ইবি’তে আলোচিত সান্ধ্য আইন শুধুমাত্র শীতকালীন ছুটিতে প্রযোজ্য
ক্যাম্পাস
সম্প্রতি আলোচিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রভোস্ট কাউন্সিলের ১৪০তম সভায় শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশের সময়সীমা সংক্রান্ত ঘোষিত নির্দেশনা শুধু শীতকালীন ছুটিতে কার্যকর থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ এ.বি.এম জাকির হোসেন। উক্ত আইন অনুযায়ী ছেলেদের রাত ১১ টার মধ্যে এবং মেয়েদের মাগরিবের আযানের ১৫ মিনিটের মধ্যে হলে প্রবেশ করতে হবে।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ এ.বি.এম জাকির হোসেনের সাথে ইবি ছাত্রশিবিরের প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎকালে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
কাউন্সিলের সভাপতি বলেন, হলে বহিরাগত প্রবেশ করে থাকে, এসব রোধে আমরা সাধারণ কাউন্সিল সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা একটা পরিবার হিসেবে বিবেচনা করি। শীতকালীন ছুটিতে নিরাপত্তা জোরদার স্বার্থে এই প্রবেশসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে স্পেসিফিক ভাবে শীতকালীন শব্দটা না আসায় শিক্ষার্থীদের কাছে ভুল বার্তা গিয়েছে।
এসময় শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, সংগঠনটির ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবির সহ-সমন্বয়ক গোলাম রাব্বানী উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
এসময় প্রতিনিধি দল শিক্ষার্থীদের অধিকার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দাবি পেশ করেন। যার মধ্যে হলেগুলোতে নতুন করে কোনো সিন্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মতামত নেয়া, হলের অভ্যন্তরে ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা ও মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট চালু করা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রত্যেক আবাসিক হলে বিশেষ করে ছাত্রীদের হলে ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করা এবং নারী মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট ও জরুরি ওষুধের সরবরাহ রাখার জোর দাবি জানিয়েছি। পাশাপাশি হল টিউটর নিয়মিত অবস্থান করে তাহলে অনেক সমস্যা কেটে যাবে। স্যার আশ্বস্ত করেছেন যে সময়সীমাটা ছুটিকালীন সময়ের জন্য নির্ধারণ করেছে। অন্যান্য দাবিসমূহ শীতকালীন ছুটির পর কাউন্সিল মিটিং এ আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।
এছাড়াও নারীদের আবাসিক হল অভ্যন্তীণ সীমানায় অবাধ চলাফেরা করার সুবিধার্থে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ সমন্বয়ক গোলাম রাব্বানী।
বেকারত্ব যখন আমাদের সমাজব্যবস্থার প্রধান অন্তরায়, তখন সেই বেকারত্বের ছাপ মুছে দিতে নিজ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ছাত্র অবস্থায় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন শিক্ষার্থীরা। নানামুখী প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে তারা এগিয়ে চলেছেন স্বপ্ন পূরণের পথে।
কথায় আছে, ‘যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে’। এই প্রবাদটিকে বাস্তবরূপ দিতে পড়াশোনা আর ব্যবসা দুটোই সামলাচ্ছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কয়েকজন শিক্ষার্থী। নিজের পড়াশোনার খরচের পাশাপাশি পরিবারও সামলাচ্ছেন তারা।
উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রায় এগিয়ে যাওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় এ ব্যাপারে। যারা পড়াশোনার পাশাপাশি সমানতালে তাদের ব্যবসা সামলিয়ে যাচ্ছেন। এদেরই একজন সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী বর্ষা।
তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘উদ্যোক্তা হতে খোলামেলা পোষাক বা পরিচিতির প্রয়োজন নেই, ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন আমার অনেক দিনেরই। এদিকে আমর ব্যাচমেট এবং রুমমেট কক্সবাজারের। তো হঠাৎ চিন্তা করলাম কক্সবাজার জেলার কিছু ঐতিহ্যবাহী পণ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে বিজনেস শুরু করলে কেমন হয়? তারপর বান্ধবীর সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম অল্প পুঁজি দিয়ে আপাতত শুরু করি। সে থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে কক্সবাজারের আচার, শুঁটকি, বালাচাও এবং বাদাম নিয়ে ব্যবসা শুরু করি গত সেপ্টেম্বরে। আলহামদুলিল্লাহ, এখন আমি নিজের খরচ নিজেই চালাতে পারি। আমাদের ক্যাম্পাসে মেয়েদের মধ্যে আমরাই প্রথম যারা অনলাইন ও অফলাইনে এ ধরনের ব্যবসা শুরু করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদিও আপাতত এটি ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে ইনশাআল্লাহ, ভবিষ্যতে দেশজুড়ে আমাদের পণ্য ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, ছেলে বা মেয়ে হওয়া কোনো বিষয় নয়; হালাল উপার্জনটাই আসল।’
বর্ষা বলেন, ‘শুরুর দিকে অনেক মানুষের নেতিবাচক কথা শুনতে হয়েছে, এমনকি কাছের মানুষদের থেকেও সাপোর্ট পাইনি। কিন্তু ধৈর্য ধরে নিজের লক্ষ্যে অটল ছিলাম। আজ আমি বলতে পারি, মেয়েরা চাইলে সবকিছু করতে পারে। তবে তার জন্য খোলামেলা পোশাক বা অতিরিক্ত পরিচিতির প্রয়োজন নেই। আমার ক্যাম্পাসের বোনদের প্রতি আহ্বান থাকবে—আপনারাও উদ্যোক্তা হোন। ব্যবসা শুরু করতে বেশি পুঁজি নয়, ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট।’
আরেকজন ক্ষুদে উদ্যোক্তা সালমান (ছদ্মনাম), বিয়ে করে বউ নিয়েই ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। এদিকে ক্যাম্পাসের আশেপাশে টিউশনিও তেমন সহজলভ্য নয়। কিন্তু সংসার চালাতে ভালোই খরচাপাতি দরকার হয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন মানুষের নিত্যদিনের ব্যবহার্য ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে স্টল নিয়ে বসার।
যেই কথা সেই কাজ! শুরুতে কিছুটা সংকোচ বোধ করলেও সময়ের পরিক্রমায় এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছেন তার ছোট্ট ব্যবসায়। ক্লাস চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাল চত্বরে এবং সন্ধ্যার পর হল সংলগ্ন জিয়া মোড়ে দেখা মেলে তার।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমি বিবাহিত, তাই আমাকে সংসারের বিষয়ে ভাবতে হয়। তাছাড়া টিউশনি করতে হলে কুষ্টিয়া বা ঝিনাইদহ শহরে যাওয়া লাগে। সেখানে যাওয়া আসায় ২ ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। তার থেকে ভালো আমি যদি ২ ঘণ্টা সময় এখানে দেই, আমার টিউশনি থেকে ভালো টাকা উপার্জন হয়। আমাদের দু’জনের ভালোভাবেই চলে যায়।’
তিনি আরও জানান, ‘শুরুতে আমি যখন উদ্যোগ গ্রহণ করি, তখন কাউকে দেখতাম না। এখন দেখলাম অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এদিকে ঝুঁকছে। কেউ টিশার্ট, কেউ ছোট খাবারের দোকান দিয়ে উদ্যোক্তা হচ্ছেন। আমার পরামর্শ থাকবে, এখান থেকে কেউ উদ্যোগ নিতে পারলে ভবিষ্যতে যে কোনো একটা জায়গায় গেলে সে ভালো করতে পারবে। কারণ এখানে একজন মানুষ তার জীবন সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে। তাছাড়া কেউ চাকরি করলে সে অন্যের অধীনে চাকরি করবে, কিন্তু উদ্যোক্তা হলে সে আরেকজনকে চাকরি দিতে পারবে। তাই আমি বলবো- শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হতে এগিয়ে আসতে।
আরেকজন উদ্যোক্তা মিলি (ছদ্মনাম) জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের যে খাবার! তা মানুষের গলা দিয়ে নামতে কষ্ট হয়। সেই হল লাইফের শুরু থেকেই রান্নাবান্না করা হতো। শখের বশেও অনেকসময় রান্নাবান্না করা হয়। তারপর ভাবলাম যে, রান্নাবান্না করে ছোট পরিসরে বিজনেস করলে কেমন হয়! রান্নার প্রশংসা করতো সবাই, সাহসও দিয়েছে যে, ‘এটা দিয়েই শুরু করতে পারিস কিছু একটা!’
