শাক-কচু বিক্রি করে ভাত জোটে তাদের

  • গনেশ দাস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শাক বিক্রি করে সংসার চালান এই নারীরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

শাক বিক্রি করে সংসার চালান এই নারীরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

হাছনা, মেরিনা, মালেকা, খুকী, মোরশেদা কারোরই স্বামী নেই। তবে ছেলে সন্তান রয়েছে প্রত্যেকের। কিন্তু তারপরেও ঠাঁই হয়নি ছেলের সংসারে। শাক-কচু বিক্রি করে জোটে পেটের ভাত। কেউ রাত কাটায় রেলস্টেশনে, আবার কেউবা থাকেন বস্তির ঝুপড়ি ঘরে। এভাবেই বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে হাছনা, মেরিনা, মালেকার মতো খেটে খাওয়া শত শত শ্রমজীবী নারীর জীবন। কোনো দিবসেও কেউ এদের খোঁজ রাখে না। ভাগ্যে জোটে না কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা।

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এসব ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার নারীদের খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায় তাদের করুন কাহিনী।

বিজ্ঞাপন

বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজার গেট, কাঠালতলা এবং ৩ নং রেল ঘুমটি সংলগ্ন রেললাইনের পাশ দিয়ে প্রতিদিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন শাক-কচু বিক্রি করে বৃদ্ধ বয়সী বেশ কয়েকজন নারী। এদের একজন সোনাতলা উপজেলার লোহাগাড়া গ্রামের মালেকা (৭৫)। বয়সের ভারে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না। চোখে ছানি পড়ায় দৃষ্টি শক্তিও কমে গেছে। তারপরেও সারাদিন বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে সংগ্রহ করেন কচু শাক। বিকেলের পর থেকে রেল লাইনের পাশে বসে বিক্রি করা টাকায় চলে তার পেট। রাত্রী যাপন করেন রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে।

মালেকা বেওয়া জানান, স্বামী ময়েজ আকন্দ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫ বছর আগে। ভিটে মাটি বিক্রি করে স্বামীর চিকিৎসা করানোর পর এখন তার থাকার জায়গা নেই।

বিজ্ঞাপন
ছবি: বার্তা২৪.কম

কান্না জড়িত কণ্ঠে মালেকা বলেন, প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তাকে বিয়ে করে ময়েজ আকন্দ। নিজের সন্তান না থাকলেও সতিনের দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে লালন পালন করে বড় করেছেন। এখন তাদের সংসারে তার ঠাঁই হয় না।

একই অবস্থা গাবতলী উপজেলার হামিদপুর গ্রামের হাছনা বেগমের। ১১ বছর আগে স্বামী বেলাল হোসেন ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসারের হাল ধরেন তিনি। চলে আসেন শহরে, বস্তিতে বসবাস করে পেশা হিসেবে শাক বিক্রিকে বেছে নেন।

তিনি জানান, ছেলে বড় হয়ে বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে। মেয়েকে বিয়ে দিলেও যৌতুকের দাবিতে জামাইয়ের অত্যাচারে ফিরে এসেছে তার কাছে।

সোনাতলা উপজেলার সুজাইতপুর গ্রামের মেরিনা বেওয়ার স্বামী মারা গেছেন ৯ বছর আগে। দুই ছেলে
দুই মেয়েকে নিয়ে সংসারের হাল ধরেন তিনি। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বিয়ে দিয়েছেন দুই মেয়েকে। ছেলেদেরকে ঋণের টাকায় রিকশা কিনে দিয়েছেন। কিন্তু ছেলেরা বিয়ে করে বসবাস করেন শ্বশুর বাড়িতে। আর মেরিনা বেওয়া রাত কাটান রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে। শাক বিক্রির টাকায় পেটের ভাত জোটানোর পাশাপাশি সপ্তাহে দুইদিন বাড়িতে যান এনজিওর কিস্তি দিতে।

বৃদ্ধ বয়সী এই নারীরা প্রতিদিন সকালে ট্রেন যোগে চলে যান বিভিন্ন এলাকায়। গ্রামের জমিতে কিংবা মানুষের বাড়ির আশপাশে কচুসহ বিভিন্ন প্রজাতির শাক সংগ্রহ করে বিকেলের ট্রেনে ফিরে আসেন শহরে। বিকেলের পর কুড়িয়ে আনা শাক বিক্রি করেন রেললাইনের পাশে, রাজাবাজার ও ফতেহ আলী বাজারের গেটে।