হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে জমজমাট জুয়ার আসর
হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে জমে উঠেছে জমজমাট জুয়ার আসর। এদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হবে যেন, একেকটি মিনি ক্যাসিনো। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এই জুয়ার আড্ডা।
বিভিন্ন স্থান থেকে আসা উঠতি বয়সী যুবক থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগ দেন জুয়ার আড্ডায়। ভয়ঙ্কর বিষয় হলো জুয়ায় আড্ডায় স্কুল পড়ুয়া কিশোররাও আসে। আবার জুয়া খেলার পাশাপাশি চলে রাতভর মাদকসেবন। জুয়াড়িদের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের। প্রতিবাদ করেও মিলছে না কোনো প্রতিকার। তবে প্রশাসন বলছে জুয়া ও মাদক নিরাময়ে নিয়মিত টহল দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল, তেঘরিয়া, গোপায়া, লুকড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিরাতেই বসে জুয়ার আসর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জুয়ায় আসক্ত পইল ইউনিয়ন। ঘর-বাড়ি ছাড়াও হাওরে জমে জুয়ার আড্ডা। পইল ইউনিয়নের গড়ের পাড় বুরুছতলা, লামা পইল, এড়ালিয়া মাঠের পাশের একটি বাড়ি ও খালের পাশে, তেঘরিয়া ইউনিয়নের পাঁচফাড়িয়া স্যুচগেট, ভাদৈ, নদীর চর, লুকড়া ইউনিয়নের চাঁন্দপুর, গরুবাজার এলাকায় জুয়ার আসর বসে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এদিকে, জেলার শায়েস্তাগঞ্জকে অনেকে জুয়া ও মাদকের অভয়ারণ্য বলে থাকেন। এই উপজেলার অধিকাংশ গ্রামেই বসে জুয়ার আসর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতায় সেখানে জুয়া ও মাদকের সয়লাব হ্রাস পেলেও এখনও অনেক স্থানে নিরাপদেই চলে জুয়ার আড্ডা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, শায়েস্তাগঞ্জ রেল জংশন, নিজগাঁও, শাহজী বাজার, অলিপুরের কলোনি ও বিভিন্ন টিলার উপরে তিন তাস, ওয়ানটেন, চক্রবোর্ড, গাফলাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে রাতভর চলে জুয়ার জমজমাট আসর।
জুয়াড়িদের বিচরণ থেকে পিছিয়ে নেই চুনারুঘাটও। উপজেলার উবাহাটা, নতুনব্রিজ গোলচত্বর এলাকার বেশ কিছু বাসা-বাড়ি ও হোটেল, বিভিন্ন চা বাগানে নিয়মিত নির্ভয়েই বসে জুয়ার আসর।
জানা গেছে, জেলার প্রতিটি জুয়ার আসরেই বিভিন্ন স্থান থেকে যুবক থেকে শুরু করে মধ্য বয়সীরা পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেন। প্রশাসন ট্যাকেল দেওয়ার নামে প্রতিটি জুয়ার আসর থেকে মাসোয়ারা নিচ্ছেন সুশীল সমাজের পরিচয়ধারী এক শ্রেণির অসাধু গোষ্ঠী। যাদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, সমাজসেবক, নামধারী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যরাও জুয়াড়িদের কাছ থেকে মাসোয়ার নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ সমস্ত অনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অনাগত ভবিষ্যৎ। বিভিন্ন স্থানে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে পড়ছেন জুয়া ও মাদকের দুনিয়ায়। জুয়া ও মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে মা-বাবাকে নির্যাতন, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই পর্যন্ত করছে এসব শিক্ষার্থীরা। তাদের উৎপাতে বাড়ির আঙ্গিনায় ফলানো শাক-সবজি ও মাছ পর্যন্ত রাখতে পারছেন না অনেকে।
সম্প্রতি জেলার বাহুবল উপজেলার কটিয়াদি এলাকায় পাঁচ স্কুল পড়ুয়া কিশোর জুয়া খেলার টাকার জন্য এক ব্যক্তির পুকুরের মাছ রাতে আধারে শিকার করে বিক্রি করে দেয়। পরে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় অভিযুক্ত পাঁচ যুবককে।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হাসান বলেন, 'চুনারুঘাটে কোনো জুয়ার আসর বসে না। যদি কোথাও বসে তাহলে ওই এলাকার যে কোনো একজন ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ সাথে সাথে ব্যবস্থা নিবে।'
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, জুয়াড়ি ধরতে পুলিশ প্রশাসন সব সময় অভিযান চালাচ্ছে। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।'