৭০০ বৌদ্ধ ভিক্ষুর আবাসস্থল সন্ধানে ভাসুবিহারে চলছে খনন
বিখ্যাত চাইনিজ পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এর দেওয়া তথ্যকে অনুসরণ করে ৭০০ বৌদ্ধ ভিক্ষুর আবাসস্থল সন্ধানে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক স্থান ভাসুবিহারের খনন কাজ শুরু করেছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।
চলতি মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত খনন কাজ চলবে বলে খনন কাজে নিয়োজিত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সেখানে খনন কাজ শুরু করা হয়।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বিখ্যাত চাইনিজ পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ৬৩৯-৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে বগুড়ার মহাস্থানগড় এলাকা পরিভ্রমণ করেন। সেই সময়ে তিনি এখানে প্রায় ৩ মাস সময় অবস্থান করেন এবং তার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, মহাস্থান গড়ের অদূরে ভাসুবিহারে তিনি ৭০০ বৌদ্ধ ভিক্ষুরদের বসবাস করতে দেখেছেন। এই সময় তিনি ভাসুবিহারের নাম দেন পো-সি-পো বিহার (যার অর্থ কেউ কেউ করেছেন বিশ্ব বিহার)| পরে স্থানীয়রা এর নামকরণ করেন নরপতির ধাপ হিসাবে। এখন যা ভাসু বিহার নামে পরিচিত। ধারণা করা হয় শিবগঞ্জের ভাসুবিহার গ্রামে নরপতির ধাপ অবস্থিত বলে এর নাম করা হয়েছে ভাসু বিহার।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর (রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগ) এর সহকারী পরিচালক মুজিবুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, এর আগে যে সব খননকাজ পরিচালনা করা হয়েছে সেই সময় দুইটি বিহার এবং দুইটি মন্দির উন্মোচিত হয়েছে। কিন্তু হিউয়েন সাং যে ৭০০ বৌদ্ধ ভিক্ষুর আবাসস্থলের কথা বলেছেন তার কিছু পাওয়া গেলেও এখনো অনেকগুলোর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাই এবারের খননের মূল উদ্দেশ্যই হলো বৌদ্ধ ভিক্ষুদের আবাসস্থল খুঁজে পাওয়া।
খননে এই পর্যন্ত যেসব নিদর্শন পাওয়া গেছে, ধারণা করা হচ্ছে বৌদ্ধ যুগের শেষ সময়কার স্থাপনা। গত বছরে খনন কাজ পরিচালনা করে চারটি ইটের অলংকৃত স্তুপা পাওয়া গেছে। যার মধ্যে তিনটি ভালো ছিল এবং বাকিটি প্রায় ধ্বংসাবস্থা ছিল। এছাড়া মাটির গভীরে একটি কক্ষ এবং আর একটি কক্ষের অংশ বিশেষ পাওয়া গেছে। এতে করে ধারণা করা হচ্ছে মূল বিহারটি বর্তমান বিহারের নিচে অবস্থিত। তাই এ বছর সেই চারটি স্তুপার পার্শ্ববর্তী স্থানে আবার খনন কাজ শুরু করা হয়েছে।
এবারের খননে একটি বৌদ্ধ ভিক্ষুর কক্ষস্থল দেখতে পেয়ে ধারণা করা হচ্ছে এগুলো বৌদ্ধ যুগের প্রথম স্থাপনা।
এর আগে ভাসুবিহারে প্রথমবারের মতো উৎখনন কাজ শুরু হয় ১৯৭৩-৭৪ অর্থ বছরে। এর পরের দুই মৌসুমেও এখানে খনন কাজ চলে। সেই সময় দুইটি মধ্যম আকৃতির সংঘারাম, একটি মন্দির এবং প্রায় ৮০০ গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ন নিদর্শন পাওয়া যায়। সেগুলোর মধ্যে ব্রোঞ্জের ক্ষুদ্রাকৃতির মূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, পোড়ামাটির সীল, পাথরের গুটিকা, মাটির প্রদীপ, লোহার পেরেক, মাটির গুটিকা এবং অন্যান্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদি এবং প্রচুর মৃৎপাত্রের টুকরা পাওয়া যায়। এই সব নিদর্শন দেখে প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন এগুলো পাল শাসনের শেষ যুগের (দশম/একাদশ শতক) শিল্পকর্ম ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রার স্মৃতিচিহ্ন।
এখনো ভাসুবিহারের অনেক এলাকার খনন বাকি আছে। পর্যায়ক্রমে সবখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ পরিচালনা করা হবে।
মুজিবুর রহমান বলেন, আশা করা যায় হিউয়েন সাং যে ৭০০ বৌদ্ধ ভিক্ষুর আবাস্থলের কথা লিখে গেছেন তা আমরা উন্মোচন করতে পারব।