মফস্বল থেকে হারিয়ে গেছে 'খড়ের গাদা'
মফস্বল ও গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে একসময় গরু পালন করা হতো। আর গরুর খাবারের জন্য সেসব বাড়িতে 'খড়ের গাদা' তৈরি হতো। এখনও গ্রামের বেশ কিছু বাড়িতে খড়ের গাদা দেখা যায়। তবে মফস্বল শহরে দেখা মেলা ভার। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঐতিহ্যবাহী এই খড়ের গাদা এখন বিলুপ্তির পথে।
একসময় লক্ষ্মীপুর পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে বিভিন্ন বাড়ির সামনে খড়ের গাদা দেখা যেতো। কিন্তু এই ঐতিহ্যবাহী খড়ের গাদা দেখতে এখন ছুটতে হয় গ্রামে। আর গরু পালন কমে যাওয়ায় গ্রামেও খড়ের গাদা কমে যাচ্ছে। কিছুদিন পর হয়তো গরুর খামার ছাড়া আর কোথাও খড়ের গাদা দেখা যাবে না।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরবংশী গ্রামে কয়েকটি বাড়ির সামনে খড়ের গাদা দেখা যায়। এক বাড়ির সামনে সারিবদ্ধ চারটি খড়ের গাদা রয়েছে। তবে ওই বাড়িগুলো গরু ব্যবসায়ীদের। অনেক কৃষকের বাড়ির সামনেও খড়ের গাদা তৈরি করা হয়। মফস্বল শহরে এখনও যারা গরু পালন করছে, তাদের ভরসা খৈল-ভুসি আর ঘাস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আউশ-আমন-বোরো এই তিন মৌসুমে ধান কাটার পরেই কৃষক থেকে খড় কিনেন গরু ব্যবসায়ীরা। পরে গাদা তৈরি করার জন্য ওই খড় শুকানো হয়। এরপর বাঁশ কিংবা কোনো গাছ মাঝখানে দাঁড় করিয়ে পিরামিডের মতো চারপাশে খড় দিয়ে গাদা তৈরি করা হয়। নিপুণভাবে তৈরি করা এই গাদা থেকে খড় নিয়ে পরবর্তীতে গরুকে খাওয়ানো হয়। আবার মাঝে মাঝে দেখা যেতো খড় খাওয়ার জন্য গাদার কাছেই গরু বেঁধে রাখা হতো।
পৌর শহরের ব্যবসায়ীরা এখন গ্রামে খামার করে গরু পালন করেন। কারণ পৌর শহরে গরু পালনের পরিবেশ নেই। গ্রামে খড়-খৈল-ভুসির পাশাপাশি ঘাস পাওয়া যায়। এজন্য গরু পালনেও সুবিধা হয়।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সমসেরাবাদ এলাকার খোরশেদ আলম বলেন, কয়েকবছর হলো গরু পালন বন্ধ করে দিয়েছি। গরু পালন আমার শখ ছিলো। কিন্তু গরুর গোয়ালের কারণে আশপাশের মানুষের সমস্যা হতো। আর খড়ের গাদা তৈরির জায়গা ছিলো না। এজন্য গরুর খাবার দিতে সমস্যা হতো। আগের মতো ঘাসের মাঠও নেই যে সেখান থেকে গরুর খাবার জুটবে। খৈল, ভুসি খাইয়ে গরু পালন কষ্টসাধ্য। কারণ এসবের দাম বেশি পড়ে।
রায়পুরের গরু ব্যবসায়ী আবুল বাসার বলেন, গরুর খাবারের জন্য খড় সবচেয়ে ভালো। এজন্য প্রতি ধানের মৌসুমেই আমাদের খড় কিনতে হচ্ছে। আর গাদা তৈরি করেই খড় সংরক্ষণ করতে হয়। যার কারণে গরু ব্যবসায়ীদের খামার কিংবা বাড়ির সামনে খড়ের গাদা দেখা যায়। কিন্তু আগের মতো বাড়িতে বাড়িতে গরু পালন কমে গেছে।