পরিবেশ সুন্দর করতে শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে: রাষ্ট্রপতি
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশের পরিবেশকে সুন্দর করতে জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। এ ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণা চালানো এবং ভূমিকা রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ সমাবর্তনে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, আমাদের ছাত্র সমাজ অতীতে পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানকে পরাজিত করেছে, মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ উৎসর্গ করে বিজয় লাভ করেছে, সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেছে। তাহলে দেশের পরিবেশকে সুন্দর করতে পারবে না কেনো? বিদেশে গিয়ে আমরা থুথু ফেলতে গেলে, এক টুকরো কাগজ ফেলতে গেলে চিন্তা করি। অথচ দেশে এসে আমরা কি করি? দেশের রাস্তাঘাট, নদী-নর্দমা বর্জে ভরে যাচ্ছে, পলিথিনের কারণে পানি সরতে পারে না যার ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। অথচ জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে পরিবেশ সুন্দর করা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসলে এ ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জিত হবে। তিনি তাদেরকে এটি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণের তাগিদ দেন।
তিনি বলেন, আদর্শ শিক্ষক-গবেষক জাতির মূল্যবান সম্পদ, অনুসরণীয় আদর্শ। শিক্ষক-গবেষকদের জ্ঞান, দক্ষতা ও প্রজ্ঞা ভবিষ্যৎ জাতি গঠনের অন্যতম নিয়ামক শক্তি। তাই শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রয়োজন দক্ষ, অভিজ্ঞ ও জ্ঞানের প্রতি গভীর অনুরাগী শিক্ষকমণ্ডলী, যারা নিজেরা নিরন্তর সর্বশেষ জ্ঞান চর্চায় রত থাকবেন এবং তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করবেন।
তিনি বলেন, শিক্ষক যখন তার মহান আদর্শ থেকে দূরে চলে যান, তখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে জ্ঞান অর্জন ও বিতরণে শিক্ষকমণ্ডলী নিবেদিত থাকবেন জাতি তা প্রত্যাশা করে।
গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, তোমরা আজ দেশের উচ্চতর মানবসম্পদ। তোমাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। সে প্রত্যাশা পূরণে তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও সৃজনশীলতাকে জাতির বৃহত্তর কল্যাণে নিয়োজিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে ত্রিশ লাখ শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত উত্তরসূরি তোমরা। তোমরা এ দেশকে এগিয়ে নেবে সুন্দর আগামীর পথে, সমৃদ্ধির পথে। মনে রাখবে এ দেশ ও সমাজ আজ তোমাদের এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তাদের কাছে তোমরা ঋণী। তোমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও মনন দিয়ে দেশ মাতৃকার কল্যাণ করতে পারলে সে ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে।
রাষ্ট্রপতি ২৩ জন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল প্রদান করেন। ৬ষ্ঠ সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ৪৪৭৮ জনকে স্নাতক, ২৫৩০ জনকে স্নাতকোত্তর, ৫ জনকে এমফিল ও ৮ জনকে পিএইচডি এবং ১৭ জনকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন ডিগ্রি প্রদান করেন।
এর আগে রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে তিনি সমাবর্তন শোভাযাত্রাসহ অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন। রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছালে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের অদূরে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ‘কালজয়ী মুজিব’ উদ্বোধন করেন।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ।
সমাবর্তনের বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জনসহ গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ। মূল সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস।