সাঈদ চৌধুরীর ‘আলোক ঝরনাধারা’ সাড়া জাগিয়েছে

  • আশরাফ হাসান
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সাঈদ চৌধুরীর ‘আলোক ঝরনাধারা’

সাঈদ চৌধুরীর ‘আলোক ঝরনাধারা’

অমর একুশে বইমেলায় সাঈদ চৌধুরীর ‘আলোক ঝরনাধারা’ বেশ সাড়া জাগিয়েছে। এটি স্বাদ এবং সৌন্দর্য বৈচিত্রে ভরপুর একটি আধুনিক গল্পগ্রন্থ। বায়োফিকশন থেকে ক্লাসিক ফিকশন। কালের নিয়ম পেরিয়ে এক-একটি গল্প নতুনত্ব ও নান্দনিকতায় উপভোগ্য। গল্পের প্রতিটি প্যারায় পাঠককে মোহিত করে। মাঝে মাঝে চমকে দেয়, একটা বিস্ময়কর ঘোরের মধ্যে শেষ করতে হয়। গল্প গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে সরলরেখা প্রকাশনা সংস্থা। এতে রয়েছে ৮টি ছোটগল্প। ১. আলোক ঝরণাধারা ২. সৌভাগ্যের স্বর্ণ সুড়ঙ্গ ৩. শুভ্র সাদায় আচ্ছাদিত ৪. নির্বাক মুগ্ধতায় ৫. বাসকিউল্স ভূত ৬. ভুতের অট্টহাসি ৭. মানবিকতা ৮. হাতপাখা ও পাখির ছানা।

সাঈদ চৌধুরী একাধারে সাংবাদিক, কবি ও কথাসাহিত্যিক। একজন সব্যসাচী লেখক হিসেবে শৈল্পিক দক্ষতায় তাঁর কবিতা, গল্প, ভ্রমণকাহিনী কিম্বা উপন্যাস পাঠককে দৃশ্যমান স্বপ্ন-বাস্তবতায় রোমাঞ্চিত করে। তিনি একজন মানবিক মানুষ। সফল শিল্প-উদ্যোক্তা। নিপীড়িত জনতার বন্ধু। মেহনতি মানুষের আপনজন। শ্রমিকের কপালে জমে ওঠা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে দিতে যার জুড়ি মেলা ভার।

বিজ্ঞাপন

সাঈদ চৌধুরীর জীবনবোধ ও শব্দচয়নে রয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তা। সাহিত্যে তিনি ফুটিয়ে তুলেন আলোকিত চেতনার স্ফুলিঙ্গ। গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য সুষমাকে আধুনিক কাব্য বন্ধনে বিশেষ নান্দনিকতায় উপস্থাপন করেন। তাঁর দেখার চোখ, লেখার ভাষা ও উপলব্ধির চিত্ত অনুধাবন করতে হলে দৃষ্টি ফেরাতে হবে বিশাল সাহিত্য ভান্ডারে। 

সাঈদ চৌধুরীর লেখা শুধু চমৎকার শব্দ সমূহের অনন্য বিন্যাস নয়, বরং দিন বদলের হাতিয়ার। তিনি মানুষকে আশাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত করেন। আর সে কারনে অগ্রসর চিন্তার পাঠকেরা তাঁর কবিতা বোঝেন, পছন্দ করেন, এমনকি প্রভাবিত হন। সাঈদ চৌধুরীর কবিতা পাঠককে কেবল কাব্যরসে আপ্লুত করে না, বক্তব্যের স্পষ্টতা আর তীব্রতার জন্য সব মহলেই আলোড়ন সৃষ্টি করে। শোষিত মানুষের পক্ষে তিনি এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষের কথা তুলে ধরেন বিপুলভাবে, দৃঢ়চিত্তে।

প্রিন্স চার্লস ও সাঈদ চৌধুরী

 

