আজ পর্দা উঠছে বইমেলার, প্রবেশ পথে ‘নো মাস্ক-নো এন্ট্রি’
করোনাভাইরাস কারণে ভাষার মাসের পরিবর্তে স্বাধীনতার মাসে শুরু হচ্ছে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১’। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) বাঙালির প্রাণের এই মেলার ৩৭ তম আসরের পর্দা উঠছে। চলবে ১৪ এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত।
প্রতিবছর ভাষার মাসে শহীদদের স্মরণে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হলেও এ বছর করোনার কারণে ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা ২০২১ উৎসর্গিত হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশে।
এবারের বইমেলার মূল থিম ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী’।
আজ বিকেল ৩টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে এর সংক্রামণ ঠেকাতে বইমেলায় নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা। প্রবেশ পথে থাকবে ‘নো মাস্ক-নো এন্ট্রি’ সম্বলিত লোগো।
এবারের অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ বঙ্গবন্ধু রচিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’-এর ইংরেজি অনুবাদ ‘নিউ চায়না-১৯৫২’ এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই গ্রন্থ উন্মোচন করবেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হবে। এবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫৪টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৮০টি ইউনিট; মোট ৫৪০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় ৩৩টি প্যাভিলিয়ন থাকবে।
বইমেলার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল মেলা প্রাঙ্গণে। সেখানে ১৩৫টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি ৫টি উন্মুক্ত স্টলসহ ১৪০টি স্টল দেওয়া হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। অমর একুশে বইমেলা ২০২১-এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে ১টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩টি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে বইমেলায় মিডিয়া সেন্টার থাকবে তথ্যকেন্দ্রের উত্তর পাশে। বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্তৃপক্ষ বইমেলায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, তথ্যকেন্দ্রের সর্বশেষ খবরাখবর এবং মেলার মূল মঞ্চের সেমিনার প্রচারের ব্যবস্থা করবে। মেলায় ওয়াইফাই সুবিধা থাকবে।
একক ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই ও বিক্রি/প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করা হবে।
বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন, শিশু কিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য ১টি এবং সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার-এর ১টি স্টল থাকবে।
এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রথমদিকে ‘শিশুপ্রহর’ থাকছে না।
এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব প্রান্তে নতুন একটি প্রবেশ পথ করা হয়েছে। প্রকাশকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল রমনা প্রান্তে একটি প্রবেশ পথ ও পার্কিং-এর ব্যবস্থা করা। এবার এটা করা সম্ভব হয়েছে। সবমিলে সোহরাওয়ার্দীতে ৩টি প্রবেশ পথ ও ৩টি বাহির পথ থাকবে। প্রত্যেক প্রবেশ পথে সুরক্ষিত ছাউনি থাকবে, যাতে বৃষ্টি ও ঝড়ের মধ্যে মানুষ আশ্রয় নিতে পারেন। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।
বইমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। নিশিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে ৩ শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহিদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চাঁনখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধূলিনাশক পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা করা হয়েছে।
১৯ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বিষয়কেন্দ্রিক আলোচনার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন এবং গত এক বছরে প্রয়াত বিশিষ্টজনদের জীবন ও কৃতি নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এই অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিদিনই রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ এবং আবৃত্তি।
অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২০ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২০ বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।
এছাড়া ২০২০ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ-বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।
এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১১৫টি বই।
বইমেলা ১৯ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।