ঈদের ছুটিতে রাঙামাটিতে বেড়েছে পর্যটকদের পদচারণা
বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বের সীমান্তবর্তী আয়তনে সবচেয়ে বড় জেলা রাঙামাটি। চারিদিকে সবুজের সমারোহ আর পাহাড় ঘেরা এ জেলায় রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই হ্রদ। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অনুপম আধাঁরের রাঙামাটি জেলা তার বৈচিত্রময়তার কারণে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পর্যটকদের মনে স্থান করে নিয়েছে। তাই কাপ্তাই হ্রদ ও পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঈদের ছুটিতে দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক এখন রাঙামাটিতে। অনেকেই তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছে এই পর্যটন শহরে।
প্রতিদিন গড়ে কয়েক হাজার পর্যটক বর্তমানে রাঙামাটিতে প্রবেশ করছেন বলে নিরাপত্তা চেকপোস্টগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে।
এদিকে, পর্যটকদের আগমন উপলক্ষে হোটলে-মোটেলগুলো সাজানো হয়েছে নব সাজে। তবে ভালো মানের হোটেলে সিট না পেয়ে অনেকে বিভিন্ন ধরনের হোটেলে রাত কাটাচ্ছেন।
ঈদের ছুটিতে পাহাড়ি এ জেলায় আগত পর্যটকদের কাছে পর্যটন কমপ্লেক্সের দিকেই আকর্ষণ বেশি। তবে দর্শনার্থীরা বেশি ভিড় জমাচ্ছেন দুই পাহাড়ের মাঝখানের ঝুলন্ত সেতুতে। এরপরই পর্যটকদের আগ্রহ বেশি মনোমুগ্ধকর ঝরনা, জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত পলওয়েল পার্ক, জেলা প্রশাসকের বাংলো, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধি সৌধ, বালুখালী কৃষি খামার, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, কর্ণফুলী পেপার মিল ও কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের দিকে।
ইতোমধ্যে কাপ্তাই লেকে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে বিভিন্ন পর্যটন স্পট তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে পেদা টিং টিং, গাং সাবারাং, মেজাং, সুভলং ঝরনা, সুবলং বাজার, মারমেট, চাং পাংসহ অন্যতম।
স্পিড বোট ও দেশীয় নৌ-যান নিয়ে কাপ্তাই হ্রদে ভ্রমণ করে সৌন্দর্য উপভোগ করছেন তারা। তবে অপার সম্ভাবনাময় রাঙামাটির বর্তমান পর্যটন স্পটগুলো নিয়ে কিছুটা আশাহত দর্শনার্থীরা।
আগত একাধিক পর্যটক জানালেন, রাঙামাটিতে আরও অনেক কিছু করার যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও বান্দরবান-খাগড়াছড়ির তুলনায় রাঙামাটির পর্যটন সেক্টর সেভাবে উন্নয়ন হয়নি।
এ বিষয়ে রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ম্যানেজার সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন, ঈদের ছুটিতে থেকে রাঙামাটিতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। করপোরেশনের সবগুলো রুম বুকিং থাকায় আগত পর্যটকদের অনেকেই অন্যত্র থাকতে হচ্ছে।
এদিকে রাঙামাটিতে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাঙামাটির জেলা পুলিশের পাশাপাশি টুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঝুলন্ত ব্রিজের ঘাটে একটি হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে জানিয়ে টুরিস্ট পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, পর্যটকদের কোনো প্রকার ঝামেলায় পড়লে বা সহযোগিতার প্রয়োজন হলে হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সহযোগিতা নিতে পারবেন।
সুবলং ঝরনায় যাওয়ার পথেই হ্রদের লাগোয়া দ্বীপে অবস্থিত জুম রেস্তোরার পরিচালক সুনয়ন ত্রিপুরা দীপু বার্তা২৪.কমকে জানান, ঈদের পরদিন থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছে। এতে করে তাদের আয়ও বেড়েছে কিছুটা। কিন্তু হ্রদের পানি কম থাকায় পর্যটকরা ভালোভাবে নৌ ভ্রমণ করতে পারছেন না।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের নৌযান ঘাট সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই লেকে ভ্রমণের জন্য দেড় হাজারের বেশি নৌ-যান রয়েছে। এর মধ্যে শুধু রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের নৌ-যান ঘাটে দুই শতাধিক নৌযান রয়েছে। এ ছাড়া শহরের রিজার্ভ বাজার, রাজবাড়ি ঘাট, শিল্পকলা ঘাট, সমতা ঘাট ও ফিশারি ঘাট থেকেও পর্যটকদের জন্য নৌযান ভাড়া দেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি কাপ্তাই লেকে পানি কমে যাওয়ায় নৌ-চলাচল বেশ সীমিত হয়ে যায়। এতে পর্যটকের সংখ্যাও কমে যাবে বলে পর্যটন ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। তবে ছুটিকালীন সময়ে ভালোভাবে বৃষ্টি হলে লেকের পানি বেড়ে গেলে পর্যটকদের ভ্রমণের সুবিধা বাড়তে পারে।
২০১৭ সালে রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসের পর পর্যটকের সংখ্যা কমে যায়। তবে গত বছরে ঈদ ও পূজার ছুটিতে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যায়। পর্যটকদের আকর্ষণ কাপ্তাই লেকে পানি সংকট সৃষ্টি হওয়ায় লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা চলাচল সীমিত হয়। এ কারণে টানা ছুটিতে রাঙামাটিতে পর্যটকের আগমন নিয়ে নানা আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ বিষয়ে পর্যটক কমপ্লেক্স নৌঘাটের নৌযান সমিতির সভাপতি মো. রমজান আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা খুবই চিন্তায় রয়েছি। নৌযান চলাচলে জন্য তেমন পানি নেই। পানি না থাকলে লেকের ভ্রমণেও তেমন আকর্ষণ থাকে না। তবে আশা করছি দু’য়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে লেকের পানি বেড়ে যাবে। তখন পর্যটনের জন্যও সুবিধা হবে।’
রাঙামাটি হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. মঈন উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে সেলিম বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের ঈদের টানা ছুটিতে হোটেল-মোটেলগুলোতে আগাম বুকিং বেশি হয়নি। এখন পর্যন্ত মাত্র ৫০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। আমরা আশা করছি দু’য়েক দিন থেকে কমপক্ষে ৭০-৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হবে। যেহেতু ঈদের ছুটির পর সরকারি ছুটি রয়েছে, তাই পর্যটক আরও আসবে।’