পোশাক খাতের কোভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধারে বড় চ্যালেঞ্জ

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ -সিপিডি আয়োজিত ভার্চুয়াল সংলাপ

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ -সিপিডি আয়োজিত ভার্চুয়াল সংলাপ

বাংলাদেশের রফতানিমুখী পোশাক খাতটি কোভিড-১৯-এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যাচ্ছে। যদিও সরকার ঘোষিত প্রণোদনার কারণে এই চ্যালেঞ্জগুলো উত্তরণে কারখানাগুলো কাজ করে যাচ্ছে। এই খাতের পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াটির ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে ছোট, পোশাক সংগঠনের সদস্য নয় এমন এবং নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের কারখানাগুলোতে অধিক পরিমাণ সমস্যা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঋণ প্রাপ্তির জটিলতার কারণে বেশীরভাগ ছোট কারখানাগুলো ঋণের জন্য আবেদন করেনি। ৯০ শতাংশ বড় কারখানার বিপরীতে মাত্র ৪০ শতাংশ ছোট কারখানা এই আবেদন করেন।

শনিবার ( ২৩ জানুয়ারি) “কোভিড-১৯ বিবেচনায় পোশাক খাতে দুর্বলতা, সহনশীলতা এবং পুনরুদ্ধার: জরিপের ফলাফল”, শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্টের (সিইডি) ম্যাপড ইন বাংলাদেশ (এমআইবি) যৌথ গবেষণা প্রতিবেদন করে।

বিজ্ঞাপন

সংলাপে সূচনা বক্তব্য প্রদান করে সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক, ড. ফাহমিদা খাতুন।  তিনি সিপিডি ও  এমআইবি-এর এই গবেষণার কথা উল্লেখ করে বলেন যে মোট ৬১০টি পোশাক কারখানায় এই জরিপটি পরিচালনা করা হয় যার ফলে কোভিড-১৯ বিবেচনায় পোশাক খাতে দুর্বলতা, সহনশীলতা এবং পুনরুদ্ধারকে বিশ্লেষণ করা সহজতর হবে। এই গবেষণার মাধ্যমে পোশাক খাতকে পুনরুদ্ধারে মধ্যমেয়াদী পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।

সংলাপের সঞ্চালনা করেন এমআইবি-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ হাসিবুদ্দিন হাসিব। তার প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি এই গবেষণার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং তথ্য প্রাপ্তির গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন।

বিজ্ঞাপন

সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক, ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনার আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে। সদস্য নয় এমন কারখানাগুলোকে অনতিবিলম্বে এ্যাসোসিয়েশনের সদ্যস্যভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন দেয়ার প্রক্রিয়াটিকে কমপ্লায়েন্সের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর দায়িত্ব নিয়ে সামনে এসে শ্রমিকদের তালিকা সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে বলে মনে করেন তিনি। কারাখানার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার দিকে আরও জোর দেওয়ার কথাও উঠে আসে এই উপস্থাপনায়।

তিনি বলেন যে পোশাক খাতের ভবিষ্যতের বিকাশের জন্য ভ্যালু চেইনের বিভিন্ন বিভাগে আরও বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) বিবেচনা করা উচিত।

পোষাকশিল্পে নারী শ্রমিকদের অবদানের কথা তুলে ধরে সংলাপের বিশেষ অতিথি সংসদ সদস্য শিরীণ আখতার বলেন, কোভিডের সময়কালে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করলেও পোশাকশিল্প আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এই সময়ে আমরা অনুধাবন করেছি, আপদকালীন সময়ের জন্য আমাদের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। সরকার ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা সবার কাছে সঠিকভাবে পৌছাচ্ছে কী না তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে সংলাপের সম্মানিত অতিথি, বিকেএমইএ-এর সহ-সভাপতি জনাব মোহাম্মদ হাতেম বলেন যে বেশীরভাগ শ্রমিকের পর্যাপ্ত পরিমাণ কাগজ না থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বেতন দেবার ক্ষেত্রে বিজিএমইএ-র পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন সিপিডির প্রস্তাবনার সাথে সহমত প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন যে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করতে হবে।

সংলাপের সভাপতি, অধ্যাপক রেহমান সোবহান, চেয়ারম্যান, সিপিডি বলেন কোভিড পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি শ্রমিকদের জন্য একটি সামাজিক সুরক্ষা বীমারও প্রস্তাব করেন, যেখানে মালিক, শ্রমিক, সরকার, ক্রেতা এবং উন্নয়ন অংশীদাররা অংশ নেবে।

সিইডি-এর উপদেষ্টা অধ্যাপক রহিম বি তালুকদার সংলাপে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন। সংলাপে সাংবাদিক, গবেষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশাজীবীসহ অনেকে অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মতামত তুলে ধরেন।