বাড়িওয়ালার পকেটে শ্রমিকের বছর শেষে বৃদ্ধি হওয়া বেতনের টাকা

  • মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জীবিকার টানে ছুটে আসা পোশাক শ্রমিকেরা/ছবি: বার্তা২৪.কম

জীবিকার টানে ছুটে আসা পোশাক শ্রমিকেরা/ছবি: বার্তা২৪.কম

ভাগ্য বদলের জন্য কিংবা একটু ভালো থাকার আশায় বাবা-মা, ভাই-বোন ছেড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ায় পাড়ি জমান নিম্নবিত্ত মানুষ। পোশাক কারখানায় স্বল্প টাকার বিনিময়ে খেটে জীবিকা নির্বাহ করেন এসব মানুষ।

অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হিসেবে দেশে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশের পোশাক খাত। এখানে কর্মরত শ্রমিকের কঠোর পরিশ্রমে চলে অর্থনীতির চাকা। খেয়ে পরে চলতে পারলেও ভাগ্য আর স্বপ্ন যেন অধরাই থেকে যায়। বছর ঘুরে তাদের বেতন না বাড়লেও নানা অজুহাতে বাড়ি ভাড়া বাড়াতে থাকেন বাড়ি মালিকেরা।

বিজ্ঞাপন

শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতি বছরে যে ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি হয় তা প্রতি বছরে ভাড়া বৃদ্ধির নামে বাড়িমালিকের পকেটে যায়। এমন অভিযোগ করছিলেন সাভারে কর্মরত এসব পোশাক শ্রমিকেরা।

পোশাক শ্রমিক আকলিমা বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা সকালে খেয়ে কারখানায় যাই। ঘণ্টা অনুযায়ী কাজ করতে হয়। একটু ভালো থাকার আশায় এখানে এসেছিলাম। কিন্তু আমাদের দিকে কেউ তাকায় না। সবাই নিজেরটা নিয়ে ব্যস্ত। আমার বেতন ৮ হাজার ১'শ টাকা। ৫ শতাংশ হারে বেতন বাড়লে বাড়ে মাত্র ৪০৫ টাকা। আর এই জানুয়ারি মাসে বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়িয়েছে ৫০০ টাকা। আরো ৯৫ টাকা বেতন থেকে ভরে প্রতি মাসে বাসা ভাড়া দিতে হবে। এক প্রকার বাধ্য হয়েই বাড়তি ভাড়া গুনতে হয় বলেও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

অপর ভাড়াটিয়া পোশাক শ্রমিক ফাতেমা বেগম জানান, নানা অজুহাতে বাড়িওয়ালারা ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। কিছুদিন আগে বিদ্যুতের ডিজিটাল মিটার স্থাপন করায় বাড়তি বিদ্যুৎ বিলের অজুহাতে ভাড়া বাড়িয়ে দেন। আবার এই বছরের শুরতেই বাড়িয়ে দিয়েছে বাসা ভাড়া। আমাদের কষ্টার্জিত বেশির ভাগ টাকাই কৌশলে বাড়িওয়ালারা নিয়ে নেয়। এখানে কোনো আইন না থাকায় অনেকে গ্রামে ফিরে যায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কারখানায় থাকতে হয়। শুক্রবারেও ছুটি পাই না। আর আমরা তেমন শিক্ষিতও না কোথায় অভিযোগ করতে হবে, কি করতে হবে এগুলো কারখানার কাজ বন্ধ করে আমাদের খোঁজার সময় নেই। কাজ বন্ধ করলে পেটেই ভাত যাবে না।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাড়িওয়ার সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কমের। তিনি বলেন, আমরা ঋণ করে বাড়ি করেছি। প্রতিমাসে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হয়। বাড়ি ভাড়ার টাকা আমরা ব্যক্তিগত কোনো কাজে ব্যয় করতে পারি না। ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত বাড়ির টাকা ভোগ করা সম্ভব হয় না। এদিকে বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল বাড়ছেই। বাড়তি বিদ্যুৎ-গ্যাস বিলের টাকা আমরা পাবো কোথায়। এটা তো ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে না নিলে আমরা চলতে পারব না। তাদের প্রয়োজন হলে ভাড়া নেবে আর প্রয়োজন না হলে নেবে না। আমরা তো বাসা ভাড়া নিতে বাধ্য করছি না। এতে দোষের কিছু দেখছি না।

এ ব্যাপারে সাভার আশুলিয়া ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি সারোয়ার হোসেন বলেন, বাড়িওয়ালারা নানা কৌশলে বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। তবে সব বাড়িওয়ালা ভাড়া না বাড়ালেও প্রতি বছরের শুরুতে নানা অজুহাতে বেশিরভাগ বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়িয়ে থাকেন।

তিনি বলেন, ২০১৬ সালে সাভারের বাইপাইল এলাকার এলাহি কমিউনিটি সেন্টারে তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খাঁন, তৎকালীন ও বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তৎকালীন শ্রমপ্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু এবং বর্তমান দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের উপস্থিতিতে তৎকালীন বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ঘোষণা দিয়েছিলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ায় বাড়ি ভাড়া বাড়ানো যাবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। শ্রমিকরা অভিযোগ না করায় ভাড়া বাড়াচ্ছেন তারা। এতে প্রতি বছর যে টাকা বেতন বাড়ে তাদের তা বাড়িওয়ালার পকেটে যায়।

তিনি বাড়ি বাড়া আইন ১৯৯১ সালের বাস্তবায়ন, ভাড়াটিয়াকে পাকা রশিদ, বাড়ি ভাড়ার ওপর সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা, সরকারের নির্দেশ অমান্য করে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি না করা ও ভাড়াটিয়ার সঙ্গে অশোভন আচরণ না করাসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।