উপকূলে সুপেয় পানির জন্য হা-হা-কা-র

  • এসএম শহীদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, সাতক্ষীরা, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

‘ডানে নদী, বাঁয়ে খাল, পেছনে সাগর, সামনে বিল। চারিদিকে পানি থৈ থৈ। কিন্তু খাবার পানি কই? দুই মাস ধরে পুকুরের পানি খাচ্ছি। কিন্তু পানি কমে যাওয়ায় এখন ঘোলা আর দুর্গন্ধযুক্ত পানি খেয়ে প্রাণে বেঁচে আছি।’

বার্তা২৪.কমের সঙ্গে একান্তে কথাগুলো বলছিলেন উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার খাগড়াঘাট গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আমিরণ বিবি।

বিজ্ঞাপন

তার সঙ্গে থাকা গৃহবধূ তাসলিমা বেগম জানালেন ৩ কিলোমিটার দূরে থেকে খাবার জন্য পানি নিতে এসেছেন ‍তিনি। ৭ সদস্যের পরিবারের জন্য সকাল-বিকেল ২ বার তাকে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পানি টেনে নিতে হয় খাওয়ার জন্য।

তবে এমন দৃশ্য কেবল ওই খাগড়াঘাট গ্রামে নয়। বরং শ্যামনগর উপজেলার হেঞ্চি, তালবাড়িয়া, কাঁঠালবাড়িয়াসহ গোটা উপকূলীয় জনপদজুড়ে। সর্বত্রই সুপেয় খাবার পানির জন্য রীতিমতো হা-হা-কা-র চলছে। পুকুরের পানি কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের প্রভাষক সুভাস মণ্ডল এবং মুজিবর রহমানসহ স্থানীয়রা জানান, খুটিকাটা, কাঁঠালবাড়িয়া, কাছিহারানিসহ পাঁচ গ্রামের মানুষের গ্রীষ্মকালের একমাত্র পানির উৎস কাঁঠালবাড়িয়া সরকারি দিঘি। কিন্তু সেটি খননের জন্য শুকিয়ে ফেলা হয়েছে। তাই এখন ৭-৮ কিলোমিটার দূরবর্তী বিভিন্ন পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে ২০-৩০ টাকায় প্রতি কলস পানি কিনতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পুকুরের কর্দমাক্ত, দুর্গন্ধময় আর লবণপানি খাচ্ছেন বলেও জানান তারা।

এদিকে খাবার পানি নিয়ে উপকূলবাসীর সমস্যা নিরসনে এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় পুকুর, দিঘি, জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যার অংশ হিসেবে উপকূলীয় এ জনপদে প্রথম পর্যায়ে ৫৭টি পুকুর পুনঃখননের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যেখানে নূন্যতম ১৯ লাখ থেকে সবোর্চ্চ ৬৮ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রতিটি পুকুরের জন্য।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঠিকাদার নিয়োগের পরও ভুরুলিয়ার কাটিবারহল গ্রামে ১৬১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুরটির খনন কাজ শুরতেই বন্ধ হয়ে গেছে। জেলা পরিষদ উক্ত পুকুর নিজেদের দাবি করে পুনঃখননের প্রস্তাবনা পাঠালেও স্থানীয়রা দাবি করেছে এটা তাদের পৈত্রিক পুকুর।

ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি শেখ মহিউদ্দীন জানান, জেলা পরিষদ শুরুতে এটি তাদের পুকুর বলে দাবি করলেও কাগজপত্র দেখে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে গেছে। ভুল তথ্যে জেলা পরিষদ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর তাদের ওই পুকুর সরকারি তালিকাভুক্ত করেছিল। এছাড়া প্রায় অভিন্ন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে কৈখালীর খোসালপুর সরকারি দিঘিকে কেন্দ্র করে। জেলা পরিষদ সম্প্রতি সেখানে কাজ শুরু করলেও জনৈক আশেক এলাহী উক্ত পুকুর নিজের দাবি করায় খনন কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।

একইভাবে নুরনগরসহ আরও কয়েকটি এলাকায় সরকারি দিঘি নির্ধারণ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে আপাতত পুকুর খননের কাজ বন্ধ রয়েছে।

উপজেলা সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ অঞ্চলের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ পুকুরের পানি পান করে থাকে। গ্রীষ্মকালে পুকুরের পানি কমে যাওয়ায় খাবার পানি সংকট প্রবল আকার ধারণ করে। তবে সরকারিভাবে বৃষ্টির সময়ে পানি সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও জানান, ১৬৩৮টি গভীর এবং ৩৫৮টি অগভীর নলকূপ ছাড়াও ৩৯৭টি ভিএসএসটি, ৪৮৩টি এসএসটি, ১০৯৮টি আরডব্লিউএইচ এবং ৫৬৬টি পিএসএফ’র মাধ্যমে স্থানীয়দের পানির চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চলছে। তারপরও স্থানীয়দের পানির চাহিদা মেটাতে জেলা পরিষদের পুকুর পুনঃখননের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে নুতন নুতন পুকুর খননও করা হবে।