জাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ!
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের এক ছাত্রী। হয়রানির বিচার চেয়ে বিভাগীয় সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে লিখিত অভিযোগ 'ধামাচাপা' দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ তুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম সানোয়ার সিরাজ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
এদিকে হয়রানির ঘটনা উল্লেখ করে বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। ১৯ সেপ্টেম্বর দায়ের করা অভিযোগ পত্র গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে পাঠান বিভাগীয় সভাপতি।
এদিকে গত এক বছর ধরে অভিযোগ করে কোনো বিচার না পাওয়ায় এবং শিক্ষক সানোয়ার সিরাজের অব্যাহত হয়রানির ফলে মানসিকভাবে প্রচণ্ডভাবে ভেঙে পড়েন ভুক্তভোগী ছাত্রী। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছাত্রী ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ২৬টি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ভুক্তভোগী ছাত্রীকে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়।
বিভাগীয় সভাপতি বরাবর দায়ের করা অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ছাত্রী উল্লেখ করেন, 'ভালো পরীক্ষা দেওয়া সত্ত্বেও তৃতীয় বর্ষে সানোয়ার সিরাজের কোর্সে কম মার্কস পাই। ফলশ্রুতিতে আমি ওই কোর্স মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে চাই। আর এজন্যই আমি সানোয়ার সিরাজের শরণাপন্ন হই। এ সময় তিনি আমার মোবাইল নম্বর নিয়ে রাখেন। তিনি আমাকে বলে রাখেন, যেকোনো কারণে যেন যোগাযোগ করি।'
'পরীক্ষার দিন (গত বছরের ১২ মার্চ) তিনি ফোন করেন। পরীক্ষা কেমন হলো জানতে চান। এরপর ওই রাতেই তিনি আবারও ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন এবং আমার সঙ্গে ঘোরাফেরা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হঠাৎ করে তার এ ধরনের আচরণে আমি বিস্মিত হই। পরবর্তীতে আমি বিভাগে গিয়ে তার কাছে জানার চেষ্টা করি যে, তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল কিনা। কিন্তু তিনি নিশ্চিত করেন যে আইডি হ্যাক নয় বরং তিনিই এই মেসেজ প্রদান করেছেন। এ সময় তিনি আরও বলেন যে, আমার প্রতি তীব্র শারীরিক আকর্ষণ বোধ করেন, আমার সঙ্গে সময় কাটাতে চান, ঘুরতে চান। আমি ধারাবাহিকভাবে সানোয়ার সিরাজের এমন আচরণে খুব বিব্রত ছিলাম ফলে বারবার ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাক্টিভ করছিলাম। কিন্তু তিনি রেগুলার আমাকে উত্যক্ত করে যাচ্ছিলেন।'
'আমি এ ঘটনার জন্য সানোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার ইচ্ছা পোষণ করি। কিন্তু আসন্ন স্নাতকোত্তর পরীক্ষার কারণে এই মুহূর্তে অভিযোগ না দেওয়ার জন্য অনেকে আমাকে পরামর্শ দেন। এ অবস্থায় আমি সানোয়ারের আচরণে হতাশ হয়ে পড়ি। পরবর্তীতে তিনি আমাকে আবার কল করে ড্রেস গিফট করা, ঢাকা এবং সাভারের রেস্টুরেন্টে খাওয়া, রাতে একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া এবং স্ত্রীর অনুপস্থিতে তার বাসায় রাত যাপন করার প্রস্তাব দেন। এ সময় তিনি আরও কিছু অশালীন কথাবার্তা ও কুপ্রস্তাব দেন। আমি তার ধারাবাহিক অত্যাচারে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং একাধিক ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হই।'
'পরবর্তীতে সানোয়ার সিরাজের যৌন নিপীড়নমূলক কথাবার্তা, ফোন কল রেকর্ড ও মেসেঞ্জারের চ্যাটের প্রমাণ বিভাগের তৎকালীন সভাপতি খন্দকার শামসুন্নাহারের কাছে হস্তান্তর করি। কিন্তু এর কারণে পরবর্তীতে একটি অনুষ্ঠানের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আমার ওপরে চড়াও হন খন্দকার শামসুন্নাহার এবং তিনি আমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেন।'
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, 'মহিলা পরিষদের একটি অনুষ্ঠানে আমি আমার হয়রানির কথা জানাই। কিন্তু এসব শুনে বিভাগের সাবেক সভাপতি খন্দকার শামসুন্নাহার আমাকে বিভিন্নভাবে থ্রেট করেন যাতে বিভাগে লিখিত অভিযোগ না নিয়ে যাই। আমি পরে তাকে কিছু বিষয় শেয়ার করি। তিনি আমাকে সহানুভূতি জানিয়ে এসব ভুলে গিয়ে ক্যারিয়ারের দিকে নজর দিতে বলেন। বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে তিনি এসব গোপন রাখার কথা ছিল। কিন্তু এসব শিক্ষকদের মধ্যে ভাইরাল করে দেন। এর মধ্যে আমার পরীক্ষা। আমি আসলে আর লড়াই করতে পারছিলাম না।'
অভিযোগের বিষয়ে বিভাগের সদ্য সাবেক সভাপতি অধ্যাপক শামসুন্নাহার খানম বলেন, 'আমাকে কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ দেয়নি। আমার বিরুদ্ধে যা বলছে তা বানিয়ে বলছে। এসব মিথ্যা, বানোয়াট।'
এদিকে সানোয়ার সিরাজের ফেসবুক আইডি থেকে ভুক্তভোগী ছাত্রীর মেসেঞ্জারে পাঠানো আপত্তির ক্ষুদে বার্তার স্ক্রিনশট বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-এর হাতে রয়েছে।
অভিযুক্ত সানোয়ার সিরাজের সঙ্গে দুইদিন ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার বিভাগে গিয়ে বারবার চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। বিভাগের তার নির্ধারিত রুমটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। অন্যদিকে তার মোবাইল নাম্বারটিও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে অভিযুক্ত সানোয়ার সিরাজের বিরুদ্ধে এর আগেও তার স্ত্রী একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে 'অনৈতিক' সম্পর্কের অভিযোগ এনেছিল। যার একটি কপি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-এর হাতে রয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে বিভাগের বর্তমান সভাপতি নাসরিন সুলতানা বলেন, 'আমি গত ১৯ তারিখ অভিযোগ পত্রটি পেয়েছি। কিন্তু তার কিছু প্রমাণপত্র আমাকে দেওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে আমি গত ২৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে হস্তান্তর করি।'