দর্শনার্থী বাড়ছে মীর মশাররফের সমাধিস্থলে

  • সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজবাড়ী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র দর্শনে স্কুল শিক্ষার্থীরা, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র দর্শনে স্কুল শিক্ষার্থীরা, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে বাংলা সাহিত্যের অমর দিকপাল কালজয়ী উপন্যাস 'বিষাদ-সিন্ধু'র রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের সমাধিস্থল মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র। এরপর থেকেই দর্শনার্থী, বইপ্রেমী ও পাঠক শূন্যতায় ভুগছিল কেন্দ্রটি।

শুরুর দিকে দর্শনার্থীর উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও ২০১৮ সাল থেকে ব্যাপকহারে বাড়তে থাকে দর্শনার্থীর সংখ্যা। বাংলা একাডেমির এক কর্মকর্তার যোগদানের পর কমপ্লেক্সটির শোভাবর্ধনের কাজসহ কিছু ব্যতিক্রম উদ্যোগ গ্রহণ করার ফলে এখন প্রতিদিনই বাড়ছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। স্মৃতিকেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতিদিন প্রায় ২০০-৩০০ দর্শনার্থী আসেন কেন্দ্রটিতে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে স্মৃতিকেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির সমৃদ্ধিকল্পে বাংলা একাডেমি বহুমাত্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলা একাডেমির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্মৃতিকেন্দ্রটি যুগপৎভাবে সমৃদ্ধি ও প্রসার লাভ করেছে। মূল গেট দিয়ে প্রবেশের পর কেন্দ্রটিতে যাওয়ার জন্য যে রাস্তা রয়েছে তার দুপাশে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। আর ল্যাম্পপোস্টের গায়ে মীর মশাররফ হোসেনের রচনাবলীকে দর্শনার্থীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর বিভিন্ন উপন্যাস ও নাটক সম্পর্কে ছোট ছোট বিলবোর্ড তৈরি করে লাগিয়ে রেখেছে।

বালিয়াকান্দি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী জীম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'আমরা যারা শিক্ষার্থী আছি, তারা মীর মশাররফ হোসেন সম্পর্কে ততটা জানি না। এখানে প্রবেশের পর ল্যাম্পপোস্টের গায়ে তাঁর সাহিত্যের যে বিলবোর্ডগুলো লাগানো হয়েছে, তা সত্যি আমাদের অনেক কাজে লাগবে। কর্তৃপক্ষের এই ব্যতিক্রম উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।'

বিজ্ঞাপন
মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র
সৌন্দর্য বাড়ানো হয়েছে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রের, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুন্সী আমীর ও দফতর গবেষণা সম্পাদক চৌধুরী রফিকুন্নবী টিটো বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'মীর মশাররফ হোসেনের সাহিত্যকর্মের সঙ্গে পাঠক ও দর্শনার্থীদের পরিচয় করানোর জন্য এবং মীর সম্পর্কে তাদের অবগত করার জন্য কর্তৃপক্ষ যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। মীরের সৃষ্টিকর্ম নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে বাংলা একাডেমি আরও উদ্যোগী হবেন এমনটাই প্রত্যাশা করছি আমরা।'

বাংলা একাডেমির প্রোগ্রাম অফিসার ও স্মৃতিকেন্দ্রটির দায়িত্বরত কর্মকর্তা শেখ ফয়সল আমিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতি ও তার সৃষ্টিকর্মকে পাঠকদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য বাংলা একাডেমি কেন্দ্রটি স্থাপন করে। যা ২০০১ সালে উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে স্মৃতিকেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে ২০০-৩০০ দর্শনার্থী আসছেন। আর দর্শনার্থীদের জন্য এখানে একটি সমৃদ্ধশালী লাইব্রেরি রয়েছে। যাতে এক হাজার ২৫১টি বই রয়েছে। লাইব্রেরিটি পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত। এখানে বসেই তারা বই পড়তে পারবেন।'

উল্লেখ্য, ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার গৌর নদীর তীরে লাহিনীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন মীর মশাররফ হোসেন। বাবার নাম সৈয়দ মীর মুয়াজ্জম হোসেন ও মা দৌলতন নেছা। ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর এখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। তার সমাধিস্থলেই রয়েছে তার ভাই মীর মোকাররম হোসেন ও দুই স্ত্রী বিবি খোদেজা বেগম ও বিবি কুলসুমের কবর।

তাঁর লেখা উপন্যাস 'উদাসী পথিকের মনের কথা' (১৮৯০), 'গাজী মিয়ার বস্তানী', 'জমিদার দর্পণ' (১৮৭৩), আত্মকাহিনীমূলক রচনাবলী 'আমার জীবনী', 'বিবি কুলসুম' (১৯১০) সহ বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, প্রবন্ধ ও ধর্মবিষয়ক ৩৭টি বই বাংলা সাহিত্যের অমর সৃষ্টি।