সাঈদ চৌধুরী গল্প ও উপন্যাস রচনায় নান্দনিক পারঙ্গমতা ও নতুনত্বের ছোঁয়া নিয়ে এসেছেন। তাঁর ছোটগল্প যেমন যাপিত জীবনের সহজ চিত্রায়ন তেমনি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আবহমান মূল্যবোধকে আত্মস্থ করেছে সহজাত ভঙ্গিতে। উপস্থাপনার মুন্সিয়ানা, প্রাঞ্জল ভাষাশৈলী ও নাটকীয় প্রক্ষেপণে আদৃত ও অলংকৃত। প্রতিটি গল্পে সমাজ-চিত্রায়নের পাশাপাশি সৃষ্টিশীলতার আদলে সুস্থ বোধ-নির্মাণের একটা আকুলতা লক্ষ করা যায়। চরিত্র নির্মাণ ও বয়ান ভঙ্গিতে তিনি অন্তর্নিহিত ম্যাসেজ ছুঁড়ে দিয়েছেন কুশলী দক্ষতায়।

সাঈদ চৌধুরীর কথাসাহিত্য একই সাথে বাস্তবতার নির্মেদ দর্পণ এবং মূল্যবোধের উৎসারণে সমানভাবে প্রত্যয়ী। ইতিহাসের সোনালী অধ্যায়ে মোড়ানো আমাদের ঐতিহ্যগাঁথা তাঁর গল্পের থরে থরে গৌরব শোভা বর্ধন করেছে। ডিজিটাল জীবন-আবহ ও অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগেও অনেক কুসংস্কার আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে। সাঈদ চৌধুরী কুশলী হাতে এর অসারতা তুলে ধরে প্রচ্ছন্ন প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। এই সংস্কার প্রবণতার বিশেষ ভঙ্গিমা; কখনো স্বতঃস্ফুর্ত তথ্যের সংযোগ তাঁর গল্পের একটা স্বাতন্ত্র্যময় অবস্থান তৈরি করে দিয়েছে।

সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্ট বাংলাদেশ ও কবি আল মাহমুদ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাঈদ চৌধুরীর বিপুল পাঠকপ্রিয় গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- উপন্যাস ‘ছায়াপ্রিয়া’, প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘সুনিকে’, সাক্ষাৎকার ‘কালজয়ী কবিতার স্রষ্টা আল মাহমুদ’, কবিতা গ্রন্থ ‘আত্মার অলিন্দে’, আরব জাহান নিয়ে স্মৃতিময় লেখা ‘ধূসর মরুর বুকে’, বিলেত নিয়ে লেখা ‘লন্ডনে যাপিত জীবন’, সাহিত্য-আলোচনা ‘সমকালীন সাহিত্য ভুবন’ ইত্যাদি। এছাড়া সাহিত্য-সাংবাদিকতার পাশাপাশি দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়েও তিনি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।

সাঈদ চৌধুরী যে শুধু লেখালেখির মধ্যেই নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন তা কিন্তু না। তিনি ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশে নানামুখি সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন। রোটারি ক্লাব অব সিলেট সিটির চাটার প্রেসিডেন্ট সাঈদ চৌধুরী সেবাকর্মে সদা তৎপর। সিলেটে বিশিষ্টজনদের নিয়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বিবিআইএস প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে বাদাঘাটের ব্রিজ সহ উত্তর সিলেটের রাস্তার উন্নয়ন বা বিদ্যুৎ সংযোগ সাধনেও তিনি আত্মনিবেদিত।   

বরিস জনসন ও সাঈদ চৌধুরী

 

১৯৮৯ সালে বন্ধু ওদুদ আনসারীকে নিয়ে ‘দুর্বার’ নামে প্রায় সাড়ে ৩শ পৃষ্ঠার একটি প্রকাশনার মাধ্যমে  সাঈদ চৌধুরী সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সরবে গৌরবে তাঁর আগমন ঘোষণা করেন। এতে কবি আল মাহমুদ, কবি সুফিয়া কামাল, কবি শামসুর রহমান, কবি আফজাল চৌধুরী, কবি দিলওয়ার থেকে শুরু করে ড. আশরাফ সিদ্দিকী, অধ্যাপক আব্দুল মান্নান সৈয়দ সহ শতাধিক কবির কবিতা, দার্শনিক দেওয়ান আজরফ ও ড. কালিপদ সেন সহ বরেণ্য ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার, সৈয়দ আলী আহসান ও মাওলানা মুহিউদ্দিন খান সহ জাতীয় লেখকদের প্রবন্ধ, ‘যাদের পরশে ধন্য যাদের শ্রমে ধন্য সিলেট’ এমন ব্যক্তিত্ব হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী, ই এ চৌধুরী, শহীদ আলী এডভোকেট, দেওয়ান ফরিদ গাজী সহ প্রায় অর্ধশত কর্মবীরের জীবন এবং বিভিন্ন বিষয়ে সিলেটের প্রায় সকল পত্রিকার সম্পাদক, সকল দলের রাজনৈতিক নেতা ও ছাত্রনেতার বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। 

