ফিলিস্তিনি নিপীড়িত নাগরিকদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতনসহ ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানিয়েছে সাধারণ ছাত্র সমাজ। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ফিলিস্তিন সংহতি দিবস উপলক্ষে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে র্যালির আয়োজন করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৯নভেম্বর) রাজধানীর টিএসসি রাজু ভাস্কর্যে আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্যালেস্টাইন দিবস উপলক্ষে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন' অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হাসিবুর বলেন, ইসরাইল নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর সৃষ্টিলগ্ন থেকে যে অত্যাচার চালাচ্ছে বর্তমানে এই অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। এই ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ তো নিচ্ছেই না। উপরোন্ত তারা কোনো সমবেদনাও দেখাচ্ছে না। এই অত্যাচার নিরসনে আমরা ফিলিস্তিনি নিপিড়ীত নাগরিকদের পক্ষে আমাদের সংহতি জানাচ্ছি। অতি দ্রুত যেনো ফিলিস্তিনি নিপিড়ীত নাগরিকদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন বন্ধ হয় এবং ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ হয়।
ফাহিম বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক ফিলিস্তিন সংহতি দিবস উপলক্ষে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ র্যালির আয়োজন করেছি। ফিলিস্তিন যেভাবে জুলাই আন্দোলনকে ইনস্পায়ার (উৎসাহিত) করেছে আমরা সেই জুলাইয়ের শহীদদের স্মরণে রেখে ফিলিস্তিনি নিপীড়িত নাগরিকদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবিতে র্যালির আয়োজন করেছি।
এসময় ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’; ‘গণহত্যা বন্ধ কর, করতে হবে, করতে হবে’; ‘শিশু হত্যা বন্ধ কর, করতে হবে, করতে হবে’; ‘নারী হত্যা বন্ধ করো, করতে হবে, করতে হবে’; ইহুদিদের কালো হাত ভেঙে দেও, গুড়িয়ে দেও’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়া হয়।
এছাড়াও র্যালিতে বাংলাদেশে ফিলিস্তিনের সর্ববৃহৎ পতাকা প্রদর্শনও করা হয়।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক সিট বন্টনে বৈষম্য হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। সিট বরাদ্দে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে হল প্রশাসন।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শেখ এ.বি.এম জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের আবাসিকতার জন্য আবেদন করতে বলা হয়।
এতে বলা হয়, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জানানো যাচ্ছে যে, আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে আবাসিকতার আবেদন আহবান করা যাচ্ছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যহীন দেশ গঠনের দিকে আগানোর পর এমন বৈষম্য মানতে পারছেন না কেউ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত প্রায় ১০ হাজার সদস্যের ফেসবুক গ্রুপ ইবিয়ান ফ্যামিলিতে ইইই বিভাগের কাওসার আহমেদ লিখেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছিলো। অথচ নতুন কোটা চালু করে বৈষম্য তৈরি করলেন।
এতে এইচ এম মহসিন মন্তব্য করে বলেন, খুবই লেইম সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। অপর এক শিক্ষার্থী জহুরুল ইসলাম লিখেন, আগে ছিলো মুক্তিযোদ্ধা কোটা এখন বৈষম্যবিরোধী কোটা।
সমালোচনায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার পাবে’ অংশটি কেটে দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, বিজ্ঞপ্তি বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। এটা তো আরেক বৈষম্য। ওনি অন্তত আমাকে জানাতে পারতো। আমাদের কখনোই এমন কোনো দাবি বা চাওয়া ছিল না, আগামীতেও থাকবে না। আন্দোলন করেছি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে চাই।
এ বিষয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমি এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। আসলে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা থেকেই আগে একটা খসড়া কপি ছিল তা প্রিন্ট করে টাঙানো হয়েছে। কারও চাপে বা প্রভোস্ট কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে এমন করা হয়নি।
ডাল-ভাতের দাওয়াত শীর্ষক এক পুনর্মিলনীকে কেন্দ্র করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছে। এতে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় বাকবিতণ্ডা থেকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে সেখানে পুলিশ উপস্থিত হলে তৎসংলগ্ন বিএনসিসি ভবনের পেছন থেকে ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাবি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সাবির হোসাইন সাব্বিরের ‘ডাল-ভাতের দাওয়াত’ শীর্ষক প্রীতিভোজ অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি পারভেজ মল্লিকের অনুসারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান সোহান তার দলবল নিয়ে আসলে এই আয়োজন নিয়ে সাব্বির রহমান ও তার অনুসারীদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের কথা কাটাকাটি থেকে সংঘর্ষের উপক্রম হলে সাবেক বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যস্থতায় বিষয়টির মীমাংসা হয়।