‘তারপর আর কি! যেই ভাবা সেই কাজ! আমি আর আমার বান্ধবী দু’জনে সিদ্ধান্ত নেই যে, রান্নাবান্না করে বিক্রি করার। এদিকে মেয়েদের হলের সামনে সেরকম খাবারের দোকান নেই। আর ক্যাম্পাস জুড়ে সেরকম ভ্যারিয়েশন ও নেই খাবারের।’
তিনি জানান, প্রথম একদিন সাহস করে প্রি অর্ডার নিয়ে ফেলি খাবারের৷ ‘নান আর চিকেন’ সাথে চিকেন বার্গার এবং স্যানডউইচ। এতো বেশি সাড়া পাই অকল্পনীয় ছিল! তারপর থেকে সবার ভলোলাগা আর চাহিদা বাড়তে থাকে। এরপরে সাহস করে হলের সামনেই নিজেদের ছোটখাটো একটা স্টল দিয়ে ফেলি! শীতে গরম গরম চিকেন স্যুপ, চিকেন চাপ। পাশাপাশি লুচি-ডালের স্বাদে, সুবাসে আমাদের ছোট্ট স্টলের সামনে জমতে শুরু করে মানুষের ভিড়। এমন ও হয় এখন আমরা স্টলে বসার আগে থেকেই অনেকে এসে অপেক্ষা করে, যাতে আগে থেকে খাবার পায়। অনেক প্রেশার হয় তখন কিন্তু অদ্ভুত একটা ভালো লাগা কাজ করে যখন তৃপ্তি নিয়ে সকালকে খেতে দেখি। এটাই প্রাপ্তি।
নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, একটা কথাই বলবো, যে যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয়ে পণ্যের মান আর কাস্টমারের চাহিদা বুঝে বিজনেস শুরু করুন। আর অবশ্যই কোয়ান্টিটি নয়, কোয়ালিটিতে ফোকাস করুন।
তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে করেছেন হারাম। তাছাড়া রাসুল (স.) নিজেও একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তার উম্মতকে সৎ উপায়ে হালাল পদ্ধতিতে ব্যবসার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। পৃথিবীতে সবচেয়ে বরকতময় পেশার একটি হলো ব্যবসা। সৎ ব্যবসায়ীকে আল্লাহ তায়ালা শহীদের মর্যাদা দিবেন। সেই থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি ছোট্ট পরিসরে ব্যবসাটি শুরু করলাম।
মাসুদুর রহমান বলেন, এখানে আমি ২ টাকা পিস সিঙ্গাড়া, ৫ টাকা পিস গুলগুলা, ১০ টাকা প্লেট ছোলা দিয়ে শুরু করেছি। আমি যেহেতু ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং এর স্টুডেন্ট, আমার পড়াশোনার বিষয়ও ছিল ব্যবসা কেন্দ্রিক। তাই নিজের অভিজ্ঞতাটা চাকরি ক্ষেত্রে না লাগিয়ে ব্যবসায় কাজে লাগালাম।
নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তাদের নিজেকে আগে প্রশ্ন করতে হবে সে আসলে কী চায়? জোর করে বা হুজুগে কিছু হয় না। যদি মনে করে কেউ তাকে ব্যবসা টানছে তাহলে সে এদিকে আসুক৷ আর যদি মনে করে চাকরি করবে তাহলে সেদিকেই যাক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওন্যাল স্ট্যাডিজ বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি) উদ্যোগে ‘শ্বেতপত্র প্রকাশই শেষ কথা নয় সুপারিশ বাস্তবায়ন জরুরি’ শীর্ষক মুক্ত সংলাপ আয়োজিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কক্ষে এই মুক্ত সংলাপ শুরু হয়। যা চলে টানা সাড়ে তিন ঘন্টা।
সিসিআরএসবিডির নির্বাহী পরিচালক ও চবির রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহফুজ পারভেজের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চবি উপ উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের সঞ্চালনায় সংলাপে মুখ্য আলোচক ছিলেন অর্থনীতি বিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক, প্যানেল আলোচক ছিলেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. বেগম ইসমত আর হক। এতে ধারণা পত্র উপস্থাপন করেন ড. মো শহীদুল হক।
চবির উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রসেসর ড. শামীম উদ্দিন খান বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমরা অসংখ্য কমিশন হতে দেখেছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় বলে, কোন বিষয়কে যদি ধামাচাপা দিতে হয় তাহলে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু নয়টি কমিশনের একটিও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমরা ৫৩ বছর নির্বাচন দেখেছি, আর নির্বাচন দেখতে চায় না। বর্তমান সরকারের সংস্কার কাজে রাজনৈতিক দলগুলোকে সময় দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। সমাজের রন্ধে-রন্ধে যেরকম দুর্নীতি, যেরকম অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ঢুকে গেছে। এর থেকে শুদ্ধ করতে হলে একটা শুদ্ধাচার লাগবে।