প্রবীণ সাংবাদিক-প্রাবন্ধিক আবদুল হামিদ মানিক, অধ্যাপক কাজী আব্দুর রউফকে সাথে নিয়ে সাঈদ চৌধুরী ১৯৯৩ সালে প্রকাশ করেন সিলেটের প্রামাণ্য গ্রন্থ ’সিলেট গাইড’। ২০০৩ সালে তিনি বৃটেনে বাংলাদেশী ব্যবসা বিষয়ক গাইড ‘ইউকে বাংলা ডাইরেক্টরি’ প্রকাশ করেও চমক সৃষ্টি করেন। ছড়াকার শারিক শামসুল কিবরিয়া, গল্পকার সেলিম আউয়াল ও সাংবাদিক সালেহ আহমদ খানকে নিয়ে ১৯৯৫ সালে সাঈদ চৌধুরী বাংলাদেশে সংবাদ সংস্থা ‘জালালাবাদ মিডিয়া’ করেছিলেন। ইংল্যান্ড গিয়ে ২০০২ সালে করেছেন সংবাদ সংস্থা ‘মিডিয়া মহল’।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় অনন্য সাঈদ চৌধুরী লন্ডন থেকে ২০০১ সালে সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা প্রতিষ্ঠা ও সম্পাদনায় এবং পরবর্তীতে দৈনিক সময় সম্পাদনা ও পরিচালনায় নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছেন। ২০০১ সালের ২৩ নভেম্বর একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে বৃটেনের যুবরাজ প্রিন্স চার্লসকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ইউরো বাংলা প্রদান করেন সাঈদ চৌধুরী। বাইলিংগুয়াল হবার কারণে প্রিন্স সময় নিয়ে দেখলেন। এতে মুসলিম আর্ট এন্ড কালচার সম্পর্কিত তাঁর নিজের বক্তব্য আছে দেখে মুগ্ধ হয়ে ভূয়সি প্রশংসা করলেন। এটি ছিল বাংলা সংবাদ পত্রের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। লন্ডনের তৎকালীন মেয়র কেন লিভিংস্টন ও পরবর্তী মেয়র ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সহ অনেক মন্ত্রী-এমপি সাঈদ চৌধুরীর প্রকাশনা সমূহের প্রশংসা করেছেন।

স্টিফান টিমস ও সাঈদ চৌধুরী

 

বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্যে ব্যাপক গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে লন্ডনে আয়োজন করা হয় এক্সপো বাংলাদেশের ২০০৫। বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের  উদ্যোগে ও বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনের সহায়তায় অনুষ্ঠিত এই বাণিজ্যে মেলা সফল করতে সাঈদ চৌধুরীর ভূমিকা মনে রাখার মত। অর্গানাইজিং কমিটির একজন হিসেবে তিনি মিডিয়া সার্ভিস থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের অংশ গ্রহন এবং বায়ারদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ও সিলেট প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত প্রেস কন্ফারেন্সে মূল বক্তব্য তুলে ধরেছেন। বাণিজ্য মন্ত্রনালয়, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সঙ্গে বৈঠকেও তিনি অন্যতম প্রতিনিধি ছিলেন। পরে সাঈদ চৌধুরী বিবিসিসির ডাইরেক্টর নির্বাচিত হন এবং প্র্রেস এন্ড পাবলিসিটি ডাইরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। 

২০০৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর নোবেল বিজয়ী ড.  ইউনুসের গণ সম্বর্ধনা আয়োজনেও সাঈদ চৌধুরী মুখ্য ভুমিকা পালন করেছেন। লন্ডনের আলেক্সজান্ডার প্যালেসে এই সম্বর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় এমপিসহ দুই সহস্রাধিক জনতা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের সদস্য সচিব হিসাবে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার বাজেট সংগ্রহ ছাড়াও একটি চমৎকার সুভ্যেনির সম্পাদনা করেন তিনি। 

