কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, শুকনো খাবার-বিশুদ্ধ পানির সংকট
ঘরে শুকনো খাবার নেই। নেই রান্নার খড়িও। নলকূপ তলিয়ে থাকায় মিলছে না বিশুদ্ধ খাবার পানি। টয়লেট ব্যবস্থা না থাকায় বাড়ছে বিড়ম্বনা। এ চিত্র এখন কুড়িগ্রামের কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের ৫৬টি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক পরিবারের।
এসব পরিবারের প্রায় সোয়া ছয় লাখ মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টে দিন পার করছেন। এদের বেশির ভাগই পানির ওপরে নৌকায় ও ঘরের ভেতর মাচান উঁচু করে অতি কষ্টে দিন-রাত যাপন করছেন। খাবারের তীব্র সংকটে পড়েছে এ পরিবারগুলো।
আর যারা ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু বাঁধ ও পাকা সড়কসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন, তারাও পড়েছেন নানা দুর্ভোগে। কোথাও কোথাও বন্যা দুর্গতদের আশ্রিত স্থানেও হানা দিয়েছে বন্যার পানি। অনেক পরিবার নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে দোকান থেকে কেনা শুকনো খাবারের উপর। কিন্তু নগদ টাকার অভাবে অনেক পরিবারের ভাগ্যে জুটছে না সেই খাবার টুকুও।
বাঁধ ও পাকা সড়কের দুই ধারে খুপড়ি ঘর ও পলিথিনের তাবু টানিয়ে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও গবাদি পশু নিয়ে বসবাস করলেও অনেক পরিবার পলিথিন বা ত্রিপলের অভাবে রয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় বেশি বিড়ম্বনায় পড়েছেন নারীরা।
এদিকে সরকারি হিসাবেই জেলায় প্রায় সোয়া ছয় লাখ মানুষ বন্যাদুর্গত হয়ে শুকনো খাবারের সংকট নিয়ে বসবাস করলেও জেলা প্রশাসন থেকে তাদের জন্য দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
রৌমারী উপজেলার চর বন্দবের ইউনিয়নের সাধু শেখের স্ত্রী ফিরোজা বেগম বলেন, ‘বন্যায় খুব দুর্ভোগে আছি। রান্না করার উপায় নাই। ঘরে শুকনো খাবারও নাই। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাঁচার উপায় থাকবে না।’
বন্দবের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির হোসেন জানান, ‘ইউনিয়নের ৪৭ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত, এদের বেশির ভাগ ইউনিয়ন পরিষদসহ উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। এসব বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য সরকারিভাবে এ পর্যন্ত ১১০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি।’
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপঙ্কর রায় জানান, ‘উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দিদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছি।’
জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ১০০ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ১১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে বন্যার পানির চাপে জেলার রৌমারী, রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী, চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধ ছিড়ে ও সড়ক-মহাসড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে তা ঢুকে পড়ছে উঁচু এলাকার গ্রাম ও হাটবাজারগুলোতে।
কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান বলেন, ‘৯ লাখ টাকা জিআর ক্যাশ দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বন্যা কবলিতদের মধ্যে শুকনো খাবার কিনে দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে চার লাখ ৮৮ হাজার পরিবারকে দেওয়ার জন্য ভিজিএফ বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা দ্রুত বিতরণ করা হবে।’