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে ড. এ কে এনামুল হক রাষ্ট্র সংস্কারের শ্বেতপত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শিক্ষাখাতে মেজর সংস্কার করতে হবে। কারিগরি শিক্ষা ফলপ্রসূ কিন্তু এখানে ইনকাম কম হওয়ায় এদিকে কেউ পড়তে আসেনা। আমাদের দেশ আপাদমস্তক দুর্নীতিতে মোড়ানো। দুর্নীতি দূর করতে মেইন জায়গায় হাত দিতে হবে। আমাদের দেশে ২৮ ধরণের দুর্নীতি হয়ে থাকে। আমরা যেগুলো নিয়ে ব্যস্ত আছি সেগুলো প্রধান দুর্নীতি নয়। ভেতরে অনেক ভয়ংকর অবস্থা। এগুলো থেকে বের হওয়া খুব সহজ হবে না। এগুলোকে দমন করতে ইন্ডিপেন্ডেন্ট কিছু কমিশিন গঠন করা হয় কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তারা নিজেরিই ইন্ডিপেন্ডেন্ট থাকতে পারে না। সামাজিক অবস্থা এখন যে অবস্থায় আছে তাতে মনে হয় না যে দুর্নীতি মুক্ত হবে দেশ। আমাদের আরেকটু সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে।
বেগম ইসমত আরা হক বলেন, দেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি সংগঠিত হয়েছে এর জন্য অনেক তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তার ফলাফল আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়াও শ্বেতপত্র প্রকাশ করেই কাজ শেষ নয়। এটা বাস্তবায়নে আমাদের সকলকেই কাজ করতে হবে। শ্বেতপত্রের সুপারিশ আমরা বাস্তবায়ন করব।
চবি পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, এই সরকার আমাদের অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ের ফসল। তাই এই সরকারকে কোন ভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। আমাদের সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। একটা শ্বেতপত্র প্রকাশ হয়েছে সেটার বাস্তবায়ন আমরা দেখতে চাই। দেশের সর্বত্রই ছিল দুর্নীতিগ্রস্থ। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা ব্যতীত কোন বিকল্প নেই।
অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ফ্যাসিবাদ সরকারের শ্বেতপত্র পেশ করেন। তিনি দেশে বিদ্যমান ১০ টি সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সেগুলো হল বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ, খেলাপী ঋণ, নড়বড়ে আর্থিক খাত, উচ্চ জ্বালানী তেলের দাম, বিনিয়োগ স্বল্পতা, অপ্রতুল কর রাজস্ব, ক্রমবর্ধমান ক্ষণ, আয় ও সম্পদ বৈষম্য।
তিনি আরও বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের একটা ভংগুর অর্থনীতি ও বৈষম্যে পরিপূর্ণ বাংলাদেশ দিয়ে গেছে। বর্তমান সরকার চেষ্টা করছে এ থেকে উত্তরণ করতে। আমাদের সকলকে এ কাজে সহযোগীতা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মাহফুজ পারভেজ বলেন, শ্বেতপত্র নিয়ে দেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রথম এমন আয়োজন করেছে। এখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অনেক বিষয় তুলে ধরেছেন। এটাকে স্মরণীয় করে রাখতে হবে। শ্বেতপত্রটি আহামরি কিছু নয় ১৫ বছরের দুর্নীতি মাত্র এক মাসে তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু এর মাধ্যমে ভালো কিছুর সূচনা হয়েছে।
শ্বেতপত্র নিয়ে আজকের সংলাপ যথেষ্ট নয়, উল্লেখ করে প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ আরও বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে কমিটির সকল সদস্যকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতে পারেন। কারণ, আমরা মনে করি, দুর্নীতি বিরোধী গবেষণা ও অনুসন্ধান অব্যাহত রাখা দরকার। তিনি শ্বেতপত্রের সুপারিশমালার দ্রুত বাস্তবায়ন ও শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশন প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, বিগত সরকারের দলীয় নেতারা বিভিন্ন সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি করেছে। এখন শুধুমাত্র সাইনবোর্ড পাল্টানো হয়েছে কিন্তু চাঁদাবাজি রয়েই গেছে। এর পেছনে জড়িতদের খুঁজে বের করতে হবে। তিনি রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকদের সম্পর্ক বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী চেতনা ধরে রাখতে রাজনৈতিক, আইনগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন।
