শিক্ষকের পিটুনিতে ছাত্র হাসপাতালে
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে আলেকজান্ডার সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বদরুল আলমের পিটুনিতে গুরুতর আহত হয়েছে ছাত্র রাকিবুল হাসান। চারদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে সে।
এ ঘটনায় অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৮ আগস্ট) তদন্ত শুরু হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
আহত ছাত্র হাসানের মা রাবেয়া বেগম ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি শিক্ষকের বিচার দাবি করেন।
এদিকে এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে রামগতি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুচিত্র রঞ্জন দাস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার দুপুরে হাসানের মা রোকেয়া বেগম জানান, ছেলের অবস্থা দিন দিন আরও অবনতি হচ্ছে। জ্ঞান ফিরলেও সে বারবার অচেতন হয়ে যাচ্ছে। তার আগের তিনটি সন্তান মারা গেছে। হাসান তার আদরের সন্তান। তাকে বাঁচানোর জন্য চিকিৎসকদের কাছে আকুতি জানাচ্ছেন তিনি।
জানা গেছে, হাসান আলেকজান্ডার সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। সে উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মরত মিজানুর রহমানের ছেলে।
হাসানের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৮টায় হাসান স্কুলে কোচিংয়ে গিয়ে দুই সহপাঠীসহ সামনের বেঞ্চে বসেছিল। অন্য এক সহপাঠী তাদের সঙ্গে বসার আগ্রহ দেখায়। পরে ওই সহপাঠীর বইগুলো নিজের বেঞ্চে আনে হাসান। এ সময় শিক্ষক বদরুল আলম শ্রেণিকক্ষে ঢুকে হাসানকে কথা বলতে দেখে। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে হাসানকে কানে ও মাথায় দুটি থাপ্পড় দেয়। তাৎক্ষণিক হাসানের মাথার ভেতর গরম হয়ে উঠে। বিষয়টি সে শিক্ষককেও জানায়। কিন্তু শিক্ষক তা না শুনে তাকে বেঞ্চের নিচে মাথা দিয়ে রাখতে বলে। এতে এক পর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়ে সে।
পরে তাকে উদ্ধার করে রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে নোয়াখালী হাসপাতালে পাঠানো হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হাসানের ব্রেনে রক্ত জমাট বেঁধেছে। বর্তমানে তাকে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। জ্ঞান আসলেও বারবার সে অচেতন হয়ে পড়ছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক বদরুল আলম জানান, ছাত্রের সঙ্গে এমন আচরণ করা তার ভুল হয়েছে।
রামগতি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। মেডিকেল রিপোর্ট পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রফিকুল হক জানান, ঘটনাটি তদন্তের জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।