'অটোরিকশা বন্ধ করার পর অন্তত ১০০টা প্যাডেল রিকশা চালু করা উচিত ছিল। আর এটা চালু না করলে অটোরিকশা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে যাবে। আমরা চাইলে কন্ট্রোলড ড্রাইভার দিয়ে, গতি নিয়ন্ত্রিত স্পেশালাইজড ভ্যান বা গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারি ১-২ মাসের মধ্যে। এছাড়া পথচারীদের জন্যেও ক্যাম্পাসের আর্টারি রোডে একটা পরিকল্পিত ফুটপাত দরকার'।
নিরাপদ ও বাসযোগ্য ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) 'ক্যাম্পাসের সড়ক নিরাপত্তা' বিষয়ক উন্মুক্ত আলোচনায় এমনটাই মন্তব্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ও বিআইপি'র (বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স) সভাপতি আদিল মোহাম্মদ খান।
শিক্ষকদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যাবহারকে নিরুৎসাহিত করে তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষকদের একটা বড় দায় আছে আমরা চাইলে শিক্ষকরা ব্যক্তিগত গাড়ি কম ব্যবহার করতে পারি। আর একান্তই ব্যবহার দরকার হলে একটা কমিউনিটি পার্কিং রাখা জরুরি। আমরা দাবি জানাবো ক্যাম্পাসে যেসকল ব্যক্তিগত গাড়ি চলবে সেগুলোর গতি ঘণ্টায় ২০ কি.মি এর বেশি হবে না। এখানে যদি শিক্ষকদের ডোর টু ডোর সার্ভিস বন্ধ করে দিলে হয়তো অনেকেই বলবেন এটা আমাদের সমাজে চলতে গেলে বৃহত্তর স্বার্থে যেটা ভালো হয় সেটা করা উচিত।'
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন মহুয়া মঞ্চে সচেতন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দের আয়োজনে এ উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়৷
উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী সুয়াইব হাসানের সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রশাসনের রিকশা বন্ধের সাথে একমত পোষণ করতে পারছি না, এর পরিবর্তে পায়ে চালিত রিকশা চালু রাখা যেত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুরোটাই হচ্ছে হাঁটার রাস্তা, এখানে ছাত্র-শিক্ষক সকলের যাতায়াতের ক্ষেত্রে হাঁটা কেন্দ্রিক মনোভাব তৈরি করতে হবে। সকলের এই অবস্থার তাৎক্ষণিক মোকাবিলায় নিজেদের ব্যবহারগত পরিবর্তন আনতে হবে, ব্যবস্থাপনা মানতে হবে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, জন মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে তারা কি চায় সে অনুসারে কাজ করতে হবে। যাদের জন্য কাজ করা হচ্ছে সেটা যেন তাদের কাছে বোধগম্য একইসাথে কার্যকরী হয়। আর মাস্টারপ্ল্যান হলে সেখানে ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানাররাও কাজ করবে বা সেখানে ট্রান্সপোর্ট রিলেটেড সমস্যাগুলোর সুষ্ঠু সমাধান চলে আসবে বলে আমরা আশা করছি।
আলোচনা অনুষ্ঠানে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী মুসা ভুঁইয়া বলেন, 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাগুলোর হায়ার্রাকি ঠিক নেই, অথচ রাস্তার হায়ারার্কি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানিংয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট৷ ক্যাম্পাসে ফুটপাত বা মানুষের হাটার চলার জায়গা নেই। এই যে অটোরিকশা বন্ধ করে শাটল বাস সিস্টেম পরিচালনা কার্যকর কোনো সলিউশন না। কেউ অসুস্থ্য হলে তাকে মেডিকেলে নেয়ার জন্য কি তখন শাটল বাসের অপেক্ষা করবে? তাই হুটহাট সিদ্ধান্তের আগে কার্যকর সমাধান খোঁজা দরকার। এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সলিউশন হতে পারতো পায়ে চালিত রিকশা। আর ক্যাম্পাসে পায়ে চালিত রিকশা ব্যাবস্থাপনাও সম্ভব, এর জন্য আমরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বনানী বা বসুন্ধরা সোসাইটিকে উদাহরণ হিসেবে নিতে পারি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, 'আমরা কিছু হলেই আন্দোলন করি কিন্তু এই যে মাস্টারপ্ল্যান করা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলো কিন্তু তা কেনো হচ্ছে না সেটা আমরা খোঁজ নিয়ে দেখি না। জাহাঙ্গীরনগরে দেশসেরা পরিকল্পনাবিদরা আছেন তাদেরকে আমরা ক্যাম্পাসের মাস্টারপ্ল্যানের কাজে সুষ্ঠুভাবে সম্পৃক্ত করতে পারছি না কিন্তু তারা দেশে বিদেশে প্ল্যান করেন। আমরা চাই নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনায় আমূল পরিবর্তনে অগ্রগন্য ভূমিকা পালন করতে পারবে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ে পথচারী বেশী, তাই পথচারীদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি মন্তব্য করে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আক্তার মাহমুদ বলেন, 'জাহাঙ্গীরনগরের মতো ইউনিক ক্যাম্পাসে মাস্টারপ্ল্যান থাকবে না সেটা অগ্রহনযোগ্য। এখানে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার যে বাজেট এসেছে সেখানে যে কম্পোনেন্টগুলো আছে সেটার বেশীরভাগই ভবন বা দালানকোঠা কেন্দ্রিক। এই ক্যাম্পাসের জন্য একটা পরিপূর্ণ মাস্টার প্ল্যান এখন সময়ের দাবি৷ ক্যাম্পাসে যারা থাকে তারা কি চায় সেটা ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানিংয়ে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। এখানে পায়ে চলা মানুষ বেশী থাকবে তাই সে অনুযায়ী পেডেস্ট্রিয়ান এনভায়রনমেন্টটা নিশ্চিত করা জরুরি। এ জন্য পথচারীদের গুরুত্ব দিয়ে ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান করতে হবে। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তার হায়ারার্কি নিশ্চিত করতে হবে। সকলের জন্য যে পরিকল্পনা মঙ্গলকর হবে আমাদের সেটাই ধারণ করা উচিত।