এদিকে দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি (বাংলাদেশ ন্যাসনাল ক্যাডেট কোর) ভবনের পেছনে বোমা সদৃশ বস্তুর উপস্থিতি জানতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখা ও আশুলিয়া থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পরবর্তীতে পুলিশ এসে বোমা সদৃশ বস্তুটি উদ্ধার করে পানি দিয়ে নিষ্ক্রিয় করে। এরপর, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ক্যাফেটেরিয়ার ভেতরে প্রবেশ করে নেতৃস্থানীয়দেরকে দ্রুত আয়োজন শেষ করে স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ প্রদান করেন।
এদিকে ছাত্রদলের এক পক্ষের এ আয়োজনে নেতাকর্মীদের সাথে বহিরাগতদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। সাভারের কলমা ও রোয়ালিয়া থেকে আগত একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে বহিরাগতের উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এসময় একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলে জানা যায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা নবিনুর রহমান নবিন এবং হুমায়ুন হাবীব হিরণের আমন্ত্রণে এই অনুষ্ঠানে এসেছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ.এক.এম রাশিদুল আলম বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমরা সংবাদ পাই বিএনসিসি অফিসের পেছনে বোমা সদৃশ বস্তু পাওয়া গেছে। নিরাপত্তা শাখা থেকে আমাকে কনফার্ম করা মাত্র আশুলিয়া থানার এডিশনাল এসপিকে অবহিত করি। এডিশনাল এসপি শাহিনুল কবিরের উপস্থিতিতে সেটি উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বজায় রাখার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে সজাগ দৃষ্টি রাখার অনুরোধ করবো।
আয়োজনে বহিরাগতদের উপস্থিতির প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা চাই না কোনোভাবেই এ ধরণের ঘটনা ঘটুক। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা সাবেক অ্যালামনাই আছেন তাদেরও সচেতন হওয়া উচিৎ। তাদের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-কানুনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠান করা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সাবির হোসাইন সাব্বির বলেন, আমরা সাবেক-বর্তমানরা মিলে একটা আয়োজন করেছিলাম। এখানে নিজেদের মধ্যে আলাপ হয়েছে, কোনো বাকবিতণ্ডা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার এডিশনাল এসপি শাহিনুল কবির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কল পেয়ে আমরা এখানে এসেছি। ঘটনাস্থল থেকে লাল টেপ দিয়ে পেঁচানো বোমাসদৃশ একটি বস্তু উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করেছি। অবস্থাদৃষ্টে আমাদের মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার লক্ষ্যে কেউ এই কাজটি করেছে৷ নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে সার্বিকভাবে সিসিটিভি নজরদারি বাড়ানোর জন্য। পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকেও সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে এখানকার নিরাপত্তা বজায় রাখা।
গত ১৪-১৭ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় মদদদাতা একজনকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সোপর্দ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় মীর মশাররফ হোসেন হলে নিজের জিনিসপত্র নিতে আসলে শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সোপর্দ করে৷
আটককৃত শিক্ষার্থী ফয়সাল আলিম আলফা গণিত বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি এতোদিন মীর মশাররফ হোসেন হলে অবৈধভাবে অবস্থান করে আসছিলেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে যায়, গত ১৫ই জুলাই হামলার পর থেকে এই গণঅভ্যূত্থানকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে আলফা ক্রমাগতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে আসছিলেন। এছাড়া আলফা ফেসবুকে বিভিন্ন ফেইক আইডি খুলে আন্দোলনকরীদের হুমকি দেন, আন্দোলনকে থামানোর জন্য। তিনি নিজ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য পদে এখনো বহাল রয়েছে। শিক্ষার্থীরা আরো জানান, আটককৃত এই শিক্ষার্থী হলে মাদক সেবন ও মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য ছিল৷
শিক্ষার্থীরা আরো জানান, প্রথমে হলের শিক্ষার্থীরা আলফাকে আটক করে হলের গেস্ট রুমে নিয়ে এসে প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হয়৷ এরআগে, ৫ই আগস্টের পর থেকে তাকে বলা হয়েছিল যেন হলের এদিক না আসে। এরপরও সে কথা না শুনে গোপনে হলের সামনে কয়েকবার আসে এবং হলে থাকা শুরু করে। তার এই আসা এবং হলে থাকা সন্দেহজনক মনে হয়েছে। এছাড়া ৫৩ ব্যাচের উসকানিমূলক কাজে জড়িত থাকার কারণে তাকে আটক করে গেস্ট রুমে নিয়ে আসা হয়।
মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, আলফার বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযোগ পেয়েছি। জুলাইয়ের হামলার সমর্থনকারী হিসাবে থাকায় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে আলফা হল ত্যাগ করে৷ পরবর্তীতে আলফা আবারও আসলে শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করে ও গেস্টরুমে রাখে এবং বিষয়টি আমাকে জানায়। পরে সাথে সাথে প্রক্টর অফিসে জানানো হয়।
এ ব্যাপারে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাড়ে ৩টায় দিকে ফোন পেয়ে আমরা এখানে আসি। এখন আমরা তার নিরাপত্তায় অফিসে নিয়ে যাচ্ছি৷ এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।