মুক্ত সংলাপে বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, ডিন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ক্যাব যুব গ্রুপের উদ্যোগে ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সহায়তায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দোকানে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় তিন দোকান মালিককে মোট ৩১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় এই যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেইট এলাকা ও শাহ আমানত হলের সামনের খাবারের রেস্তোরাঁয় পরিদর্শন করা হয়৷ এসময় অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন রান্নাঘর, খাবারের মূল্য তালিকা না টাঙানোসহ বিভিন্ন ভোক্তা অধিকার বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হয়। অভিযান পরিচালনাকালীন তিনটি খাবারের দোকানকে এসব কর্মকাণ্ডের জন্য সতর্কতামূলক সর্বমোট ৩১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এরমধ্যে দ্বীপ স্টোরকে ৮ হাজার টাকা, রহমানিয়া হোটেলকে ১৫ হাজার টাকা এবং ঢাকা হোটেলকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিদফতর।
অভিযান শেষে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুর রহমান বলেন, ক্যাবের অনুরোধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অভিযান পরিচালনা করেছি। আগের অভিযানের তুলনায় কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি দেখা গেলেও তিনটি দোকানে মারাত্মক অব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করেছি। এসব দোকানে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছিল। একই ফ্রিজে কাঁচা মাছ-মাংসের সাথে রান্না করা খাবার সংরক্ষণ করা হচ্ছিল, যা অত্যন্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও, তারা অনুমোদনবিহীন রং ব্যবহার করছিল। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনটি দোকানকে মোট ৩১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি রাব্বি তৌহিদ বলেন, ভোক্তা অধিদফতরের সহযোগিতায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দোকানগুলোতে পরিচালনা করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের যে দোকানগুলোতে শিক্ষার্থীরা খাবার খায়। অভিযান পরিচালনা করার সময় সেসব দোকানগুলিতে বাসি খাবার, অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্নতা এবং বিভিন্ন সমস্যা পাওয়া গেছে। এজন্য তাদের জরিমানা করা হয়েছে। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে সেই দোকানগুলো ভুল শুধরে ভোক্তা বান্ধব হবে।
এ অভিযানে অংশগ্রহণ করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান, কনজ্যুমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি রাব্বি তৌহিদ, সাধারণ সম্পাদক মো. খাইরুল ইসলাম ও অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রামে চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যুর বিচারের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের(চবি) বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আবু বকর ছিদ্দিক।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে দোষীদের বিচার দাবী করেন তিনি।
একটা আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতালের চিকিৎসকের খামখেয়ালিপনা আচরণে এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মানের বিচার দাবী করেন মৃত নবজাতকের বাবা।
