রাজাকার গোষ্ঠীকে চিরতরে নির্মূল না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব: সাদ্দাম

যারা রাজনীতি করবে, তারা হবে সবচেয়ে সৎ, সাহসী এবং মেধাবী
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেছেন, শহীদ ড. শামসুজ্জোহা যেমন পাকিস্তানি বাহিনীর সামনে দাঁড়িয়ে নিজের জীবন দিয়েছে, অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী যেমন স্বাধীনতা বিরোধী-মৌলবাদী গোষ্ঠীর কাছে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছে, তেমনি যতদিন না পর্যন্ত বাংলার মাটি থেকে জামায়াত-শিবির, রাজাকার গোষ্ঠীকে চিরতরে নির্মূল না করতে পারি, ততদিন আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবাস বাংলাদেশ মাঠে অনুষ্ঠিত শাখা ছাত্রলীগের ২৬তম বার্ষিক সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
সম্মেলনে উদ্বোধকের বক্তব্যে সাদ্দাম হোসেন বলেন, সম্মেলন মানেই সংগঠনে নতুন রক্তের সঞ্চালন, নতুন রোডম্যাপ, রক্তে শিহরণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে স্পন্দিত হওয়া, শেখ হাসিনার পক্ষে লড়াই-সংগ্রামে আগুয়ান থাকার রক্ত-শপথ গ্রহন করা এবং ছাত্রলীগকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। আমি আশা করি, রাবি শাখা ছাত্রলীগ তাদের লড়াই, সংগ্রাম ও রক্ত ঝরানোর ঐতিহ্য ধরে রাখবে এবং সারাদেশের মধ্যে একটি আইকনিক শাখা হবে। আমি চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা এই শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ব্যক্তিত্ব, সততা, সাহস, মেধা, বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা ও সৃজনশীলতা দেখে ছাত্রলীগের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করবেন।
রাজনীতি মানে শুধু পদ-পদবি ধারণ করা নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনীতি মানে শুধু পদ-পদবি ধারণ করা নয়। রাজনীতি মানে আপনি রাজনৈতিক অনুশীলন করবেন, আপনার মনুষ্যবৃত্তি আরও বেশি উন্মোচিত হবে, আপনি ব্যক্তিত্ব এবং সততার শিক্ষা লাভ করবেন, ত্যাগ করার সক্ষমতা থাকবে, দূরদর্শীতা থাকবে, আপনি সমস্যা সৃষ্টি নয় বরং সমস্যার সমাধান করবেন এবং সবাইকে সাথে চলার মত যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন।
নেতিবাচক খবর প্রসজ্ঞে তিনি বলেন, অনেকসময় নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হিসেবে ছাত্র রাজনীতি আসে। এটা আমাদের কষ্ট দেয়। যারা রাজনীতি করবে, তারা হবে সবচেয়ে সৎ, সাহসী এবং মেধাবী। তারা ছাত্র সমাজের সামনে আইকন হিসেবে থাকবে। আমরা অনেক সময় পত্র-পত্রিকা খুললে দেখি ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িতদের সিট বাণিজ্য এবং প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার খবর। আমারা কোনো অবস্থাতেই এগুলো প্রত্যাশা করিনা। বরং এসব কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে লড়াই করাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কাজ।
হলের আবাসিক সংকটকে পুঁজি করে রাজনীতি করা ছাত্রলীগের কাজ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের এক রুমে অনেক সময় ১০ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থীকেও থাকতে হয়। শিক্ষার্থীদের এই সংকটকে পুজি করে রাজনীতি করা আমাদের কাজ নয়। তাদের সমস্যার সমাধান করাই আমাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
প্রশাসনের কাছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি তার বক্তব্যে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার ব্যবস্থা যেন করা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমি সেই দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা নিরসনে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবি জানাচ্ছি। স্বাধীনতাবিরোদী ও মৌলবাদী রাজনীতির সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহনেরও দাবি জানাচ্ছি। কোনো রাজাকারের উত্তরসূরী যেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করার অধিকার না পায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, এই ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
বক্তব্যের শেষে পদপ্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে সাদ্দাম হোসেন বলেন, যেহেতু লম্বা সময় পরে সম্মেলন হচ্ছে, সেহেতু সবার প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব নয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য পদ-পদবী নয়, তাদের লক্ষ্য সমাজ বদল করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগুয়ান থাকা, সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নে অটুট থাকা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আনন্দের কারণ হওয়া।