জন্মভূমি সাজানোর স্বপ্ন পূরণ হলো না স্যার ফজলে হাসান আবেদের
স্যার ফজলে হাসান আবেদ বিশ্বের সর্ববৃহৎ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ব্র্যাক’ এর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কামালকানি গ্রামে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সৈয়দা সুফিয়া খাতুন এবং সিদ্দিক হাসানের দ্বিতীয় সন্তান স্যার ফজলে হাসান আবেদ।
বাল্যকাল থেকেই প্রচণ্ড মেধাবী ও আবেগপ্রবণ মানুষ ছিলেন তিনি। অসহায় মানুষের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে পারতেন না। তাইতো অসহায় মানুষের কথা বিবেচনা করে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ব্র্যাক।
জন্মভূমি বানিয়াচং উপজেলার মার্কুলী থেকে ব্র্যাকের কার্যক্রম শুরু হয়। সেই ব্র্যাক এখন বিশ্বের সর্ববৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। শত কোটি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেশে-বিদেশে কৃতিত্ব অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্মানস্বরূপ প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদকে ‘স্যার’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
এই ফজলে হাসান আবেদ শতকোটি মানুষকে চোখের জলে ভাসিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। শুক্রবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শনিবার তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় জনশূন্য বাড়ি অত্যন্ত নীরব-নিভৃত। শোকে স্তব্ধ চারপাশ। বাড়ির সামনে এলাকাবাসী অশ্রুসিক্ত নয়নে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা জানেন প্রিয় স্যার ফজলে হাসান আবেদকে শেষ দেখা দেখতে পারবেন না তারা।
তার পরিবার ও এলাকাবাসী জানান, স্যার ফজলে হাসান আবেদ অসহায় মানুষের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে পারতেন না। মুক্তিযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশ দেখে তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। কোনো উপায় না পেয়ে ১৯৭২ সালে লন্ডনের প্লটটি বিক্রি করে প্রতিষ্ঠা করেন ব্র্যাক। নিজ জন্মভূমি বানিয়াচংয়ে মানুষের জন্য ঘর তৈরি, কিছু খাবার ও জেলেদের জন্য মাছ ধরার জাল দিয়ে সহযোগিতা শুরু করেন। পরবর্তীতে এর বিস্তর শুধু নিজ জন্মভূমিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এখন দেশ-বিদেশের শত কোটি মানুষের ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে ব্র্যাক।
দেশ-বিদেশ জয় করার পর ফজলে হাসান আবেদ নিজ জন্মভূমির জন্য আলাদা কিছু করতে চেয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নাজমুল হাসান জাহেদ নামের একটি একাডেমির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। যেটিকে তিনি এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
স্যার ফজলে হাসান আবেদের ভাই কামরুল হাসান ও ভাতিজা তাওহিদ হাসান বলেন- ‘দেশ বিদেশের মানুষের জন্য তিনি অনেক কিছু করেছেন। শেষ সময়ে এসে জন্মভূমির জন্য তিনি আলাদাভাবে কিছু করতে চেয়েছিলেন। তিনি নাজমুল হাসান জাহেদ নামে একটি একাডেমির উন্নয়ন কাজ দেখার জন্য গত মাসে এলাকায় এসেছিলেন।’
তারা জানান- বানিয়াচংয়ে একটি চক্ষু হাসপাতাল করতে চেয়েছিলেন তিনি। যেখানে বিনামূল্যে চোখের লেন্স প্রদানের পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু সেই আশা পূরণ হওয়ার আগে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি।
ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মী শেখ গিয়াস উদ্দিন বলেন- ‘উনি অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের কথা বিবেচনা করে তিনি ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি সব সময় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাইতেন।’
তিনি বলেন- লন্ডনে বিশাল বাড়ি বিক্রি করে তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। অথচ তিনি নিজে থেকেছেন ছোট একটি ঘরে। এমন মানুষ পৃথিবীতে পাওয়া দায়।’
ফজলে হাসান আবেদের প্রতিবেশী ডা. শফিকুর রহমান ঠাকুর বলেন- ‘আমরা এলাকাবাসী ওনাকে নিয়ে গর্ব করি। তিনি আমাদের নিয়ে সব সময় চিন্তা করতেন। কিন্তু আজ তিনি আমাদের মধ্যে নেই। তিনি এলাকাবাসীর উন্নয়নের জন্য অনেক পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু জানি না এখন আর সেটি হবে কি না।’