তবুও স্বাস্থবিধি জরুরি

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস
  • লুৎফে আলি মহব্বত, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

তবুও স্বাস্থবিধি জরুরি

তবুও স্বাস্থবিধি জরুরি

ভ্যাকসিন প্রদানের কারণে কোথাও করোনার প্রকোপ কমছে। আবার কোথাও কোথাও বেড়ে চলেছে করোনাভাইরাসের থাবা। পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধান জরুরি। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থবিধি পালন করা অপরিহার্য। বৈশ্বিক মহামারি যতদিন থাকবে তত দিনই স্বাস্থবিধি মানতে হবে। এটাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সর্বসম্মত অভিমত।

অনেক দেশে করোনার গতি কিছুটা শ্লথ হলেও বাংলাদেশে আবার যেন ক্রমে ক্রমে করোনার থাবা বাড়ছে। দিনে দিনে পুনরায় দেশে বিস্তার লাভ করছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। তথাপি সাধারণ স্বাস্থবিধি মানার লক্ষণীয় চিত্র দেখা যাচ্ছেনা। প্রকাশ্যে সবকিছু চলছে আগের মতো। যেন কিছুই হয়নি!

বিজ্ঞাপন

প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, করোনায় শনাক্ত রোগির সংখ্যা আবারো বেড়েই চলছে। বুধবার (১০ মার্চ) শনাক্তের হার প্রায় ৬ শতাংশ। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরো ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৮ হাজার ৪৯৬ জনে। নতুন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ১০১৮ জন। মোট শনাক্ত ৫ লাখ ৫৩ হাজার ১০৫ জনে দাঁড়িয়েছে।

দুই মাস পর আবারো করোনায় শনাক্তের সংখ্যা হাজারের বেশি হলো। গত কয়েকদিনের পরিসংখ্যানে সংক্রমণ বৃদ্ধির চিত্র স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনের মাসগুলোতে সংক্রমণ আরো বাড়বে। টিকাকরণের পাশাপাশি তাই স্বাস্থবিধি সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে বিশেষ নজর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিশেষত, করোনার নতুন ধরনের প্রাদুভাবের কারণে সামাজিক সংক্রমণের ভীতি দেখা দিয়েছে নানা দেশে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন আসা-যাওয়া করছেন। তারা পরিবারের পাশাপাশি সামাজিক মেলামেশাও করছেন। বিয়ে-শাদি ও নানা অনুষ্ঠানেও কেউ কেউ অংশ নিচ্ছেন। ফলে ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি সীমিত থাকছে না।

স্বাস্থবিধি পালন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে কার্যকরী বলে বিবেচিত হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করছেন। স্বাস্থবিধিতে কয়েকটি ইস্যুকে জোর দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মাস্ক ব্যবহার, সাবান দিয়ে হাত ধৌত করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়গুলোই প্রধান। তদুপরি, ভিড় ও জনসমাগম এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রেও সতর্ক করা হয়েছে।

জনবহুল বাংলাদেশে এসব স্বাস্থবিধি মান্য করার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে অনীহা ও অসচেতনতা প্রবল। করোনার প্রাদুভাবের প্রথম দিকে কিছুটা সতর্কতা থাকলেও দিনে দিনে সবকিছুই শিথিল হয়ে গেছে। গণপরিবহণ, হাট-বাজার, এমনকি পাড়া-মহল্লাতেও গা ঘেঁষাঘেঁষি করে চলাফেরা করছে মানুষ। আচার-অনুষ্ঠানে দলে দলে মানুষ যোগ দিচ্ছে এবং মাখামাখি করছে। আরো লক্ষণীয় বিষয় হলো, অধিকাংশ লোকই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। অনেকে মাস্ক পরিধান করছেন 'নাম-কা-ওয়াস্তে' কিংবা স্টাইল বা দেখানোর উদ্দেশ্যে।

মানুষের এসব আচরণ মহামারিকালে খুবই বিপজ্জনক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। বাংলাদেশে যখন সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা সুস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে এবং পরিসংখ্যানের গতি ঊর্ধমুখী লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তখন টিকাকরণের পাশাপাশি স্বাস্থবিধি পালনের ক্ষেত্রেও কঠোরতা অবলম্বন করা অতীব জরুরি। প্রয়োজনে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষে স্বাস্থ্য ও জনসচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়াও দরকার।

বিপদ বাড়ার আগে সতর্ক হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। আর এই আগাম সতর্কতাই বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে প্রকৃত বিচক্ষণতার পরিচায়ক। কঠোর স্বাস্থবিধি পালনের মাধ্যমে সবারই মনে রাখা দরকার যে, করোনার অবসান হয়নি এবং সতর্কতা, সচেতনতা ও বিচক্ষণতা অবলম্বনের যথার্থ পরিস্থিতির অবলুপ্তি ঘটেনি।