শ্রদ্ধা ভালোবাসায় নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের প্রয়াণ দিবস পালিত

  • জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন

নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন

 

বাংলা নাটকে নতুন ধারার প্রবর্তক নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ১৬তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের আয়োজনে ১৪-১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী ‘সেলিম আল দীন নাট্যৎসব'২৩’ শুরু হলো আজ।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সামনে থেকে একটি স্মরণযাত্রা শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীনের সমাধির সামনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় তার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন ।

তিন দিনব্যাপী নানা আয়োজনে এবারের নাট্যোৎসবের প্রথমদিন (১৪ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় স্মরণযাত্রার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটির সূচনা হয়। এদিন বিকেল ৩টায় জহির রায়হান মিলনায়তনে ‘শেষ নাহি যে’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

নাট্যোৎসবের প্রথমদিন সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন নাট্যকার অধ্যাপক আবদুস সেলিম, নাট্য ব্যক্তিত্ব আফজাল হোসেন।

সন্ধ্যা ৭টায় ফাহমিদা নবীর পরিবেশনায় সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে সেলিম আল দীনের গান অনুষ্ঠিত হয়। পরে মুক্তমঞ্চে নাট্য প্রযোজনা 'স্বর্ণবোয়াল' মঞ্চায়নের মাধ্যমে প্রথম দিনের কর্মসূচি শেষ হয়।

অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় নাট্যোৎসবের দ্বিতীয় দিন মঞ্চস্থ হবে নাট্য প্রযোজনা 'মাদার কারেজ অ্যান্ড হার চিল্ডরেন'। এছাড়া নাট্যোৎসবের সমাপনী দিনে রয়েছে ঢাকা থিয়েটারের পরিবেশনায় নাট্য প্রযোজনা 'নিমজ্জন'।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার সেনেরখিলে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার সৃষ্টিশীলতার কিরণচ্ছটা ভারতবর্ষ ছাড়িয়ে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

কর্মক্ষেত্র হিসেবে শিক্ষকতাকে বেছে নিয়ে ১৯৭৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। এরপর থেকেই তার কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত হতে থাকে।

১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উদ্যোগেই খোলা হয় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এই বিভাগকে তিনি অধিষ্ঠিত করেন মর্যাদার আসনে। শিক্ষকতার পাশাপাশি ১৯৮১-৮২ সালে দেশব্যাপী নাট্য আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে গড়ে তোলেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। এর আগে তার শিল্পসঙ্গী নাট্যনির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকা থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন।

তার বর্ণময় কর্মজীবনে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্যও ছিলেন তিনি।

সেলিম আল দীন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৬ সালে জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার এবং ২০০৭ সালে একুশে পদকে ভূষিত করা হয় তাকে।

নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি মাত্র ৫৯ বছরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় মসজিদের কাছে তাকে সমাহিত করা হয়।

বাংলা নাটকের নতুন ধারার এ প্রবর্তক তার নাটকে তুলে ধরেছেন বাঙালির নিজস্ব জীবনচেতনা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তথা গ্রামীণ মানুষের জীবন ও সমাজবাস্তবতা।