কারি শিল্পের বিকাশ ও স্টাফ সংকট নিরসনের জন্যও সাঈদ চৌধুরীর সরব তৎপরতা প্রশংসনীয়।  ২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল ট্রাফালগার স্কোয়ারে এথনিক ক্যাটারিং অ্যালায়েন্স এসোসিয়েশন (ETHNIC CATERING ALLIANCE ASSOCIATION) আয়োজিত সমাবেশে ইউকে এশিয়ান রেষ্টুরেন্ট ডাইরেক্টরির ব্যানার সহ তাঁকে দেখি  সামনের কাতারে। বৃটেনে এশিয়ান ১৮ হাজার রেষ্টুরেন্টের মধ্যে প্রায় দশ হাজার বাংলাদেশী। ভারতীয়,পাকিস্তানি, চীনা, থাই মিলেও আমাদের চেয়ে কম। অনেকে অনুমান নির্ভর ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা বলতেন। ২০০৭ সালে সাঈদ চৌধুরী সম্পাদিত ইউকে এশিয়ান রেষ্টুরেন্ট ডাইরেক্টরিতে সকল রেষ্টুরেন্টের নাম-ঠিকানা প্রকাশের ফলে সঠিক তথ্য প্রমাণিত হয়েছে।  

সেদিন ট্রাফালগার স্কোয়ারে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট মেম্বার ও পলিটিকেল লিডার সহ হাজার হাজার রেস্তোরা শ্রমিক জড়ো হয়েছিলেন। বাংলাদেশী ছাড়াও এশিয়ান প্রায় সকল দেশের ক্যাটারিং ব্যবসার মালিক-শ্রমিক সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ছিলেন। তাদের দাবি ছিল ৩.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের শিল্প পঙ্গু হয়ে পড়ছে। অবৈধ শ্রমিক সন্ধানের নামে রেস্তোরা গুলিতে বর্ডার অ্যান্ড ইমিগ্রেশন এজেন্সির পুলিশী অভিযান বন্ধ করতে হবে। এটা ব্যবসাকে মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। কর্মচারি সংকট এড়াতে সরকারকে নতুন অভিবাসন বিধি শিথিল করতে হবে, করতেই হবে।

২০১০ সালে ইসলাসিক সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) ৫৭টি দেশের তত্ত্ব ও তথ্য সমৃদ্ধ ডাইরেক্টরি মুসলিম ইন্ডেক্স সম্পাদনা করে সাঈদ চৌধুরী ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। মুসলিম বিশ্বের অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক নেটওয়ার্কিং প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই ইনডেক্স অনন্য। ওআইসির মহাসচিব প্রফেসর একলেমুদ্দিন এহসানগ্ল এই প্রয়াসের প্রশংসা করেছেন। ব্রিটেনের ফাইন্যান্সিয়াল সেক্রেটারি ও ডিজিটাল মিনিস্টার স্টিফান টিমস এমপি ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী হাউজ অব কমন্সে মুসলিম ইনডেক্স এর মোড়ক উন্মোচন করেন। তাঁর মতে সমগ্র বিশ্বের মুসলিম এবং নন মুসলিমরা এই প্রকাশনা থেকে উপকৃত হবেন। লন্ডনের তৎকালীন মেয়র কেন লিভিংস্টন ও পরবর্তী মেয়র ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সহ অনেক মন্ত্রী-এমপি সাঈদ চৌধুরীর প্রকাশনা সমূহের প্রশংসা করেছেন।

