জাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ ৪ জনের পদত্যাগ
জাবি উপাচার্য অপসারণ আন্দোলনজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সোহেল রানা সহ বেশ কয়েকজন সমিতি থেকে পদত্যাগ করেছেন।
এছাড়াও পদত্যাগ করেছেন সমিতির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন তুহিন, সদস্য অধ্যাপক মাহবুব কবির ও সদস্য অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তারা পদত্যাগ করেন।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সোহেল রানা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'আপাতত আমরা চারজন পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি আরও অনেকেই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন। আমরা শিক্ষক সমিতির সভাপতির কাছে শিগগিরই পদত্যাগ পত্র জমা দেব।'
এ বিষয়ে অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, 'আন্দোলনকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের সহায়তায় হামলা চালিয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নির্লিপ্তভাবে উপাচার্যের পক্ষ অবলম্বন করে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা শিক্ষক সমিতি থেকে পদত্যাগ করছি।'
এর আগে, দুর্নীতির অভিযোগে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
হামলার ঘটনার পরে এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, 'আমার সহকর্মী ও ছাত্রলীগ কর্মীদের এ গণ অভ্যুত্থানের জন্য ধন্যবাদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন খুলে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বাভাবিক গতিতে চলবে।'
হামলায় ৮ শিক্ষক, ৪ সাংবাদিক সহ অন্তত ৩৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া দায়িত্ব পালন করার সময় চার সাংবাদিককেও মারধর করে আহত করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আটজনকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানান জাবি চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. রেজওয়ানুর রহমান।
আহত শিক্ষকরা হলেন- নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাইদ ফেরদৌস, মীর্জা তাসলিমা সুলতানা, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা সহ আরও কয়েকজন।
আহত সাংবাদিকরা হলেন- প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মাইদুল ইসলাম, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের প্রতিনিধি আজাদ, বার্তাবাজারের প্রতিনিধি ইমরান হোসাইন হিমু, বাংলা লাইভ টোয়েন্টিফোরের প্রতিনিধি আরিফুজ্জামান উজ্জল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে সোমবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা থেকে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেছে রেখেছিলেন 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর' ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সকাল সোয়া ১১টায় উপাচার্য সমর্থক শিক্ষক-কর্মকর্তারা উপাচার্যকে বাসা থেকে বের করে তার কার্যালয়ে নিয়ে যেতে আসেন।
এ সময় উপাচার্য সমর্থক শিক্ষক ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক-বিতণ্ডা চলতে থাকে। এর মধ্যেই পৌনে ১২টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানার নেতৃত্বে একটি মিছিল নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের এলোপাতাড়ি মারধর করতে শুরু করে।