ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত বুয়েট, থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শিথিলের ঘোষণা দেওয়ায় আগামীকাল সোমবার (১৪ অক্টোবর) যথাসময়েই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, বুয়েটের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সকল অনুষদের সকল বিভাগের স্নাতক শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা ১৪ অক্টোবর নির্ধারিত সময় সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। যানজট এড়াতে সকল পরীক্ষার্থীকে সকাল ৮টার মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুয়েট ক্যাম্পাসে দুই শিফটে ১০ কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা হবে।
ভর্তি কমিটি সূত্র জানিয়েছে, এ বছর ভর্তির জন্য ১৬ হাজার ২৮৮টি আবেদন পড়েছিল। তার মধ্যে থেকে ১২ হাজার ১৬১ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। আট হাজার ৮৯৬ জন ছাত্র ও তিন হাজার ২৬৫ জন ছাত্রী। আর মেধা অনুযায়ী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন এক হাজার ৬০ জন। এরমধ্যে এক হাজার পাঁচ জন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ও ৫৫ জন আর্কিটেকচার বিভাগে ভর্তি হতে পারবেন। আর্কিটেকচার বিভাগে ভর্তির জন্য দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় ড্রয়িং পরীক্ষা দিতে হবে। আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা ফল প্রকাশিত হবে।
গতকাল শনিবার একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে নির্ধারিত সময়েই বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। রাতেই আসন বিন্যাসসহ দাফতরিক নানা কাজ সম্পন্ন করেন ভর্তি পরীক্ষা কমিটি। আজ দুপুরে ভর্তি পরীক্ষায় নিরাপত্তার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রোববার ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের মূল গেইটের সামনেই ভর্তি পরীক্ষার সিট প্ল্যান বড় ব্যানারে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের প্রতিটি স্থানেই সিট প্ল্যান টাঙানো হয়েছে। ভবনগুলোতেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আর কর্মকর্তা কর্মচারীরাও ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। এছাড়াও অনেক ভর্তিচ্ছু অভিভাবকের সঙ্গে সিট প্ল্যান দেখে গেছেন।
রামপুরা থেকে সিট প্ল্যান দেখতে আসা ভর্তিচ্ছু সুমনা ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'কাল যেহেতু পরীক্ষা, তাই আজ এসে পরীক্ষার সিট প্ল্যান দেখে গেলাম। যাতে কাল এসে সিট খুঁজতে সময় নষ্ট না হয়। পরীক্ষার জন্য ভালোভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি, বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পাব।'
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'এত বাধার মধ্যেও আমরা ভর্তি পরীক্ষার যে কাজগুলো ছিল সেগুলো শেষ করতে পেরেছি। আমাদের পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল ৫ অক্টোবর। কিন্তু পূজার মধ্যে হওয়ায় ভর্তিচ্ছুদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা পূজার শেষে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা আশা করছি, সুষ্ঠুভাবে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরাও আমাদের সহায়তা করবেন।'
বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'ভর্তি পরীক্ষার জন্য যে কাজগুলো বাকি ছিল গতকাল দুপুর থেকেই সেগুলো আমরা শুরু করেছি। আজ রাতের মধ্যেই সকল কাজ শেষ হবে। প্রশ্ন তৈরিসহ প্রাথমিক কাজ আমরা আগেই শেষ করেছি। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। আগামীকাল পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।'
এর আগে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাঁচ দফা দাবি মেনে নেওয়ায় বুয়েট ক্যাম্পাস ক্যাফেটেরিয়ার সামনে আলোচনা করে আন্দোলন শিথিলের সিদ্ধান্ত নেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা যথা সময়েই অনুষ্ঠিত হবে। আবরার হত্যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের জন্য যে উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছিল ভর্তি পরীক্ষার কারণে সেই আন্দোলন শিথিল করা হলো।
তারা জানান, আন্দোলন চলবে। তবে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আগামী ১৩ ও ১৪ অক্টোবর আন্দোলন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন ভর্তিচ্ছুদের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
বুয়েট চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তিথি জানান, সকাল থেকেই ভর্তিচ্ছুদের সহযোগিতার জন্য ক্যাম্পাসে অবস্থান নেবে বুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীরা। এ সময় তাদেরকে খাবার পানি ও স্ন্যাকস দেওয়া হবে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে সহযোগিতার জন্য রোভার স্কাউটের দল উপস্থিত থাকবে।
বুয়েট শিক্ষার্থীরা জানায়, ক্যাম্পাসে একাধিক আঞ্চলিক সংগঠন রয়েছে। অঞ্চল ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য হেল্প ডেস্ক বসানো হবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা অনেক সময় ক্যালকুলেটর আসতে ভুলে যায় এজন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ অক্টোবর বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শের-ই বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে তার লাশ সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়। এই হত্যার বিচারের দাবিসহ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।