কেবল প্রিন্ট মিডিয়া নয়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতেও সাঈদ চৌধুরীর রয়েছে সরব পদচারনা। দেশে অবস্থানকালে বেতার বাংলাদেশ তাঁর অসংখ্য কথিকা ও প্রবন্ধ প্রচার করেছে। লন্ডনেও তিনি সেখানকার রেডিও এমসিআর ও বেতার বংলায় এবং টেলিভিশন সমূহ তথা বাংলা টিভি, চ্যানেল এস ও এটিএন বাংলার অনেক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করেন। ২০১৩ সালের ২০ আগস্ট চ্যানেল নাইন তাদের সাড়া জাগানো ‘সিম্পলি বিজনেস টক’ অনুষ্ঠানে সাঈদ চৌধুরীর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রচার করে।  তিন পর্বের অনুষ্ঠানটি মুগ্ধচিত্বে উপস্থাপন করেন প্রাজ্ঞ উপস্থাপক কাউন্সিলর আব্দাল উল্লাহ। ২০১৫ সালের ২ আগস্ট চ্যানেল আই ইউরোপ তাদের জনপ্রিয় ‘আওয়ার প্রাইড’ অনুষ্ঠানে সাঈদ চৌধুরীকে নিয়ে অসাধারণ ডকুমেন্টরি প্রকাশ করেছে। সাঈদ চৌধুরীর বক্তব্য ও সাংবাদিক মোহাম্মদ জাকারিয়ার উপস্থাপনা ছিল খুবই প্রাণবন্ত ও শিক্ষণীয়। এছাড়া এনটিভিতে  সাঈদ চৌধুরীর উপস্থাপনায় ‘হল্ড দ্যা ফ্রন্ট পেইজ’ অনুষ্ঠানটি ইউরোপ জুড়ে খ্যাতি ছড়িয়েছে।  আইঅন টিভিতে হেড অব নিউজ এন্ড মার্কেটিং হিসেবেও তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয়। 

সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের নোয়াগাও নিবাসী সাঈদ চৌধুরী উত্তর সিলেটের শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক, চট্টগ্রাম স্যারপঞ্চ এসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান ডা: এম এম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর পুত্র। তিনি সিলেট প্রেসক্লাব ও লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে পরিচালনা কমিটিতে নির্বাহী সদস্য হিসেবেও বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। 

সমাজ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র এওয়ার্ড, কারি লাইফ বিজনেস এচিভমেন্ট এওয়ার্ড এবং নিউহাম ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এওয়ার্ড সহ বিভিন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিনি সম্মাননা পেয়েছেন। আমেরিকান বায়োগ্রাফিকাল ইন্সটিটিউটের ইন্টারন্যাশনাল ডাইরেক্টরি অব ডিসটিংগুই্জ্ড লিডারশীপের অস্টম সংখ্যায় হাতে গোনা যে ক’জন ব্যক্তির স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, তাঁর মধ্যে সাঈদ চৌধুরী অন্যতম। 

‘সাঈদ চৌধুরী, সৃষ্টিমুখর অনন্য একজন’ শীরোনামে বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি ও কথাসাহিত্যিক আল মাহমুদ লিখেছেন-

সাঈদ চৌধুরী আমার অত্যন্ত প্রিয়ভাজনদের একজন। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে বলতে পারি সাঈদ চৌধুরী একজন পরিশ্রমী এবং উদ্যমশীল ব্যক্তি। আমি তাকে কাছের এক বন্ধু বলেই গণ্য করে এসেছি, অনেকদিন ধরে। ... সকল পরিচয়ের ভেতরেও আমার কাছে সাঈদ চৌধুরীর লেখক পরিচয়টি উজ্জল হয়ে ওঠে। সাহিত্যেও আমার এই তরুণ বন্ধুটি অনেকটা পারদর্শীতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তারুণ্য অন্তপ্রাণ এই মানুষটি যেন ঢেউয়ের মতো চঞ্চল আর উদ্যমী; অপারাজেয় মনোভাবই তাকে এমনটা করে তুলেছে। ... ছায়াপ্রিয়া নামের জীবনঘনিষ্ঠ এক উপন্যাসের রচয়িতা সাঈদ চৌধুরী। ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা, বিষয়ের অভিনবত্ব আর ঘটনার ঘনঘটায় লেখাটিতে দারুণ গতির সঞ্চার করেছে। স্বচ্ছ আর সাবলীল গতিতে এগিয়ে চলেছে পরিণতির দিকে। ভাষার সারল্য আর বিষয়ের ঔশ্বর্য্য ছায়াপ্রিয়াকে করে তুলেছে মহিমান্বিত। ... মানুষ মানুষের জন্য- এই হিসেবে মানবিক বোধে উজ্জিবিত সাঈদ নানান ধরনের গুণাবলী সম্পন্ন একজন মানুষ। আমি তার উপকারী মনোভাব এবং সাহায্য-সহায়তা দিয়ে ভালবাসায় ও সহৃদয় আচরণের কারণে মুগ্ধ ও আনন্দিত। এ বিষয়ে তার কোন তুলনা হয়না বলেই আমি মনে করি। তিনি সৎ ও সফল ব্যক্তি, সাহস ও সেবায় এক জীবন উৎসর্গকারী বাংলাদেশী। .. আমি সাঈদ চৌধুরীর কল্যাণ ও দীঘায়ূ কামনা করি। সেই সাথে তার সৃষ্টিশীলতা এবং সফলতায় ভীষণ আনন্দ প্রকাশ করছি। সাঈদের সার্বিক কল্যাণ কামনায় আমি দু’হাত তুলে থাকলাম। - আল মাহমুদ

