বন্যা: মশালের চরে তিন শতাধিক পরিবারের নৌকায় বসবাস

  • মো. জুয়েল রানা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কুড়িগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বন্যায় নৌকায় আশ্রয়, , ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বন্যায় নৌকায় আশ্রয়, , ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

দুই শিশু সন্তানসহ পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে নৌকায় সংসার পেতেছেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চরের মরিয়ম বেগম (৪০)। ১২ দিন আগে বন্যার পানি বিছানা পর্যন্ত ওঠায় পরিবারের সদস্যরা মিলে নিজেদের মাছ ধরার ছোট ডিঙ্গি নৌকায় উঠেছেন। সেই থেকে নৌকাতেই কাটছে দিন-রাত। রান্না, খাওয়া এমনকি টয়লেটের কাজও সারতে হচ্ছে নৌকাতেই।

শুধু মরিয়মের পরিবারই নয়, তার মতো প্রায় তিন শতাধিক পরিবার ১২ দিন ধরে নৌকায় বাস করছেন।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিন দেখা গেছে, নিকটবর্তী সব উঁচু বাঁধ ও উঁচু জায়গা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে ডুবে যাওয়া ঘর-বাড়ির পাশেই নৌকাতে বসবাস করছে এসব পরিবার। আর বন্যা দীর্ঘমেয়াদী হওয়ায় নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। ঘরে সঞ্চিত শুকনা খড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রান্নাও হচ্ছে না ঠিক মতো। ফলে কোনও রকম একবার রান্না করে দিন পার করতে হচ্ছে সবাইকে।

জমিয়ে রাখা শুকনা খাবারও শেষ হয়ে গেছে। তবে কিছু পরিবার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের মাধ্যমে সরকারি ত্রাণের আট-১০ কেজি চাল পেয়েছেন, যা অনেক পরিবারের ভাগ্যে জোটেনি। অন্যদিকে নৌকায় বসবাস করায় বন্ধ রয়েছে মাছ ধরা। ফলে বন্ধ আছে আয় রোজগারও। আর বিকল্প নৌকা না থাকায় বাজার থেকে শুকনো খড়ি বা শুকনা খাবার কিনতে যাওয়ার কোনও উপায় নেই।

বিজ্ঞাপন

আরও জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে নৌকায় বসবাস করতে হওয়ায় শিশুরা ডায়রিয়া, জ্বরসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দ্রুত বন্যার পানি নেমে না গেলে খাওয়ার সমস্যাসহ রোগব্যাধিতে দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

https
বন্যায় নৌকায় আশ্রয়, , ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

মশালের চরের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবু বকর সিদ্দিক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘নিকটবর্তী কোনও শুকনা জায়গা না থাকায় এই চরের লোকজন নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ডিঙ্গি নৌকায় সব সময় সাবধান না থাকলে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। নৌকায় বসবাসকারী বেশির ভাগ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। যারা পাননি তারা পরবর্তী ত্রাণ সহায়তা এলে পাবেন।’

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘এ ইউনিয়নে কমপক্ষে ছয়শ’ পরিবার ছোট নৌকায় উঠেছে। এর মধ্যে মশালের চরেরই রয়েছে তিন শতাধিক পরিবার। নৌকায় বসবাসকারী বেশির ভাগ পরিবার তাদের মাছ ধরার নৌকায় সংসার পেতেছেন। রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া, ঘুম সব নৌকাতেই। আর যাদের নৌকা নেই, তারা দূরবর্তী উঁচু জায়গা বা আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। পর্যাপ্ত সহায়তা না আসায় প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হয়নি।’