চবিতে কোয়ারেন্টিন সেন্টার, উদ্বেগ ও শঙ্কা
চট্টগ্রামের করোনা আক্রান্ত সন্দেহভাজনদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সেন্টার হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নির্মাণাধীন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলকে নির্ধারণ করায় উদ্বেগ ও শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে ভীতি ও উৎকণ্ঠা।
চবি শিক্ষক সমিতি এই পরিস্থিতিতে তৎপর হয়েছে। তারা মনে করেন, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সরকারের এবং দেশের পাশে দাঁড়ানো বিশ্ববিদ্যালয়ের ও শিক্ষকদের মানবিক দায়িত্ব। কিন্তু দেশের পাশে দাঁড়ানো যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন তেমনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ হাজার ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারি এই দেশেরই সম্পদ। তাদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার কথা চিন্তা করাটাও আমাদের নৈতিক ও পবিত্র দায়িত্ব।
সমিতির সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এর সাম্প্রতিক কোয়ারিন্টিন বিষয়ক Infection Prevention and Control guidance for Long-Term Care Facilities in the context of COVID-19 নীতিমালায় সুস্পষ্ট ভাবে বলা আছে, কোয়রান্টিন এর জন্য নির্ধারিত এলাকা হতে হবে জনবসতি থেকে দূরে এবং সুনির্দিষ্ট একটি দূরত্ব এক্ষেত্রে বজায় রাখতে হবে এবং আবাসস্থলে প্রতি রুমের সাথে সংযুক্ত শৌচাগার বা টয়লেট থাকতে হবে।
কিন্তু প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উক্ত হলের খুব কম দূরত্বের মধ্যেই আশেপাশে শিক্ষক ও কর্মচারিদের বসতি আছে এবং হলের রুমগুলোতে সংযুক্ত টয়লেট নেই, যা এর নীতিমালার ব্যতিক্রম। দ্বিতীয়ত, lancet গবেষনাপত্রে গত ২০ মার্চ এই মহামারী ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে কোয়ারান্টিন সুবিধা তৈরিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা মেনে না চলা এবং জীবাণুমুক্তকরন সুবিধা অনেক কোয়ারেন্টিন সেন্টার এ ছিলনা।
সমিতির বিবেচনায় এরকম সুবিধা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসেও নেই তাই এটি কোন ভাবেই করোনা আক্রান্তদের জন্য উপযুক্ত আবাস নয়। তদুপরি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন বায়োসেফটি লেভেল -২+ (জীবনিরাপত্তা স্কেল ২ এর অধিক) waste management system বা বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থাপনা নেই, যা নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন এ গত সপ্তাহে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী করোনা আক্রান্ত রোগীদের কোয়ারান্টিনের একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। এই ক্ষেত্রে সেই বর্জ্য নিশ্চিত ভাবে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়বে যার দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া বহন করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারি ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে কোয়ারেন্টিন থেকে সংক্রমনের সংখ্যা না কমিয়ে বরং বাড়িয়ে দিতে পারে বলে উল্লেখ করে এই সিদ্ধান্তটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ হাজার মানুষের সুরক্ষায় বাতিল ও পুনঃবিবেচনার জোরালো দাবি জানিয়েছে চবি শিক্ষক সমিতি।