সাঈদ চৌধুরীর গ্রন্থ ছায়াপ্রিয়া‘র মোসাবিদায় অধ্যক্ষ কবি আফজাল চৌধুরী লিখেছেন- সাহিত্যচর্চা, সাংবাদিকতা, শিক্ষা এবং সমাজসেবা এই সকল ক্ষেত্রেই সাঈদ চৌধুরী একজন সম্ভাবনাময় নেতৃপুরুষ। ... একটি নতুন মাত্রায় জীবনের খন্ডচিত্র অনবদ্য কবিতার মতো অংকিত হয়েছে এই গ্রন্থে। একটি বৈশিষ্ট্য এই উপন্যাসের উজ্জ্বল দিক আর তা হলো এই যে, এই উপন্যাসের নায়ক নায়িকারা খুবই আধুনিক কিন্তু শাশ্বত মূল্যবোধ অস্বীকারকারী নয়। ... এক পরম মনোমুগ্ধকর কমেডি ট্রাজেডিতে রূপান্তরিত হয়েছে। নতুন মাত্রায় কবিতার মতো উপন্যাসেও সাঈদ চৌধুরীর এই অভিযাত্রা সফল হোক এই কামনা করি।

সাঈদ চৌধুরীর উপন্যাস সম্পর্কে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ কৃষ্ণ কুমার পাল চৌধুরী লিখেছেন- 'ছায়াপ্রিয়া' উপন্যাসের নায়ক নায়িকা আহমদ ও শায়লা তাদের মনের দেয়া নেয়াকে নিয়েই রচিত হয়েছে উপন্যাসটি। .. রচনাশৈলী, ভাবের গভীরতা এবং সুনিপুণ ঘটনা বিন্যাস বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আমি অন্তর দিয়ে লেখকের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি। আমি পূর্বেও বলেছি এবং আবার বলছি সাঈদ চৌধুরীর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।'

বাংলাদেশ বেতারের পরিচালক আহমদ-উজ-জামান ‘আমার নোট থেকে’ শীরোনামে নিয়মিত কলামে লেখেন- 'ছায়াপ্রিয়া উপন্যাসটি পড়ে আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। আমার ধারনা ছিলো, সিলেটের নতুন লেখকদের লেখায়-সাহিত্যে সিলেট আসছেনা। কোনো? সবাই কি ভাগীরথী বুড়িগঙ্গা কেন্দ্রিক লেখক ও কবি। আমি তাই খুঁজছিলাম এমন একজনকে, যিনি সিলেটের সন্তান হয়ে সিলেটকে তার লেখায় তুলে ধরছেন। ছায়াপ্রিয়া আমাকে দিয়েছে সেই সিলেট, যে সিলেট সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্তর পরিবর্তন করে নতুন সিলেট, নতুন সিলেটীরা গড়ে উঠছেন তার তথ্য ও স্বাদ।'

সুলেখক সাঈদ চৌধুরীর সৃষ্টি-নিচয় অনাগত দিনগুলোতে আরো ঋদ্ধ হয়ে ওঠুক। প্রাণ ও মানবতার গান লিপিবদ্ধ হোক তাঁর গদ্যে, কবিতায়। পাঠকপ্রিয়তা পাক মনবান এই গল্পগ্রন্থ ‘আলোক ঝরণাধার’। 

লেখক: আমেরিকা প্রবাসী। কবি-প্রাবন্ধিক।