বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম ও তাঁর গবেষক দল উদ্ভিজ্জ নির্যাস বা নিমের নির্যাস দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক মুক্ত নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদনের দাবি করেছেন।
অধ্যাপক ড. শফিকুলের এই গবেষণা দলে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. আবু রায়হান পারভেজ, শাকিল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, তানভীর হাসান, নাজিবুল হক এবং আশরাফুল আলম। গবেষণাটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের অর্থায়নে ধারাবাহিকভাবে ৭ বছর ধরে চলমান।
তাছাড়া সম্প্রতি ২০২৫ সালে ৩১তম বাংলাদেশ ভেটেরিনারি শিক্ষা ও গবেষণা সমিতি (বিএসভিইআর) কর্তৃক আয়োজিত বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে এই গবেষণার পোস্টার "High Performance Liquid Chromatography Analysis of Azadirachta in a Pathway to Drug Discovery for Safe Poultry Production in Bangladesh নামে সেরা পোস্টার উপস্থাপনার পুরস্কার অর্জন করেছে যা গবেষণাটিকে আন্তর্জাতিক পরিসরে স্বীকৃতি প্রদান করেছে বলে জানান অধ্যাপক শফিকুল।
অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলামের উদ্ভাবিত নিমের নির্যাসের নাম BAUSafe-Vet. এই নির্যাস উদ্ভাবনের লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, পোল্ট্রি উৎপাদনকারীরা বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে থাকেন। অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের দুই সপ্তাহ পর মুরগি বিক্রি করলে সাধারণত মুরগির দেহে ক্ষতিকর মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক থাকে না। কিন্তু অনেক খামারি অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের দিনেও মুরগি বিক্রির জন্য বাজারে তোলেন। এ কারণে এসব অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের দেহেও পৌঁছে যায় যা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সসহ বিভিন্নভাবে খাদ্য নিরাপত্তার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। আর এই সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যেই BAUSafe-Vet উদ্ভাবন করা হয়েছে।
BAUSafe-Vet সম্পর্কে ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, 'BAUSafe-Vet এক ধরনের সল্যুশন বা উদ্ভিজ্জ নির্যাস যা পোল্ট্রি শিল্পে অ্যান্টিবায়োটিক-মুক্ত ব্রয়লার উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করতে সক্ষম। নিম পাতার গ্রোথ প্রোমোটিং ইফেক্ট, ইমিউনো স্টিমুলেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রভাবসহ ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এখানে শনাক্ত করা হয়েছে এবং সেই উপাদান দিয়ে এই সল্যুশন বা নির্যাস তৈরি করা হয়েছে।'
তিনি আরো জানান, 'এটি ব্রয়লার এর জন্য প্রায় ১০০ শতাংশ নিরাপদ। এটি দেওয়ার পর দেখা গেছে কোন রোগের উদ্ভব হয়নি অর্থাৎ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া একদমই নেই। সতর্কতা স্বরুপ মুরগিকে ভ্যাকসিন দেওয়া হলেও আর কোন ওষুধ লাগে না, কারণ এসময় পোল্ট্রি কোন রোগেও আক্রান্ত হয় না।'
তিনি বলেন, 'আমরা এখন এটা পেটেন্ট করার চেষ্টা করছি। তাছাড়া আমরা এটার ল্যাব ট্রায়াল শেষ করেছি। দিনাজপুর ও গাজীপুরে ফিল্ড ট্রায়ালও সম্পন্ন হয়েছে। দিনাজপুরে ফিল্ড ট্রায়ালে এর ব্যবহারে আমরা দেখেছি প্রতিটি মুরগির ওজন প্রায় ৩৫০-৫০০ গ্রাম বেড়েছে, যা প্রতিটি মুরগির দেহের ওজনের প্রায় ৩০%। এর স্বাদ সাধারণ ব্রয়লারের তুলনায় বেশি। পাশাপাশি মাংসের গুণগত মানও অনেক ভালো।'
সল্যুশনটির দাম সম্পর্কে ড. শফিকুল বলেন, '১০০ মুরগি পালন করতে প্রায় ২ লিটার সলিউশন লাগে। যার দাম প্রায় ৪০০০ টাকা। কিন্তু মুরগির ওজন বাড়ায় এই দাম কয়েক গুণ লাভ সহ উঠে আসে।'
অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই গবেষণা শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শিল্পেও একটি বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। BAUSafe-Vet যদি সফলভাবে বাজারে আসে, তবে এটি পোল্ট্রি খামারিদের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ হয়ে উঠবে এবং বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পকে বিশ্ববাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।’