নারী নিপীড়নের অভিযোগে জাবি থিয়েটার সম্পাদককে অব্যাহতি
নারী নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাংস্কৃতিক সংগঠন জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের (অডিটোরিয়াম) সাধারণ সম্পাদক চন্দন সমাদ্দার সোম হিমাদ্রীকে সংগঠনের পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ মে) জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের দপ্তর সম্পাদক জায়েদ হোসেন আলিফ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৮ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের (অডিটোরিয়াম) সাধারণ সম্পাদক চন্দন সমাদ্দার সোম হিমাদ্রীর বিরুদ্ধে একটি নিপীড়নের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এক জরুরি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়া হলো।
তদন্ত চলাকালে চন্দন সংগঠনের কোন কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকবে না। তদন্ত শেষে রিপোর্ট প্রকাশের পর জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার (অডিটোরিয়াম) তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। ততদিন পর্যন্ত সংগঠনের যাবতীয় সাংগঠনিক কাজকর্ম পরিচালনার জন্য বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া জাহানকে মনোনীত করা হলো। তদন্তকাজে প্রশাসনকে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার যেকোনো ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা করতে সবসময় প্রস্তুত।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত কিছুদিন যাবত অনলাইন মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারকে জড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার, গুজব ও মিথ্যাচার আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের (অডিটোরিয়াম) সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের নামে যে-সব তথ্য দেয়া হয়েছে, তা নিতান্তই মিথ্যা এবং অতিরঞ্জিত। এর পেছনে অন্তর্নিহিত কোন অসাধু উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হচ্ছে। পাশাপাশি, নিপীড়নের তদন্ত প্রমাণের পূর্বেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ, নানা মাধ্যমে ধর্মীয় উসকানিমূলক এবং হয়রানিমূলক আচরণ দেখা যাচ্ছে, তা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। এর প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উপর ভয়াবহভাবে পড়বে। এ ধরনের মিথ্যাচার, গুজব ও অপপ্রচারের কারণে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার (অডিটোরিয়াম) এসব অপপ্রচারকারী ও তাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। এহেন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার সকলকে আহ্বান জানাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের (অডিটোরিয়াম) সাধারণ সম্পাদক চন্দন সমাদ্দার সোম হিমাদ্রীর বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী। অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী ও হিমাদ্রীর মধ্যে ২০২২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রেমের সম্পর্ক থাকাকালীন হিমাদ্রীর দ্বারা ৪ বার গুরুতরভাবে আহত হন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগীর কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়া, আঙুল ভেঙ্গে দেওয়া, মাটিতে ফেলে বুকের উপর বসে গলা চেপে ধরাসহ কথায় কথায় গায়ে হাত তোলার অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী। পাশাপাশি ভুক্তভোগীকে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টাও করা হয়ে বলে অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়।
আনিত অভিযোগের বিষয়ে চন্দন সমাদ্দার সোম হিমাদ্রী বলেন, এতদিন পরে এসে এইধরনের অভিযোগে আমি বিব্রত এবং বিরক্ত। এতদিন পরে এসে এধরনের কথা আমার জন্য মানহানিকর এবং আমিও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং আমার মনে হয় উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং মিথ্যামিশ্রিত। তারপরেও যেহেতু আমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ এসেছে, আমিও চাই এই অভিযোগ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত হোক।
এদিকে ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আলমগীর কবির জানান, আমরা লিখিত অভিযোগপত্র পেয়েছি। ইতিমধ্যে দু'জন সহকারি প্রক্টরকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া এবং গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রকৃতি বিশ্বাস। প্রতিবেদন দাখিলের পর প্রয়োজনে নিপীড়নবিরোধী সেলে এ অভিযোগ পাঠানো হতে পারে।