৎ যৌনপল্লি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া পতিতাপল্লিকে কেন্দ্র করে ব্যাঙের ছাতার মতো অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় দেড় শতাধিক আবাসিক হোটেল ও বোর্ডিং। যার বেশিরভাগ বোর্ডিংই স্থাপিত হয়েছে দৌলতদিয়া ঘাট রেল স্টেশনের জায়গা দখল করে।
কোনো নিয়মনীতি না থাকায় এ সকল বোর্ডিংয়ে চলছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। প্রশাসনের তেমন কোনো নজরদারি না থাকায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে বোর্ডিংয়ের কর্ণধাররা। দাগি অপরাধীরা এখানে এসে নির্ভয়ে আত্মগোপনে থাকছেন দিরে পর দিন। তবে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বোর্ডিংগুলোতে যাতে কোনো ধরনের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা না করতে পারে সে বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এনিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রবিউল ইসলাম।
তবে বোর্ডিং মালিকদের দাবি, বোর্ডিংগুলোতে কোনো খারাপ বা অবৈধ কার্যক্রম চলে না। উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা গরিব মানুষেরা সারাদিন কাজ করে এখানে এসে রাত্রিযাপন করেন। কারণ এখানে খুবই অল্প টাকায় তারা খেতে ও থাকতে পারেন।
সরেজমিন দেখা যায়, দৌলতদিয়া ঘাট স্টেশনের দুই পাশে গড়ে উঠেছে এ সকল আবাসিক হোটেল ও বোর্ডিং। ইচ্ছামতো রেলের জায়গা দখল করে ঘর তুলে চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা। আর দৌলতদিয়া পতিতাপল্লির প্রধান গেটের দুপাশেই রয়েছে বোর্ডিং। ব্যবসার পাশাপাশি সেগুলোতে দিন-দুপুরেই চলছে মাদকসহ নারী ব্যবসা। প্রায়ই এখানকার সকল বোর্ডিং থেকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। যাদের বেশিরভাগই অজ্ঞাত। তাৎক্ষণিকভাবে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশের।
বোর্ডিংয়ের আড়ালে মাদক ও নারী ব্যবসার কথা অস্বীকার করে দৌলতদিয়া ঘাট রেল স্টেশন আবাসিক সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল কাসেম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'এখানে কোনো ধরনের মাদক ও নারী ব্যবসা করা হয় না। তবে আমরা এতদিন যে অনিয়ম করেছি সেটা হলো আমাদের এখানে কেউ রাত্রিযাপন করলে আমরা তাদের কোন ঠিকানা এন্ট্রি করতাম না। যে আসত তাকেই থাকতে দিতাম। তবে বর্তমান গোয়ালন্দ ঘাটের ওসি আমাদের সবাইকে ডেকে বলেছেন, যারাই থাকুক না কেন তাদের সম্পূর্ণ ঠিকানা রেজিস্ট্রার খাতায় লিপিবদ্ধ করতে হবে। এখন থেকে আমরা সবাই এ কাজটি করছি।'
তিনি দাবি করেন, তারা রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ঘর উত্তোলন করেছেন। কিন্তু অনেকেই এ সময় লিজের বৈধ কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি।
দৌলতদিয়া ঘাট স্টেশনের মাস্টার আব্দুল গণি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রবিউল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'মূলত পতিতাপল্লিকে কেন্দ্র করেই এ সকল বোর্ডিং গড়ে উঠেছে। এরা কোনো নিয়মকানুন মানত না। ইতোমধ্যে আমরা সবাইকে ডেকে বলেছি, সবাইকে আইনের মধ্যে থেকে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।'
রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'দৌলতদিয়া ঘাটের চিত্র আমি পাল্টে দেব। আপনারা দেখেছেন, ঘাটকে কেন্দ্র করে এতদিন যে দালালচক্র ছিল তা কিন্তু এখন আর নেই। এরই মধ্যে আমি ঘাটকে সিসি ক্যামেরার আওতায় এনেছি। ঘাটে কোনো রকম অরাজকতা কাউকে করতে দেব না।'
তিনি আরও বলেন, 'দৌলতদিয়া পতিতাপল্লিকে ঘিরে যারা এতদিন অবৈধ টাকা আয় করেছেন এখন তারা আর সেটি করতে পারবেন না। দৌলতদিয়া রেল স্টেশনে যে বোর্ডিং আছে তাদের কোনো রেজিস্ট্রার খাতা ছিল না। যার কারণে অনেক দাগি অপরাধীই এখানে এসে আত্মগোপনে থাকত। আমি স্পষ্ট সবাইকে বলে দিয়েছি, তোমাদের রেজিস্ট্রার খাতা থাকতে হবে এবং যেই থাকুক না কেন তার সকল পরিচয় রেজিস্ট্রার খাতায় লিপিবদ্ধ করতে হবে।'