কাগজে চিত্র শিল্পকে কীভাবে যুগের পর যুগ একই অবস্থায় স্থায়িত্ব দেওয়া যায় এবং বাংলাদেশে সেই সংরক্ষণ ব্যবস্থা কতটুকু জোড়দার করা প্রয়োজন সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন শিল্প সংরক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাচ্য কলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী গাজী মোঃ জহিরুল ইসলাম।
সোমবার (৪ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ওসমান জামাল মিলনায়তনে ❝শিল্পকর্ম সংরক্ষণ বিষয়ক সচিত্র উপস্থাপন❞ শীর্ষক সেমিনারে এসব বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।
সেমিনারে উপস্থাপক জহিরুল ইসলাম বলেন, শিল্পকর্ম সংরক্ষণ একটি জটিল এবং সংবেদনশীল প্রক্রিয়া। শিল্পকর্মের নান্দনিক এবং ঐতিহাসিক তাৎপর্য সংরক্ষণ এবং এর অবস্থা স্থিতিশীল করার মধ্যে একটি সতর্ক ভারসাম্য প্রযোজন। প্রতিরোধমূলক সংরক্ষণ, পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ এবং বিশেষ পুনরুদ্ধার কৌশলগুলির মাধ্যমে সংরক্ষণকারীরা কাগজ-ভিত্তিক শিল্পের দীর্ঘায়ুকে হুমকির মুখে ফেলে এমন অনেক ঝুঁকি প্রশমিত করতে পারে। এই পদ্ধতিগুলি প্রযোগ করে, সংরক্ষণকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকর্মগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রশংসা ও অধ্যয়নের জন্য অক্ষত রাখাকে নিশ্চিত করতে পারে।
কাগজের পুরুত্বের উপর সংরক্ষণের স্থায়িত্ব নির্ভর করে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাগজের পুরুত্বের সাথে চিত্রকর্মের স্থায়িত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। অনেক মোটা কাগজও অল্পদিনে নষ্ট হয়ে যায়। আবার জাপানিজ টিস্যুর মত অনেক চিকন কাগজও অনেকদিন টিকে থাকে। মূলত সংরক্ষণের স্থান, তাপমাত্রা, কাগজ এসিড প্রুফ করাসহ সংরক্ষণ দক্ষতার উপর চিত্রকর্মের স্থায়িত্ব নির্ভর করে।
এই প্রেজেন্টেশনে গাজী মোঃ জহিরুল ইসলাম বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম তৈরির জন্য প্রাথমিক সহায়তা হিসাবে ব্যবহৃত উপকরণগুলির ধরন সম্পর্কে আলোচনা করেন। বিশেষভাবে কাগজ উৎপাদন প্রক্রিয়া ও কাগজে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণের রচনা যেমন জলরঙ, কাঠকয়লা, গ্রাফাইট, প্যাস্টেল, কালি, এচিং ও লিথোগ্রাফি ইত্যাদি মাধ্যমের উপকরণগত বৈশিষ্ট্য, প্রযোগ কৌশল ও সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দেন। প্রিজারভেশন, কনজারভেশন ও রেস্টোরেশনর সংজ্ঞা এবং শিল্প সংরক্ষণের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন তিনি।
অনারারি প্রফেসর ড. আবদুস সাত্তার গাজী মোঃ জহিরুল ইসলামের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, চিত্রকর্মের সংরক্ষণের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে আমাদের উপমহাদেশ চিত্রকর্ম সংরক্ষণ করার জন্য যথাযথ তাপমাত্রা বা আবহাওয়া নেই। সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। সেজন্য আমি জহিরুল ইসলামের কাছে অনুরোধ জানাবো তিনি যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন।"
তিনি আরো বলেন, শিল্পকর্ম সংরক্ষণের বিষয়ে আমি একটি বই লিখছি। সেখানে আমি গাজী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের লেখা প্রকাশ করতে আগ্রহী।
উক্ত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রাচ্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শুশান্ত কুমার অধিকারী। তিনি সেমিনার শেষে শিল্পকর্ম সংরক্ষণ করতে নিজ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলামকে নিয়ে 'হাতে-কলমে'একটি কর্মশালা আয়োজনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
এ সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. আজাহারুল ইসলাম শেখ, অনারারি প্রফেসর ড. আবদুস সাত্তার ও চারুকলা অনুষদের অনান্য শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।