বগুড়া-১: উপ-নির্বাচনে বিএনপির পুনরুদ্ধার সংশয়

  • গনেশ দাস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিএনপির লোগো

বিএনপির লোগো

দলের ভেতর একাধিক গ্রুপিং ও নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে উপ-নির্বাচনে বগুড়া -১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনটি বিএনপি পুনরুদ্ধার করতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

আগামী ২৯ মার্চ বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান গত মাসে মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। আব্দুল মান্নানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সাহাদারা মান্নানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিএনপি এখনও এই আসনে প্রার্থী হিসেবে কারো নাম ঘোষণা করেনি।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার আগে ও পরে এই আসনটি আওয়ামী লীগের থাকলেও ১৯৯১ সালের পর থেকে টানা ১৫ বছর আসনটি দখলে রাখে বিএনপি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে তাহেরুল ইসলাম মানিক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন সুরুজ্জামান। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত হন বিএনপির ওয়াজেদ হোসেন তরফদার। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে কর্নেল (অব.) আব্দুল মমিন নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে বিএনপির ডা. হাবিবুর রহমান নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার হয়। এরপর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আবারও ডা. হাবিবুর রহমান নির্বাচিত হন এবং ২০০১ সালে কাজী রফিকুল ইসলাম বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল মান্নান আসনটি পুনরুদ্ধার করেন। এরপর ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনেও আব্দুল মান্নান নির্বাচিত হন।

বিজ্ঞাপন

আব্দুল মান্নান ২০০৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। যমুনা নদীর ভাঙন প্রতিরোধ,রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সব ধরনের উন্নয়নে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু তার সময়ে দলের মধ্য পরিবারতন্ত্র, পুরোনো নেতাদের কোণঠাসা করে রাখা ছাড়াও স্ত্রী সাহাদারা মান্নানকে সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করার কারণে দলের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ছিল দীর্ঘদিন ধরে। আব্দুল মান্নান গত ১৮ জানুয়ারি মারা যাওয়ার পর থেকে বিগত সময়ের ক্ষোভ এবং কোন্দল মাথা চাড়া দেওয়া শুরু করে। তারপরেও এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন এবং ২০০৮ সাল থেকে স্বামীর সঙ্গে ভোটের মাঠে থাকায় উপ-নির্বাচনেও জনগণ সাহাদারা মান্নানকে ভোট দিবেন বলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা দাবি করেন।

প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মাস্টার আফজাল হোসেন মিয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন, দলীয় কোন্দল কিছুটা আছে। নির্বাচনে দলের কিছু নেতা গোপনে বিরোধিতা করবে। তারপরেও নৌকা পাস করবে। সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শাজাহান আলী বলেন, নৌকার পক্ষে বিরোধিতা করার সাহস কেউ পাবে না। এছাড়াও যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে তাতে জনগণ সাহাদারা মান্নানকেই ভোট দিবে।

এদিকে বগুড়া-১ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা শোচনীয়। দীর্ঘদিন যাবৎ আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে দুই উপজেলা। এছাড়াও রয়েছে দলের মধ্যে একাধিক গ্রুপ। এবারের উপ-নির্বাচনে আগের প্রার্থীরাও পিছুটান দিয়েছেন। ২০০৮ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচন করেন শোকরানা। তিনি ৫ হাজার ভোটে পরাজিত হওয়ার পর দুই উপজেলায় দলের হাল ধরেন। দলের পিছনে খরচও করেন বিপুল পরিমাণ টাকা। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে দেওয়া হয় সাবেক সাংসদ কাজী রফিককে। নির্বাচনের পর তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেন এবং নিজেকে গুটিয়ে নেন।

বার্তা২৪.কম-কে শোকরানা বলেন, যেহেতু আমি দলে নেই সে কারণে নির্বাচনে যাওয়া অথবা দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার সুযোগ নাই।

এদিকে ২০০১ সালে নির্বাচিত এবং ২০১৮ সালে মনোনয়ন পাওয়া সাবেক সাংসদ কাজী রফিকুল ইসলাম বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে উপ-নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে বিএনপি থেকে এবার প্রার্থী হিসেবে নতুন কেউ আসছেন।