ভুক্তভোগী চবি শিক্ষক জানান, গত ২০ এপ্রিল হতে ১৯ ডিসেম্বর প্রায় পুরো প্রেগন্যান্সি পিরিয়ড আমার স্ত্রী মিসেস লাকি ত্রিপুরা এভারকেয়ার হাসপাতালের গাইনি বিষয়ক সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সানজিদা কবিরের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। প্রতিটি নিয়মিত চেকাপে আমরা ডাক্তারকে শুধু একটাই অনুরোধ করেছিলাম যাতে উনি ডেলিভারির সময় নিজে উপস্থিত থাকেন। উনি প্রত্যেকবারেই হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়েছিলেন। যেহেতু এটি আমার স্ত্রীর প্রথম গর্ভধারণ তাই ডাক্তারকে বলি যে প্রথমে নর্মাল ডেলিভারির চেষ্টা করবেন যদি কোন জটিলতা দেখা দেয় তবে সিজার করবেন। তিনি আমাদের সম্পূর্ণ আশ্বাস দিয়ে ছিলেন।
গত ১২ ডিসেম্বর নিয়মিত চেকাপের সর্বশেষ সাক্ষাতে ডা. সানজিদা কবির পরামর্শ দেন যখনই প্রসব বেদনা শুরু হবে তখনই যেন এভারকেয়ার হাসপাতালে চলে আসি, এমনকি রাত যত গভীরই হোক উনাকে যেন ফোন করি।
১৯ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক চারটার দিকে আমার স্ত্রী প্রসব বেদনা অনুভব করেন। আমরা সাড়ে পাঁচটায় এভারকেয়ারে পৌঁছাই এবং তখনই ডা. সানজিদা কবিরকে ফোন করে বিষয়টি অবহিত করি। উনি জরুরী বিভাগে ভর্তি হতে বলেন। তিনি শীঘ্রই আসবেন বলে আমাদেরকে জানান।
তিনি আরও বলেন, ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে আমার স্ত্রী মিসেস লাকি ত্রিপুরাকে হাসপাতালের ১০০০৭ নম্বর রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন প্রায় সকাল সোয়া ছয়টা বাজে। প্রসব ব্যথা তীব্র হলে সেখান থেকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয় সাড়ে ছয়টায়। আমরা (আমি, আমার ১৮ বছর বয়সী ভাগিনী) কেবিনে অপেক্ষা করতে থাকি।
এছাড়াও জরুরী বিভাগের প্রবেশ-রিপোর্টে মা ও গর্ভস্থ সন্ধান সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল। প্রায় পৌনে নয়টার দিকে দ্বিতীয় ডাক্তার কেবিনে এলেন এবং বললেন আপনার বেবির হার্টবিটে সমস্যা। আমি বললাম জরুরী বিভাগের প্রবেশ রিপোর্টে তো বেবি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। আপনাদের তত্ত্বাবধানে বেবির অবস্থা খারাপ হল কেন। তিনি কোন উত্তর না দিয়ে চলে গেলেন।
এর এক ঘন্টা পর ডা. সানজিদা কবির কেবিনে এলেন এবং বললেন বেবির হার্টবিট পাচ্ছি না। আমি বললাম। এতক্ষণ তো সবকিছু ঠিক ছিল, কখন থেকে এমন হল। তিনি বললেন তিনি আসার পর দেখলেন অবস্থা খারাপ। আমি জানতে চাইলাম আপনি কখন এলেন। তিনি বললেন এইমাত্র এলাম। তার মানে আপনি লেবার রুমে ছিলেন না। তিনি বললেন, না, ছিলাম না। আমি বজ্রাহত হলাম। তিনি এত দিন তাহলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছেন এমনকি তিনি এও বলেছিলেন যে, তিনি রাত তিনটা বাজলেও ডেলিভারি করতে ছুটে আসেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও আমাকে প্রতারিত করেছে। কারণ তারাও বার বার আশ্বস্ত করেছিল এই বলে যে, রাত যতই হোক কোনোরকমে আমাদের জরুরি বিভাগে এনে পৌঁছে দিবেন, বাকি দায়িত্ব আমাদের। আমি তাদের আশ্বাস ও বাস্তবতার মধ্যে তফাত দেখে বাকাহীন হয়ে গেলাম। ১০টার দিকে ডা. সানজিদা কবির আবার কেবিনে এলেন এবং জানালেন বাচ্চা সম্ভবত বেঁচে নেই। আমি শোকে মুহ্যমান হয়ে রইলাম। ১০:৫২ এ নবজাতক বিশেষজ্ঞ একজন ডাক্তার বললেন মৃত বাচ্চা প্রসব হয়েছে।
পরে আমি ডা. সানজিদা কবিরের কাছে বেবির মৃত্যুর কারণ জানতে চাই। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন তিনি কোন কারণ খুঁজে পাননি। তিনি আরও বলেন, মায়ের এবং বাচ্চার শরীরে কোন ত্রুটি বিচ্যুতির লক্ষণ নেই। সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত গর্ভস্থ বেবির হার্টবিট সম্পূর্ণ ভাল ছিল বলে তারা জানিয়েছিল। ৮:৩০ এর পর হঠাৎ হার্টবিট না পাওয়ার কোন কারণ তারা ব্যাখ্যা করতে পারেননি। আসলে ডা. সানজিদা কবির আসার আগেই সাধারণ ডাক্তারদের আনাড়িপনায় গর্ভস্থ বেবির মৃত্যু হয়।
আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসা কিংবা খামখেয়ালিপনা আচরণ এটাই প্রথম নয়। তাদের কারণে অনেক মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু অনেকেই প্রতিবাদ করতে পারে না। সকলের হয়ে আগামীতে যাতে কোন চিকিৎসকের খামখেয়ালি কোন আচরণের জন্য কোন মা বাবাকে যাতে সন্তান হারা হতে না হয়।