হাওরের নারীদের ‘সুতার বোতাম’ যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে

  • কাজল সরকার,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,হবিগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দৌলতপুরের নারীরা তৈরি করছে বোতাম/ ছবি: বার্তা২৪.কম

দৌলতপুরের নারীরা তৈরি করছে বোতাম/ ছবি: বার্তা২৪.কম

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার প্রত্যন্ত হাওর অঞ্চলের গ্রাম দৌলতপুরের বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম। তিন মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে অভাবের সংসার। অভাব অনটনের কারণে তিন বছর আগেও দিশেহারা ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এই ব্যক্তি। কিন্তু সুতা দিয়ে বোতাম তৈরি করে এখন ভাগ্য ঘুরিয়েছেন তার তিন মেয়ে। বড় মেয়ে শুভা আক্তার অনার্স ও বাকি তিন ছেলে-মেয়ে পড়ছেন হাইস্কুলে।

শুধু তৌহিদুল ইসলামের পরিবারই নয়, সুতা দিয়ে বোতাম তৈরি করে ওই গ্রামের অন্তত ৫শ’ পরিবারের হাল ধরেছেন নারীরাই। পাশাপাশি লেখাপড়া করে নিজেরাও হচ্ছেন শিক্ষিত। স্বপ্ন দেখছেন দেশের জন্য বিশাল কিছু করার।

বিজ্ঞাপন

তাদের তৈরি বোতাম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে রফতানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাইয়ে। মান ভালো ও দাম কম হওয়ায় দুবাইয়ে এর চাহিদা অনেক বেশি। তবে তাদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সেগুলো দূর করলে আরও ভালো করতে পারবেন বলে দাবি উদ্যোক্তাদের।

তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়- এক সময় দৌলতপুর গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই অসচ্ছল ছিল। গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি তারা দিনে অন্তত একশ’ থেকে দেড়শ’ বোতাম তৈরি করতে পারেন। সেই সাথে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও লেখাপড়ার পাশাপাশি দিনে ৫০/৭০টি বোতাম তৈরি করতে পারেন। প্রতিপিস বোতাম বিক্রি হয় এক টাকা করে। সেই হিসেবে একজন নারী মাসে অন্তত ৪/৫ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। আর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার বোতাম তৈরি করতে পারে।

বিজ্ঞাপন
নারীরা সুতার বোতাম তৈরি করছেন/ ছবি:বার্তা২৪.কম

এ ব্যাপারে তৌহিদুল ইসলাম বলেন- আমার তিন মেয়ে বোতাম তৈরি করে সংসারের হাল ধরেছে। এখন আমি এখন ভালো চলছি। তবে বোতাম তৈরি ও রফতানি করতে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। সরকারি উদ্যোগে উন্নত প্রশিক্ষণ ও স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করলে অনেক ভালো হত।

কলেজছাত্রী শুভা আক্তার বলেন- বোতাম তৈরির সুতা বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। যারা বিদেশ থাকেন তারা আমাদেরকে সুতা পাঠান। যদি সরকার আমাদেরকে সুতা এনে দেয়ার ব্যবস্থা করত তাহলে আমরা আরও লাভবান হতাম।

সাবেক ইউপি সদস্য (মেম্বার) ও বাজার কমিটির সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, বোতাম তৈরিতে তাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। যেমন- কোন প্রশিক্ষণ না পাওয়ার কারণে অনেক সময় কিছু কিছু বোতাম নষ্ট হয়ে যায়। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই তাদের উন্নত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি বলেন- বোতামের কাঁচামাল দেশের বাইরে থেকে আনতে হয়। এ সময় ঢাকা এয়ারপোর্টে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয়।

হবিগঞ্জ বিসিক শিল্প নগরীর প্রটোকল অফিসার মো. নাজমুল হোসাইন বার্তা২৪.কম-কে বলেন- যে কোনো উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারি ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। উদ্যোক্তারা আবেদন করলে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।