পুঁজি সংকটে হলুদ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক
লাভজনক ফসল হলেও হলুদ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা। এক সময় এ উপজেলার কয়েকটি গ্রামজুড়ে মাঠের পর মাঠ হলুদের চাষ হতো। সে সব জমিতে এখন চাষ করা হয় বিভিন্ন ধরনের সবজি।
শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা ইউনিয়নের গনেশপুর, উথলী, রথবাড়ি, গরিবপুর, পাইকপাড়া, ধোন্দাকোলা, নারায়নপুর ও শাহপাড়া গ্রাম জুড়ে এক সময় ব্যাপক হারে হলুদ চাষ করা হতো। এখন এসব গ্রামে আগের তুলনায় অনেক কম চাষ করা হয়।
কৃষকেরা জানান, হলুদ চাষে সময় লাগে ৯ থেকে ১০ মাস। এ সময়ে জমিতে সবজি ও আলু চাষ করা যায়। এ কারণে কৃষকের মধ্যে হলুদ চাষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। প্রতি বিঘা জমি থেকে হলুদের ফলন হয় ৭০- ৮০ মণ। লাভ হলেও সময় বেশি লাগার কারণে তারা হলুদের জমিতে সবজি কিম্বা আলু চাষ করছেন।
আবাদ কমে যাওয়ার পরও এসব গ্রামে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ হাজার মণ হলুদ চাষ হয়। যা স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর বিভিন্ন মসলা প্রস্তুতকারী কোম্পানিতে সরবরাহ করা হয়।
গনেশপুর গ্রামের হলুদ ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা মণ দরে ৭০০ মণ কাঁচা হলুদ কিনেছেন। হলুদ সেদ্ধ করে শুকানোর পর মসলা প্রস্তুতকারী কোম্পানির কাছে বিক্রি করবেন ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে।
রোববার (১৫ মার্চ) গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর কারণে কৃষকেরা হলুদ চাষ ধরে রেখেছেন। ব্যবসায়ীরা কৃষকদের আগাম টাকা দিয়ে রাখেন হলুদ চাষের জন্য। গরিবপুর গ্রামের হলুদ চাষি হেলাল উদ্দিন বলেন, তিনি প্রতি বছরই কৃষককে আগাম টাকা দিয়ে রাখেন। সেই কৃষকদের কাছ থেকে এবারও তিনি ৮০০ মণ হলুদ কিনেছেন। জমি থেকে কাঁচা হলুদ ওঠানোর পর তা সেদ্ধ করে শুকিয়ে গ্রামেই মেশিনে পরিষ্কার করে ব্যবসায়ীরা বাজারজাত করে থাকেন। হলুদ ব্যবসায়ী গরিবপুর গ্রামের আব্দুল মতিন নিজ বাড়িতে মেশিন স্থাপন করেছেন। হলুদ সেদ্ধ করে শুকানোর পর মেশিনে পরিষ্কার করে বাজার জাত করেন।
আব্দুল মতিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, তিনি এবার তিন হাজার মণ কাঁচা হলুদ কিনেছেন। হলুদ চাষ দিন দিন কমে যাওয়ায় ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। হলুদ চাষ টিকিয়ে রাখার জন্য কৃষি বিভাগ কোনো পদক্ষেপ না নিলেও ব্যবসায়ীরা কৃষকদের আগাম টাকা দিয়ে উৎসাহ যোগাচ্ছেন।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, বগুড়া জেলায় এ বছর ৬২০ হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলাতেই ৯০ ভাগ জমিতে হলুদ চাষ করা হয়।