“বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় সৌন্দর্য হচ্ছে ভিন্নমতকে সহ্য করা। ভিন্নমত ধারণ, ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা, ভিন্নমতের অধিকারকে রক্ষা করা জীবনের বড় অর্জন।”—পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এ কথাগুলো বলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ও যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিষ্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) আয়োজিত সেন্ট্রাল নবীন বরণ অনুষ্ঠানে ওরিয়েন্টেশন স্পিকার হিসেবে তিনি আরও বলেন, “মানুষের প্রথম কাজ সহমর্মিতাবোধ তৈরি করা। ভিন্নমত সত্ত্বেও যেন আমরা এক টেবিলের দুই পাশে বসতে পারি। লাইব্রেরিতে বা বইমেলায় ভিন্নমতের লেখকের বই পাশাপাশি থাকে, কিন্তু কেউ কাউকে অসম্মান করে না। এই ভিন্নমত সহ্য করার শিক্ষা এবং পরস্পরের পাশে দাঁড়ানোর সহমর্মিতাবোধই মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন।”
প্রফেসর আলী রীয়াজ তার বক্তব্যে ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা গড়ে তোলার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “ভিন্নমত সহ্য করতে পারলে মুক্তভাবে চিন্তা করা যায়। তা না হলে সমাজে বৈষম্য তৈরি হয়। এ দেশে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে সহাবস্থান করছে। দেশটি বহুত্ববাদী সমাজ এবং এই বহুত্ববাদকে গ্রহণ করতে হবে। ভিন্নমত সহ্য করতে পারলে আমরা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারব।”
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে প্রচলিত জ্ঞানকে চ্যালেঞ্জ করার জায়গা। শিক্ষকরা সূত্র ধরিয়ে দেবেন, কিন্তু আপনারা চারদেয়ালের বাইরের বন্ধু, স্বজন, সমাজ তথা পরিবেশ থেকেও শিখবেন। প্রথমেই কোনো কিছুকে নাকচ করবেন না বা অন্ধভাবে গ্রহণ করবেন না। পরিবেশ থেকে, সমাজ থেকে, বঞ্চিত মানুষের কাছ থেকে শিখতে হবে। সমাজে বৈষম্য কমাতে হলে ব্যবহারিক জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে এবং সবার প্রতি সহমর্মিতা গড়ে তুলতে হবে।”
পাবিপ্রবির উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এস আব্দুল আওয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আনোয়ারুল আজিম আখন্দ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস এ আব্দুর রাজ্জাক। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পাবিপ্রবির প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর মো. নজরুল ইসলাম।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ শেষে, জুলাই-আগস্টের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়।
প্রফেসর আলী রীয়াজ তার বক্তব্যের শেষ দিকে বলেন, “আপনার সাফল্যের পেছনে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের অবদান রয়েছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থেকে আপনাদের জ্ঞান ও প্রতিভা দিয়ে সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে। ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। এই শিক্ষাই আপনাদের মর্যাদার আসনে নিয়ে যাবে।”
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ডক্টর মীর হুমায়ুন কবীর এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষিকা সাইমন নাহার রিতু।