যমুনায় কমেছে জল, বেকার কয়েকশ’ মাঝি
শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই যমুনা নদীর বুক জুড়ে ধু-ধু বালুচর জেগে উঠেছে। নদীর পানি শুকিয়ে তলায় ঠেকেছে। কয়েক মাস আগেই যে নদী দিয়ে চলেছে শ্যালো ইঞ্জিন চালিত বড় বড় নৌকা, সেই নদী দিয়ে এখন ডিঙ্গি নৌকা চলাই কঠিন। এ কারণে বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েক শত নৌকার মাঝি।
নদীতে পানি কমে যাওয়ায় নৌকা চলাচলের পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে ঘোড়ার গাড়িতে। নৌকার মাঝিরা নৌকা তীরে ভিড়িয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন।
বুধবার (১১ মার্চ) বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনার নদীর তীরবর্তী এলাকা ঘুরে এসব দৃশ্য দেখা গেছে।
যমুনা নদীর শোনপচা চরের নৌকার মাঝি আব্দুল খালেক বলেন, বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ৫ মাস নদীতে পানি কম থাকায় তাদেরকে বেকার থাকতে হয়। তিনি বলেন যমুনা নদীর কালিতলা ঘাট থেকে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে শত-শত নৌকা চলাচল করে। সারিয়াকান্দির বিভিন্ন চরে যাওয়ার জন্য নৌকাই এক মাত্র বাহন। শুধু তাই নয় জামালপুর জেলার বেশ কিছু এলাকার লোকজন সারিয়াকান্দি হয়ে নৌকায় যাতায়াত করেন বর্ষা মৌসুমে। নদীতে পানি না থাকায় তারাও ভিন্ন পথে যাতায়াত করছেন।
কিন্তু এখন পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ঘাট চলে গেছে দুই কিলোমিটার দুরে। লোকজন ঘোড়ার গাড়িতে ঘাট পর্যন্ত যাচ্ছেন। এরপর নদী পার হয়ে আবারো ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন। ফলে নৌকার ব্যবহার কমে গেছে। বর্ষাকালে চর ডুবে পানি থৈ থৈ করায় নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। সেই সময় নৌকার মাঝিদের আয়ও অনেক বেড়ে যায়।
কাজলার চরের মাঝি আব্দুল জলিল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, নদীতে পানি থাকলেই তারা লাভবান৷ নৌকা চলাচলের পথ সুগম থাকলে দুরের লোকজন নৌকায় যাতায়াত ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন বেড়াতে আসেন। তারা ঘণ্টা চুক্তি নৌকা ভাড়া করে যমুনা নদীতে বেড়ান। এ কারণে তাদের আয়ও বেড়ে যায়।
নৌকার আরেক মাঝি সিদ্দিক হোসেন বলেন, তার চারটি নৌকা এখন নদী তীরে পড়ে আছে। বৈশাখ মাসের শেষ দিকে নদীতে পানি বাড়লে নৌকা চলাচল শুরু হবে।তিনি দুই মাস বেকার বসে থাকার পর এখন অন্যের ঘোড়ার গাড়ি ভাড়ায় চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। তিনি বলেন বর্ষা মৌসুমে এই এলাকায় কমপক্ষে দুই হাজার নৌকা চলাচল করে।
নদী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘাট চলে কমপক্ষে দুই থেকে তিন কিলোমিটার দুরে। চরের বালুতে কোনো যানবাহন না চলায় ঘোড়ার গাড়ি একমাত্র বাহন। নদীর পূর্ব পাড়ের লোকজন ঘোড়ার গাড়িতে ঘাট পর্যন্ত যাচ্ছেন তারপরে নৌকায় নদী পাড়ি দিচ্ছেন। পানি শুকিয়ে নদী ছোট হয়ে আসায় নদী পার হতে একদিকে সময় কম লাগছে অন্যদিকে টাকাও লাগছে কম।
বেশ কয়েকজন নৌকার মাঝি তার কষ্টের কথা জানিয়ে বলেন, নৌকা বন্ধ থাকায় কেউ দিনমজুর, আবার কেউ রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কিন্তু মাঠেও এখন তেমন কাজ না থাকায় একদিন দিনমজুরের কাজ করে তিনদিন বসে থাকতে হচ্ছে। এভাবেই অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে নৌকার মাঝিদের।