ডোনাল্ড লু'র আগমনের প্রতিবাদে জাবিতে মানববন্ধন
মার্কিন সরকারের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী 'ডোনাল্ড লু'র ঢাকা আগমনের প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের নেতা-কর্মীরা।
মঙ্গলবার (১৪ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন মূল সড়কে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন শেষে শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল বের হয়ে মূল সড়ক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন সংলগ্ন মুরাদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার একদিকে গাল ভরে বলছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোষহীন, এই যুদ্ধ বন্ধ হওয়া দরকার। আরেকদিকে হোটেল শেরাটনে বসে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কিভাবে বাণিজ্য করা যায় সেটা নিয়ে কথা বলছে। এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই ইসরাইলের একমাত্র মদদদাতা ও অস্ত্র সরবরাহদাতা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবে ফিলিস্তিনের একের পর এক বোমাবর্ষণ হচ্ছে এবং নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইসরায়েল গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কিভাবে বাণিজ্য করা যায় বাংলাদেশ সেই আলাপ-পরামর্শ করছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার সারাদেশে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে গণসমর্থন গড়ে তোলার কাজ করছে সেই সরকার আরেকদিকে ইসরায়েলের কাছ থেকে নজরদারির যন্ত্রপাতি কিনছে। আমরা এই দ্বিচারিতার প্রতিবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বুকে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে অগ্রাহ্য করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে তাদেরকে বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ করে দিতে স্কলারশিপ দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদেরকে সমর্থন জানাতে পারে তাহলে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ঐতিহাসিক সংহতিবোধের জায়গা থেকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন নিশ্চুপ? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন হল ও পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুবিধা থাকা সত্বেও প্রশাসন কেন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দেওয়ার ব্যাপারে নিশ্চুপ তা আমাদের অজানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপে পড়ার সুযোগ দিয়ে উদারতা ও সম্মান দেখিয়েছে। আমরা চাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে পূর্নাঙ্গ স্কলারশিপে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হোক। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই তাদেরকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হোক। সম্ভব হলে বিশেষ বিবেচনায় এই শিক্ষাবর্ষেই তাদেরকে সুযোগ দেওয়া হোক।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের সহ-সভাপতি আশফার রহমান নবীন বলেন, বাংলাদেশের শাসক শ্রেণি কি চায় আমরা সেটি নিশ্চিত নয়। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আমরা তাদের দ্বিচারিতা লক্ষ্য করি। তারা একদিকে ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলছি, অন্যদিকে গোপনে ইসরায়েলের কাছ থেকে নজরদারি প্রযুক্তি কিনছে। যাতে তারা বাংলাদেশের গণমানুষের, বিরোধী মতের, বিরোধী পক্ষের ও সরকারের গঠনমূলক সমালোচকদের মুখ চেপে ধরে রাখতে পারে ।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) জবি শাখার সংগঠক সজীব আহমেদ বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বর হামলায় প্রতিদিন অসংখ্য নারী ও শিশু নিহত হচ্ছে। ইসরায়েল যুদ্ধের নীতি ভঙ্গ করে হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাচ্ছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ জারি রেখেছে। ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। আমরা এই মানববন্ধন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে সংহতি জানাচ্ছি।
এছাড়াও মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী জাবি শাখার সংগঠক আবিদ ইসলাম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিয়া জামান ও ইমরান হাসান শুভ।