গাঁদা ফুলের রঙে স্বপ্ন বুনছে কৃষকরা

  • এসএম শহীদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, সাতক্ষীরা, বার্তা২৪.কম 
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গাঁদা ফুলের রঙে স্বপ্ন বুনছে কৃষকরা। ছবি: বার্তা২৪.কম

গাঁদা ফুলের রঙে স্বপ্ন বুনছে কৃষকরা। ছবি: বার্তা২৪.কম

গাঁদা ফুলের বর্ণিল রঙে জীবন সাজিয়েছেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের মিঠাবাড়ী গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা ও আকরম আলী। দেশি জাতের গাঁদা ফুল চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন এ দুই কৃষক। ফুল চাষ করে স্বপ্ন বুনেন তারা। ফুল চাষেই দেখেন আশার আলো।

মূলত বর্তমান সময়ে ফুল ছাড়া কোনো অনুষ্ঠানই হয় না। তাই সাতক্ষীরায় ফুল চাষ দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখানের আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। আম, কুলের পর এবার ফুল খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার নব দিগন্ত। এমনটি দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো দেড় বিঘা জমিতে দেশি জাতের গাঁদা ফুল চাষ করেন সাতক্ষীরার আলীপুর গ্রামের কৃষক আকরম আলী ও পাঁচপাড়া গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা। আর প্রথমবারেই সাফল্যের মুখ দেখেছেন তারা।

তাদের এ সাফল্যের পেছনে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা ‘উন্নয়ন প্রচেষ্টা’। উন্নয়ন প্রচেষ্টার কৃষি কর্মকর্তা নয়ন হোসেন বলেন, ‘সাতক্ষীরার মাটিতে ফুল চাষ হবে কিনা তা নিয়ে প্রথমে আমাদের মধ্যে আশঙ্কা ছিল। কিন্তু এখানে ফুল চাষ করে সফলতা এসেছে। কৃষক আকরম আলী ও গোলাম মোস্তফার সফলতা দেখে আরও অনেক কৃষক ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। যেন গাঁদা ফুলের রঙে স্বপ্ন বুনছে তারা।’

বিজ্ঞাপন

কৃষক আকরম আলী জানান, দেড় বিঘা জমিতে গাঁদা ফুল চাষাবাদে ফুলের কাটিং, সেচ, চাষাবাদ এবং ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল মাত্র ৫৫-৬০ হাজার টাকা। এক মাসের মধ্যেই চারা গাছগুলো থেকে বেরিয়ে আসে ফুলের কুঁড়ি। এরপর ফুলে ফুলে ভরে যায় তার ক্ষেত। এখন পর্যন্ত ফুল বিক্রি করে আয় করেছেন প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা। গাঁদা ফুল ৫-৬ মাস স্থায়ী হয়। আগামী তিন-চার মাস তার বাগানে ফুল থাকবে এবং এ থেকে আরও ২-৩ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করেন তিনি।

কৃষক গোলাম মোস্তফা জানান, সাতক্ষীরার ফুল ব্যবসায়ীরা ক্ষেত থেকে ১৭০-২০০ টাকা হাজার দরে ফুল কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিন ২০-২৫ হাজার ফুল বিক্রি হয়।

গাঁদা ফুল চাষের এই সাফল্যের গল্প জানতে চাইলে কৃষক আকরম আলী বলেন, ‘আমি ২৫ বছর ধরে ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত। গাঁদা ফুল যেকোনো ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়। তবে এঁটেল, দো-আঁশ মাটি বেশি উপযুক্ত। ফুল চাষের জমিটা হতে হবে মাঝারি উঁচু, যাতে করে বন্যার পানি দাঁড়াতে না পারে। কিন্তু জমিতে সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমার নিজ গ্রামে ফুল চাষের উপযোগী জমি ছিল না। তাই আমার বেয়াই গোলাম মোস্তফার পরামর্শে তিনি এবং আমি নগরঘাটা মিঠাবাড়ী গ্রামের উত্তরপাড়া মাঠে ৫ বিঘা জমি লিজ নেই। পরে আমি আলাদা ভাবে দেড় বিঘা জমিতে ফুল চাষ করি। এখানে ফুল চাষ করে আমি সফল হয়েছি। আমার সংসার চালাতে এখন আর কষ্ট হয় না।’

আকরম আলী আরও বলেন, ‘যশোরের গদখালির মতো আমরাও ফুল চাষে একদিন সুনাম অর্জন করতে পারব।’ সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে সাহায্য পেলে আগামী বছর পাঁচ বিঘা জমিতে গাঁদা ফুলসহ রজনীগন্ধা, জারবেরা এবং গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে তাদের এই ফুল চাষ দেখে অন্যান্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। কয়েকজন বেকার যুবকের মাঝেও গাঁদা ফুল চাষের আগ্রহ দেখা গেছে। সাড়া পড়েছে জেলাব্যাপীও। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের ফুলের বাগান দেখতে যাচ্ছে ফুলপ্রেমী মানুষ।